ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ০১ মে ২০২৪, ১৮ বৈশাখ ১৪৩১

পশ্চিমবঙ্গে বিনিয়োগ খরা

প্রকাশিত: ০৬:১১, ১৩ মার্চ ২০১৬

পশ্চিমবঙ্গে বিনিয়োগ খরা

শংকর লাল দাশ বছরের পর বছর বিনিয়োগ খরায় ভুগছে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য। বিশেষ করে মমতার জমানার মতো এতটা বিনিয়োগ খরা এর আগে কখনই ছিল না। অথচ পশ্চিমবঙ্গের তুলনায় কয়েকটি রাজ্য দেশী-বিদেশী বিনিয়োগে যথেষ্ট এগিয়ে গেছে। এর মধ্যে কোন কোন রাজ্য পশ্চিমবঙ্গের তুলনায় বছরে শতগুণ বেশি বিনিয়োগ বাড়াতে সক্ষম হয়েছে। বিনিয়োগ বাড়াতে স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী প্রতিবছর শিল্প সম্মেলন থেকে শুরু করে দেশ-বিদেশ সফর পর্যন্ত নানামুখী উদ্যোগ নিয়েছেন। বিনিয়োগকারীরা আশ্বাসও দিয়েছেন। কিন্তু এর পরেও হয়নি কাক্সিক্ষত বিনিয়োগ। বিনিয়োগকারীরা কেন পশ্চিমবঙ্গ থেকে মুখ ঘুরিয়ে নিচ্ছেন, এ নিয়ে রয়েছে নানান মত। অবশ্য রাজ্য সরকার বিনিয়োগের এ বেহাল অবস্থা মানতে নারাজ। তাদের দাবি বিনিয়োগ এসেছে আশাতীত। যা বাস্তবায়নের পর্যায়ে রয়েছে। কিন্তু বিনিয়োগে প্রকৃত চিত্র বলছে অন্য কথা। কেন্দ্রীয় সরকারের ডিপার্টমেন্ট অব ইন্ডাস্ট্রিয়াল পলিসি এ্যান্ড প্রোমোশন এবং রাজ্যের শিল্প দফতরের প্রকাশিত তথ্যে দেখা গেছে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বাধীন সর্বভারতীয় তৃণমূল কংগ্রেস ২০১১ সালে বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে পশ্চিমবঙ্গে সরকার গঠন করে। ২০১১ থেকে ২০১৫-এর ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত এই পাঁচ বছরে পশ্চিমবঙ্গে দেশী-বিদেশী বিনিয়োগ এসেছে মাত্র ৬ হাজার ৮৭১ কোটি রুপী। অর্থাৎ বছরে গড়ে বিনিয়োগ হয়েছে মাত্র ১ হাজার ৩৭৪ কোটি রুপী। একই সময়ে অর্থাৎ গত পাঁচ বছরে অপেক্ষাকৃত উন্নত রাজ্য গুজরাটে বিনিয়োগ হয়েছে ১ লাখ ১২ হাজার ৮৮০ কোটি রুপী। সেখানে গড়ে প্রতিবছর বিনিয়োগ হয়েছে ২২ হাজার ৫৭৬ কোটি রুপী। মহারাষ্ট্রে পাঁচ বছরে বিনিয়োগ হয়েছে ৬৪ হাজার ৭৫০ কোটি রুপী। সেখানে প্রতিবছর গড়ে বিনিয়োগ হয়েছে ১২ হাজার ৯৫০ কোটি রুপী। অন্ধ্র প্রদেশ রাজ্যে প্রতিবছর গড়ে ৫ হাজার ৩৫০ কোটি হিসেবে পাঁচ বছরে বিনিয়োগ হয়েছে ২৬ হাজার ৭৫৪ কোটি রুপী। মধ্যপ্রদেশেও পশ্চিমবঙ্গের তুলনায় বিনিয়োগে ব্যাপক অর্জন হয়েছে। সেখানে প্রতিবছর গড়ে ৩ হাজার ৭৪১ কোটি হিসেবে পাঁচ বছরে বিনিয়োগ হয়েছে ১৮ হাজার ৭০৫ কোটি রুপী। অবশ্য পশ্চিমবঙ্গে বিনিয়োগ খাতের এই খরা আজকের নয়, বামফ্রন্টের সময় থেকেই বিনিয়োগ আকাল চলছে। সাবেক মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসুর আমলে বছরে কয়েক শ’ কোটি রুপীর বেশি বিনিয়োগ কখনই আসেনি। এক বছর বিনিয়োগের অঙ্ক মাত্র ৮৪ কোটি রুপীতে নেমে এসেছিল। বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের আমলে বিনিয়োগ পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি ঘটে। তার শেষ বছরে পশ্চিমবঙ্গে ১৫ হাজার কোটি রুপীর বেশি বিনিয়োগ হয়েছিল, যা বর্তমান মমতার পাঁচ বছরে বিনিয়োগের প্রায় দ্বিগুণ। বামফ্রন্টের বিদায়ের পর বিনিয়োগ পরিস্থিতির চিত্র করুণ আকার নেয়। বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের বিদায়ের পরে মমতার ক্ষমতা গ্রহণের বছরে বিনিয়োগ নেমে আসে ৩২০ কোটি রুপীতে। পশ্চিমবঙ্গে বিনিয়োগ খরার এ চিত্র অবশ্য রাজ্যের অর্থ দফতর মানতে নারাজ। অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র সংবাদমাধ্যমকে সাক্ষাতকারে জানিয়েছেন, রাজ্যে বর্তমানে ৮০ হাজার ৩০৬ কোটি রুপীর ২৮০টি প্রকল্প বাস্তবায়নের পর্যায়ে রয়েছে। আর বাস্তবায়িত হয়েছে ১৮১টি প্রকল্পে ৬৮৭১ কোটি রুপী। এছাড়া, শিল্প সম্মেলনে ২ লাখ ৪৩ হাজার কোটি রুপীর লগ্নি প্রস্তাব এসেছে। শিল্পমহল অর্থমন্ত্রীর এ দাবিতে গুরুত্ব দেয়নি। গত ৪০ বছর ধরে যে রাজ্যে বিনিয়োগ আকাল চলছে, সেখানে মাত্র পাঁচ বছরে লাখ কোটি রুপীর বিনিয়োগ প্রস্তাবকে শিল্পমহল যে গুরুত্ব দেবে না, তা বলাই বাহুল্য। এমন লগ্নির প্রস্তাব প্রতিবছরই শিল্প সম্মেলন থেকে দেয়া হয়, যা আদৌ বাস্তবায়িত হয় না।
×