ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

বিশ্বব্যাংকের ঋণে অনিশ্চয়তা কাটছে

প্রকাশিত: ০৬:০০, ১৭ এপ্রিল ২০১৬

বিশ্বব্যাংকের ঋণে অনিশ্চয়তা কাটছে

হামিদ-উজ-জামান মামুন ॥ বিশ্বব্যাংকের প্রতিশ্রুত প্রায় চার হাজার ৮০০ কোটি টাকার বৈদেশিক সহায়তা নিয়ে সৃষ্ট শঙ্কা কেটে যাচ্ছে। এ সংক্রান্ত প্রকল্পটি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠকে উপস্থাপনের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সম্মতির জন্য পাঠানো হচ্ছে। তারপরই অনুমোদন পেলে বিশ্বব্যাংকের বোর্ডে ঋণ প্রস্তাব পাঠাবে সংস্থাটির বাংলাদেশ অফিস। চলতি অর্থবছরে একক প্রকল্পে সর্বোচ্চ অর্থায়ন এটি। সময়মতো জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠকে ‘রিভার ম্যানেজমেন্ট ইম্প্রুভমেন্ট’ প্রকল্পটি অনুমোদন না হওয়ায় বোর্ড অনুমোদনসহ চুক্তির পরবর্তী প্রক্রিয়া বন্ধ রয়েছে। এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত জানতে সম্প্রতি অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগকে (ইআরডি) চিঠি দিয়েছিল বিশ্বব্যাংক। চিঠির উত্তর দিতেই সর্বোচ্চ পর্যায়ের সম্মতি নেয়া হচ্ছে বলে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) সূত্রে জানা গেছে। এ বিষয়ে বিশ্বব্যাংকের দায়িত্বপ্রাপ্ত অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের অতিরিক্ত সচিব কাজী শফিকুল আজম জনকণ্ঠকে বলেন, বিশ্বব্যাংক ঢাকা অফিস থেকে তাদের বোর্ডে অনুমোদনের জন্য এখনও ঋণ প্রস্তাব পাঠানো হয়নি। বর্তমানে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সিদ্ধান্তের অপেক্ষা করা হচ্ছে। ইআরডি সূত্র জানায়, ২০১৫ সালের ২৯ নবেম্বর একনেকে অনুমোদনের জন্য ‘রিভার ম্যানেজমেন্ট ইম্প্রুভমেন্ট’ প্রকল্পটি উপস্থাপন করা হলে সেটি অনুমোদন না দিয়ে কিছু বিষয় সংশোধনীর জন্য ফেরত পাঠানো হয় সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে। পরবর্তীতে মন্ত্রণালয় থেকে সংশোধিত উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব ডিপিপি পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হয়। চলতি বছরের ১ ফেব্রুয়ারি পরিকল্পনা কমিশনে নতুনভাবে প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা করা হয়। কিন্তু পিইসি সভার কার্যবিবরণী এখন পর্যন্ত জারি করেনি পরিকল্পনা কমিশন। ফলে গত ৩ মার্চ প্রকল্পের বিপরতীতে প্রুতিশ্রুত ঋণ প্রস্তাব বিশ্বব্যাংকের বোর্ডে অনুমোদনের কথা থাকলেও তা আর হয়নি। কেননা এর আগে তাগাদা দিয়ে ইআরডিকে চিঠি পাঠিয়েছিল সংস্থাটি। কিন্তু ইআরডি প্রকল্পটির বিষয়ে কোন সিদ্ধান্ত জানাতে পারেনি। এ অবস্থায় গত ১৮ ফেব্রুয়ারি প্রকল্পটির বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এতে