ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

দুই-তৃতীয়াংশ হাত দেয়নি স্থাপনা নির্মাণে

গ্যাস, পানি ও ড্রেনেজ ব্যবস্থা চামড়া শিল্প স্থানান্তরে অন্তরায়

প্রকাশিত: ০৪:১৫, ১০ এপ্রিল ২০১৬

গ্যাস, পানি ও ড্রেনেজ ব্যবস্থা চামড়া শিল্প স্থানান্তরে অন্তরায়

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ সাভারে চামড়া শিল্পনগরীর দুই-তৃতীয়াংশ কাজ এখনও সম্পন্ন হয়নি। সরকারী বাধ্যবাধকতা পূরণ করতে হাজারীবাগ থেকে সাভার চামড়া শিল্পনগরীতে স্থানান্তর প্রক্রিয়ায় যে কয়টি কারখানা অগ্রগামী, তাদের জন্য গ্যাস, পানি ও ড্রেনেজ ব্যবস্থা মূল অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছে। ১৫৫ শিল্প ইউনিটের প্রথম তলার ছাদ আংশিক ঢালাই সম্পন্ন হয়েছে। দ্বিতীয় তলার ঢালাই চলছে ১৩টিতে। আর বেস শেষে ২৬ কারখানায় হচ্ছে গ্রেটবিম কলাম ঢালাই। সে হিসেবে এখনও এক-তৃতীয়াংশ কাজ বাকি রয়ে গেছে। ভবন তৈরির পর প্রক্রিয়াজাতকরণ মেশিন ও কাঁচা চামড়া সাভারে নিয়ে যাওয়ার পরেও গ্যাস, পানি ও ড্রেনেজ ব্যবস্থা প্রস্তুত না হওয়ায় উৎপাদনে যেতে পারছে না ওই কারখানাগুলো। ফলে পচন ধরেছে সেখানে নিয়ে কাঁচা চামড়ায়। তবে বিশেষায়িত এই শিল্পনগরীতে এখন পর্যন্ত স্থাপনা তৈরির কাজেই হাত দেয়নি দুই-তৃতীয়াংশ কারখানা। সাভারের চামড়া শিল্পনগরী সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, এ ছাড়া বরাদ্দকৃত প্লটে দুই-তৃতীয়াংশ কারখানা এখন পর্যন্ত স্থাপনা নির্মাণের কাজ শুরুই হয়নি। ভবন নির্মাণসহ উৎপাদন কাজে এগিয়ে রয়েছে রিলায়েন্স ট্যানারি লিমিটেড, আজমেরি লেদার, এ্যাপেক্স টানারি লিমিটেড, ঢাকা ট্যানারি লিমিটেড, আল-মদিনা লেদার কমপ্লেক্সসহ ১৫টির মতো কারখানা। নিষেধাজ্ঞা জারির পর নির্মাণ কাজ শুরু করেছে প্রায় ২০ টির মতো কারখানা। বাকিগুলো এখনও দৃশ্যমান নির্মাণ কাজ শুরু করেনি। তবে হাজারীবাগ থেকে সাভারে স্থানান্তরের জন্য বিসিকের নিকট আবেদন জমা দিয়েছে অধিকাংশ কারখানা। গ্যাস, পানি ও বিদ্যুত সংযোগের জন্যেও আবেদন জানিয়েছে ওই কারখানাগুলো। ১ এপ্রিল থেকে ঢাকার হাজারীবাগে কাঁচা চামড়া প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয় সরকারের পক্ষ থেকে। হাজারীবাগে চামড়া নিতে না পেরে ওই দিনই প্রথম সাভারের কারখানায় দুই হাজার পিস কাঁচা চামড়া নিয়ে আসে রিলায়েন্স ট্যানারি লিমিটেড। তবে এখন পর্যন্ত সেই চামড়া দিয়ে উৎপাদন কাজ শুরু করতে পারেনি কারখানাটি। কারখানাটি ঘুরে দেখা গেছে, চামড়া থেকে চুল আলাদা করার জন্য কারখানাটির নিচতলায় ৮টি ড্রাম (ঢোল) স্থাপন করা হয়েছে। লবণ লাগানো অবস্থায় চামড়াও প্রস্তুত রয়েছে দুই হাজার পিস। রিলায়েন্স ট্যানারি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শাহজাহান মিয়া বলেন, ‘বিদ্যুতচালিত ওই ড্রামগুলোতে কাঁচা চামড়া ঢুকিয়ে ৪৮ ঘণ্টা ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে প্রক্রিয়াকরণ চলে। তারপর চামড়া থেকে চুল আলাদা হয়। এই কাজের জন্য প্রতিটি ড্রামে কেমিক্যালের পাশাপাশি প্রচুর গরম পানি দরকার। কিন্তু বিসিককে বারবার তাগাদা দেয়ার পরেও আজ পর্যন্ত আমরা পানির লাইন পাইনি। গ্যাস না থাকলে পানি গরম করা যায় না। গ্যাসেরও আবেদন প্রক্রিয়া শেষ হয়েছে অনেক আগেই। ৪৮ ঘণ্টা পর ড্রাম থেকে চামড়া বের করার পর সিইটিপিতে যে ড্রেনেজের মাধ্যমে ময়লা পানি যাবে সেই ড্রেনেজটিতে এখন পর্যন্ত সংযোগ দিতে পারেনি কর্তৃপক্ষ। কেন্দ্রীয় বর্জ্যশোধনাগার প্রস্তুত মর্মে বিসিকের বক্তব্য শোনা গেলেও সরেজমিন সেখানে গিয়ে দেখা গেছে ভিন্ন চিত্র। কারখানা থেকে সিইটিপিতে যে ড্রেনেজের মাধ্যমে বর্জ্য পৌঁছানোর কথা সেটির কাজ এখনও পুরোপুরি শেষ করতে পারেনি নির্মাণ প্রতিষ্ঠান। এ কারণে উৎপাদনে যাওয়ার অপেক্ষায় থাকা কারখানাগুলোতে সংযোগ দিতে পারছে না তারা। আজমির লেদারের স্বত্বাধিকারী শহীদ উল্লাহ জানান, কেন্দ্রীয়ভাবে যে বর্জ্য শোধনাগারটি নির্মাণ করা হচ্ছে তার তিনটি শাখা রয়েছে। কারখানা থেকে বেরিয়ে প্রথমে বর্জ্যগুলো ওই শাখাগুলোতে জমা হবে। সেখান থেকে প্রেসারের মাধ্যমে বর্জ্য যাবে কেন্দ্রীয় শোধনাগারে। কিন্তু এই তিনটি শাখার মধ্যে একটি শাখার এখনও নির্মাণ কাজও শুরু করেনি কর্তৃপক্ষ। আমার কারখানায় মেশিন স্থাপন শেষ। কিন্তু সিইটিপির এ শাখাটি প্রস্তুত না থাকায় উৎপাদন শুরু করতে পারছি না। আল-মদিনা লেদার কমপ্লেক্সের প্রকল্প ম্যানেজার হাবিবুর রহমান বলেন, ‘কাঁচা চামড়া থেকে লেছ ও পায়ের অংশ কেটে ফেলে দিতে হয়। চামড়ার এ অংশটি আমরা এই মুহূর্তে কোথায় ফেলব?’
×