ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

অনুমোদন পেতে পারে আজ

পিপিপিতে হচ্ছে ঢাকা বাইপাস সড়ক

প্রকাশিত: ০৩:৫৭, ১ মার্চ ২০১৬

পিপিপিতে হচ্ছে ঢাকা বাইপাস সড়ক

হামিদ-উজ-জামান মামুন ॥ পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপে (পিপিপি) তৈরি হচ্ছে ঢাকা বাইপাস সড়ক। যানজট নিরসনে ঢাকার পাশের গাজীপুর জেলার জয়দেবপুর থেকে মদনপুর পর্যন্ত ৪৮ কিলোমিটার ঢাকা বাইপাস সড়ক চার লেনে নির্মাণ করা হচ্ছে। এতে ব্যয় হবে ২৩৬ কোটি ৫০ লাখ টাকা। এর মধ্যে প্রায় ৪০ কোটি টাকা বেসরকারী খাত ব্যয় করবে বলে জানা গেছে। চলতি বছর থেকে ২০২০ সাল নাগাদ এর কাজ শেষ হবে। আজ মঙ্গলবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির সভায় এই প্রকল্পটি অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করা হতে পারে। রাজধানীর শেরেবাংলানগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠেয় এ বৈঠকে সভাপতিত্ব করবেন প্রধানমন্ত্রী ও একনেক চেয়ারপার্সন শেখ হাসিনা। অনুমোদন পেলে সড়ক ও জনপথ অধিদফতর (সওজ) এটি বাস্তবায়ন করবে। পাবলিক পাইভেট পার্টনারশিপ (পিপিপি) প্রকল্পের আওতায় চার লেনের ঢাকা বাইপাস নির্মাণ করা হবে। এতে নগরীতে পণ্যবাহী পরিবহনের অনেক চাপ কমবে। ৪৮ কিলোমিটার দৈর্ঘের এই সড়কটি জয়দেবপুর থেকে দেবগ্রাম হয়ে ভুলতা, মদনপুর গিয়ে শেষ হবে। ফলে দেশের উত্তরাঞ্চল ও পশ্চিমাঞ্চলের আরও অধিক সংখ্যক পণ্যবাহী যানবাহন ঢাকায় প্রবেশ না করেই সরাসরি চট্টগ্রামে প্রবেশ করতে পারবে। সূত্র জানায়, ঢাকার যানজটের চাপ সামলাতে হিমশিম খাচ্ছেন সংশ্লিষ্টরা। উত্তরাঞ্চল ও পশ্চিমাঞ্চলের পণ্যবাহী অনেক ট্রাক সরাসরি চট্টগ্রামের উদ্দেশে পাড়ি জমায়। এতে করে বাইপাস না থাকার কারণে অহেতুক এসব পণ্যবাহী ট্রাকগুলো ঢাকায় প্রবেশ করে। এতে নগরীতে যানজট সৃষ্টি হয়। ঢাকা বাইপাস নির্মাণ করা হলে ঢাকাবাসী যানজটের কবল থেকে অনেকাংশে মুক্তি পাবেন। এ প্রসঙ্গে সওজ-এর দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা বলেন, অনেক সময় দেখা যায় চট্টগ্রামগামী উত্তরাঞ্চল ও পশ্চিমাঞ্চলের পণ্যবাহী ট্রাক ঢাকায় প্রবেশ করে। এতে ঢাকা যানজটের কবলে পড়ে। ‘ঢাকা বাইপাস নির্মাণ করা হলে এসব পণ্যবাহী ট্রাক ঢাকায় প্রবেশ না করেই সরাসরি চট্টগ্রামে যেতে পারবে। এছাড়া এসব অঞ্চলের অনেক যাত্রীবাহী পরিবহনও এভাবে চট্টগ্রামে যেতে পারবে। ফলে নগরীতে যানবাহনের চাপ কিছুটা কমে আসবে। এসব দিক বিবেচনায় নিয়ে ৪৮ কিলোমিটার চার লেনের ঢাকা বাইপাস নির্মাণ করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। সওজ সূত্র জানায়, প্রকল্পের আওতায় ভূমি অধিগ্রহণ, পুনর্বাসন, ঢাকা বাইপাস পিপিপি সংলগ্ন এলাকায় বিদ্যমান ইউটিলিটি স্থানান্তর করা। জানা গেছে, ঢাকা বাইপাস পিপিপি প্রকল্পের নির্মাণ কাজ চলাকালীন যাবতীয় কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ এবং পুনর্বাসন পরিকল্পনা বাস্তবায়নে সরকারের