ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

চট্টগ্রামে ‘বাংলাদেশ এ্যাপারেল এ্যান্ড সেফটি এক্সপো’ উদ্বোধনীতে ক্রেতাদের উদ্দেশে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল

পোশাক শিল্পে কমপ্লায়েন্স নিশ্চিত করা হয়েছে ॥ এবার দাম বৃদ্ধি করুন

প্রকাশিত: ০৪:৩৩, ৭ আগস্ট ২০১৫

পোশাক শিল্পে কমপ্লায়েন্স নিশ্চিত করা হয়েছে ॥ এবার দাম বৃদ্ধি করুন

স্টাফ রিপোর্টার, চট্টগ্রাম অফিস ॥ শ্রমিকদের জীবনমান উন্নয়নে মজুরি বৃদ্ধি এবং কমপ্লায়েন্স নিশ্চিত করার পরও বিদেশী ক্রেতারা বাংলাদেশে তৈরি পোশাকের মূল্যবৃদ্ধি করছেন না। সকল শর্ত পূরণের পরও জিএসপি সুবিধা দিচ্ছে না মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। সবচেয়ে বেশি শুল্ক দিতে হয় যুক্তরাষ্ট্রে পোশাক রফতানির ক্ষেত্রে। আমেরিকায় পোশাক রফতানিতে গত পাঁচ বছরে ৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার শুল্ক দিতে হয়েছে। বৃহস্পতিবার চট্টগ্রামের হোটেল রেডিসন ব্লু’র মেজবান হলে ৩ দিনব্যাপী ‘বাংলাদেশ এ্যাপারেল এ্যান্ড সেফটি এক্সপো-২০১৫’ এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে উপরোক্ত কথাগুলো বলেন বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ। বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্সিয়া স্টিফেন ব্লুম বার্নিকাটের উপস্থিতিতেই মন্ত্রী এ প্রসঙ্গ এনে তৈরি পোশাকের মূল্যবৃদ্ধির ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখতে কূটনৈতিকদের প্রতি অনুরোধ জানান। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে আরও উপস্থিত ছিলেন ইউরোপীয়ান পার্লামেন্টের দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক ট্রেড মনিটরিং গ্রুপের চেয়ারম্যান সাজ্জাদ করিম ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত ও প্রতিনিধি দলের প্রধান পিয়েরে মায়াদন এবং চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন। বিজিএমইএ সভাপতি মোঃ আতিকুল ইসলামের সভাপতিত্বে এতে স্বাগত বক্তব্য রাখেন সংগঠনের প্রথম সহ-সভাপতি নাসির উদ্দিন আহমেদ চৌধুরী। বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেন, বিদেশী ক্রেতারা বাংলাদেশের শ্রমিকদের জীবনমান উন্নয়ন এবং কমপ্লায়েন্স চান। কিন্তু তাদের চাওয়া অনুযায়ী মজুরিসহ বিভিন্ন সুবিধা নিশ্চিত করা হলেও আন্তর্জাতিক বাজারে পোশাকের মূল্য বাড়ছে না। পৃথিবীর বহু দেশে ট্রেড ইউনিয়ন করার অধিকার নেই। কিন্তু বাংলাদেশের পোশাক শিল্পে ট্রেড ইউনিয়ন রয়েছে। তিনি শ্রমিক ও পোশাক শিল্পের কর্ম পরিবেশের উন্নয়নে তৈরি পোশাক সিএম মূল্য বাড়াবার অনুরোধ জানান। আমেরিকার কাছ থেকে জিএসপি সুবিধা না পাওয়া প্রসঙ্গে মন্ত্রী বলেন, তাদের চাওয়া অনুযায়ী সকল শর্তই পূরণ করা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রে পোশাক রফতানির ক্ষেত্রে আমাদেরকে ১৬ শতাংশ শুল্ক দিতে হয়। অথচ, ভারতসহ অন্যান্য দেশে এ শুল্কহার সর্বোচ্চ ২ শতাংশ। গত পাঁচ বছরে আমেরিকায় পোশাক রফতানিতে আমরা ৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার শুল্ক দিয়েছি। দেশের রফতানি আয় উত্তরোত্তর