সভাপতিত্ব করেছিলেন মুখ্য সচিব আবুল কালাম আজাদ। পরবর্তীতে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়, প্রধানমন্ত্রীর সম্মতি নিয়ে প্রকল্পটি একনেকে উপস্থাপন করা হবে। এ বিষয়ে প্রকল্পটির দায়িত্বপ্রাপ্ত পরিকল্পনা কমিশনের কৃষি, পানিসম্পদ ও পল্লী প্রতিষ্ঠান বিভাগের সদস্য শামসুদ্দিন আজাদ চৌধুরী জনকণ্ঠকে বলেন, এ প্রকল্পটির বিষয়ে বিভিন্ন সংশোধনী ছিল। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কবে নাগাদ অনুমোদন দেয়া যাবে সেটি এখনও বলা সম্ভব নয়। অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) সূত্রে জানা গেছে, বিশ্বব্যাংকে আইডিএ ঋণের বিপরীতে বার্ষিক শূন্য দশমিক ৭৫ শতাংশ হারে সার্ভিস চার্জ প্রদান করতে হবে। এ ঋণের অর্থ ছয় বছরের গ্রেস পিরিয়ডসহ ৩৮ বছরে পরিশোধের সুযোগ থাকে। বর্তমানে বিশ্বব্যাংকের ঋণের ওপর কোনো কমিটমেন্ট চার্জ নেই। সূত্র জানায়, যমুনা ও ব্রহ্মপুত্রেরর ভাঙ্গন কমাতে নতুন প্রকল্প গ্রহণের উদ্যোগ নেয়া হয়। বিশ্বব্যাংকের চার হাজার ৮০০ কোটি টাকার সহায়তায় এ উদ্যোগ বাস্তবায়ন করবে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)। এর মাধ্যমে দেশের উত্তর-পশ্চিামাঞ্চলের প্রায় অর্ধলক্ষাধিক মানুষকে প্রতিবছর বন্যার ভয়াবহতা ও নদী ভাঙ্গন থেকে রক্ষা করা সম্ভব হবে। এ প্রকল্পের জন্য মোট ব্যয় ধরা হয়েছে পাঁচ হাজার ২০০ কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকারের নিজস্ব তহবিলের অর্থায়ন থেকে ব্যয় হবে ৪০০ কোটি টাকা। বাকি টাকা বিশ্বব্যাংক (আইডিএ) সহজ শর্তের ঋণ হিসাবে প্রদান করবে। প্রকল্পের আওতায় তিন ধাপে বরাদ্দের অর্থ ব্যয় করবে পাউবো। সিরাজগঞ্জের সদর, কাজিপুর এবং বগুড়ার সারিয়াকান্দি ও ধুনটকে প্রকল্পের এলাকা হিসেবে নির্বাচন করা হয়েছে। পাউবো সূত্র জানায়, অনুমোদন পেলে প্রকল্পের কাজ তিনটি ধাপে বাস্তবায়ন করা হবে। প্রধম ধাপে ব্রহ্মপুত্র নদের ডান তীরে ও যমুনা সেতু হতে ১৭ কিলোমিটার দূরে ৫০ কিলোমিটারব্যাপী নদী রক্ষা বাঁধের উন্নয়ন (সিরাজগঞ্জের সিমলা হতে বগুড়ার হাসনাপাড়া পর্যন্ত) করা হবে। উন্নয়ন কার্যক্রমের মধ্যে রয়েছে যমুনা নদীর ডান তীরে ৫০ কিলোমিটার সার্ভিস রোড পুনর্নির্মাণ করা, যা বিআরই নামে পরিচিত। যমুনা নদীর ডান তীরে নদী শাসনের লক্ষ্যে সার্ভিস রোডসহ ৩৬ দশমিক ৫৬ কিলোমিটার প্রতিরক্ষা বাঁধ নির্মাণ এবং ক্ষতিগ্রস্ত জনগণকে পুনর্বাসনের লক্ষ্যে ১৫টি রি-সেটেলমেন্ট ভিলেজ (গুচ্ছগ্রাম) প্রতিষ্ঠা করা হবে। দ্বিতীয় ধাপে যমুনা ব্রিজ হতে সিরাজগঞ্জের সিমলা পর্যন্ত ১৭ কিলোমিটার ও বগুড়ার হাসনাপাড়া থেকে তিস্তা আউটফল পর্যন্ত ৭০ কিলোমিটার বাঁধ পুনর্নির্মাণ করা হবে। তৃতীয় ধাপে বাঁধের ভেতরের অংশ বরাবর ১৩৭ কিলোমিটার চার লেনবিশিষ্ট রাস্তা নির্মাণ করা হবে।
×