পাশাপাশি অন্যান্য সংস্থাও সাহায্য করবে। প্রকল্প প্রস্তাবে নীতিগত সাপোর্ট, জনবল, ইনডিপেন্ডেন্ট ইঞ্জিনিয়ার, এনজিও সার্ভিস, লিকুইডেটেড সার্ভিস, স্টাডি ট্যুর ইত্যাদি বিষয়ে সভা সেমিনার করা হয়েছে। এতে সবার কাছ থেকে ইতিবাচক সাড়া পাওয়া গেছে। অন্যদিকে প্রকল্পের আওতায় ছয়জন প্রথম শ্রেণীর কর্মকর্তা নিয়োগ দেয়া হবে। সওজ-এর একজন তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলীকে প্রকল্প পরিচালক হিসেবে নিয়োগ দেয়া হবে। সওজ সূত্র আরও জানায়, প্রকল্পটি পিপিপির ভিত্তিতে বাস্তবায়নের জন্য কনশেসনারের নিকট ভূমি অধিগ্রহণ ও ইউটিলিটি স্থানান্তরের কার্যক্রম সম্পন্ন করা হয়েছে। এরই মধ্যে সম্ভাব্যতা সমীক্ষা সম্পন্ন হয়েছে। সব সমীক্ষায় ইতিবাচক ফল দেখা গেছে। সূত্র জানায়, সরকারী-বেসকারী অংশীদারিত্ব (পিপিপি) পুরোপুরি কার্যকর করতে চাচ্ছে সরকার। এজন্য ইতোমধ্যে নানা উদ্যোগ নেয়া হলেও সর্বশেষ বিশ্বব্যাংকের সহায়তা চাওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে প্রায় ৩৫৯ কোটি টাকার কারিগরি সহায়তা চাওয়া হয়। সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের পরামর্শে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) থেকে সহায়তার বিষয়টি ঢাকা অফিসকে জানানো হয়। এর আগে চলতি অর্থবছরের বাজেট ঘোষণার সময় অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেছিলেন, পিপিপি বাস্তবায়নে গত ছয় বছরে আমি অনেক বক্তব্য দিয়েছি। কিন্তু এই ক্ষেত্রে প্রকল্প বাস্তবায়নে তেমন উল্লেখযোগ্য উদাহরণ নেই। স্বীকার করতেই হবে, পদ্ধতিগত প্রস্তুতি আমাদের দুর্বল ছিল। তবে আশার বিষয় হলো বিনিয়োগকৃত সম্পদ হতে প্রাপ্তি নিশ্চিত করা এবং প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো সক্ষমতা বাড়াতে ইতোমধ্যেই সরকারী-বেসরকারী অংশীদারিত্ব বিল ২০১৫ জাতীয় সংসদে উপস্থাপন করেছি। ফলে পিপিপি কার্যক্রমের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা দূর হবে এবং বেসরকারী বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ বাড়বে। এসব উদ্যোগ ছাড়াও সুশাসন প্রতিষ্ঠায় নানা সংস্কার পিপিপি কার্যক্রমে গতিশীলতা আনবে। তিনি জানান, পিপিপির আওতায় ৪২টি প্রকল্প নীতিগতভাবে অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে তিনটি প্রকল্পের চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। অন্য দুটি প্রকল্পের চুক্তি স্বাক্ষর হবে শীঘ্রই। তাছাড়া অনুমোদিত ২৪টি প্রকল্পের ট্রানজেকশন এ্যাডভাইজার নিয়োগ করা হয়েছে। সূত্র জানায়, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির দিক বিবেচনায় অবকাঠামো খাতে বেশ কয়েকটি বড় প্রকল্প বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেয় সরকার। প্রয়োজনীয় অর্থায়নের উৎস নিশ্চিত না হওয়ায় সরকারী-বেসরকারী অংশীদারিত্বের (পিপিপি) ভিত্তিতে এগুলো বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
×