বৃদ্ধি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশের রফতানি আয় ৫০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ছাড়িয়ে যাবে। পোশাক শিল্পে কমপ্লায়েন্স নিশ্চিত করা হয়েছে বলে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, আমেরিকা ও ইউরোপের বায়ারদের সমন্বয়ে গঠিত কমিটি সরেজমিন পরিদর্শন করে অধিক ঝুঁকিপূর্ণ কারখানা পেয়েছে মাত্র ৩৪টি। সব মিলিয়ে কমপ্লায়েন্স নিশ্চিত নয় এমন কারখানার সংখ্যা ৭০টির বেশি নয়, যা মোট কারখানার এক দশমিক আট শতাংশ মাত্র। তিনি বলেন, রানাপ্লাজা বাংলাদেশের চিত্র নয়। ওটি ছিল একটি দুর্ঘটনা। এরপর থেকে পোশাক শিল্প কারখানা ও শ্রমিকদের উন্নয়নে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। এমন দুর্ঘটনা যাতে আর না ঘটে সেজন্য সকলেই সতর্ক রয়েছেন। বিদেশী বিনিয়োগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, মুন্সীগঞ্জে চীনা কোম্পানির সঙ্গে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছে। তারা তিন থেকে পাঁচ হাজার বিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করবে। চট্টগ্রামের মীরসরাই এবং আনোয়ারায় বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে উঠছে, যেখানে বিদেশীরা বিনিয়োগ করবেন। মার্কিন রাষ্ট্রদূত বার্নিকাট তাঁর বক্তব্যে শ্রমিকদের নিরাপত্তা ও অধিকার বিষয়ে আরও সচেতন হওয়ার অনুরোধ জানান। তিনি বলেন, একর্ড, এলায়েন্স, বিজিএমইএ এবং বাংলাদেশ সরকার সমন্বিতভাবে কারখানার মানোন্নয়নে কাজ করছে। এটি সন্তোষজনক। বাংলাদেশকে এখন ব্র্যান্ডিংয়ের কাজ করতে হবে। তবে যেভাবে এগুচ্ছে তাতে পোশাক শিল্পে বাংলাদেশ এটি একটি ব্র্যান্ড হয়ে যাবে। চসিক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন চট্টগ্রামের পোশাক শিল্পের বিভিন্ন সমস্যা প্রসঙ্গে অবহিত হয়ে বলেন, ৫০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের রফতানি লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে বন্দরনগরীর কারখানাগুলো বিরাট ভূমিকা পালন করবে। এ শিল্পের উন্নয়নে মেয়র হিসেবে যতটুকু ভূমিকা রাখা প্রয়োজন তা তিনি রাখবেন বলে প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেন। বিজিএমইএ সভাপতি আতিকুল ইসলাম বলেন, এই চট্টগ্রাম থেকেই ১৯৭৮ সালে বাংলাদেশে পোশাক শিল্পের যাত্রা শুরু হয়েছিল দেশ গার্মেন্টসের মাধ্যমে। চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে দেশের ৯০ শতাংশ আমদানি-রফতানি হয়ে থাকে। রফতানি লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে চট্টগ্রাম বিরাট ভূমিকা পালন করবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি। বিজিএমএ সভাপতি বলেন, দেশের সিংহভাগ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের এ খাতটি পেয়ে থাকে মোট গ্যাস সরবরাহের মাত্র ৫ শতাংশ। তিনি শিল্প কারখানায় নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস ও বিদ্যুত সরবরাহ নিশ্চিতের দাবি জানান। আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের মূল্য কমে যাওয়ায় বাংলাদেশেও যৌক্তিকভাবে মূল্য নির্ধারণের আহ্বান জানান।
×