ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৯ জুন ২০২৫, ৫ আষাঢ় ১৪৩২

“কিল ট্রাক”: যেভাবে পার্ক করা গাড়ি হত্যা করল ইরানের পরমাণু কর্মসূচির প্রধানকে

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

প্রকাশিত: ০৮:৫৮, ১৯ জুন ২০২৫; আপডেট: ০৮:৫৮, ১৯ জুন ২০২৫

“কিল ট্রাক”: যেভাবে পার্ক করা গাড়ি হত্যা করল ইরানের পরমাণু কর্মসূচির প্রধানকে

ছবিঃ সংগৃহীত

বহু বছর ধরে মোহসেন ফাখরিজাদেহ ছিলেন শুধু গোপন প্রতিবেদনে থাকা একটি নাম। পশ্চিমা গোয়েন্দাদের মতে, তিনিই ছিলেন ২০০০ এর দশকে ইরানের গোপন পরমাণু বোমা নির্মাণ প্রচেষ্টা ‘প্রজেক্ট আমাদ’-এর মূল পরিকল্পনাকারী।

নয়াদিল্লি থেকে:
এই মাসে ইসরায়েল যখন ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোতে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায়, তখন ইরানের পরমাণু শক্তি সংস্থার সাবেক প্রধান ফেরেইদুন আব্বাসি নিহতদের তালিকায় ছিলেন। একসময় তিনি হত্যাচেষ্টাকে তুচ্ছ করেছিলেন এবং বলেছিলেন, "চাইলে পরমাণু অস্ত্র তৈরি করতেও রাজি আছি।" ২০১০ সালের এক হত্যাচেষ্টা থেকে বেঁচে যান, এবার আর পারেননি।

তার মৃত্যুর পর আবার সামনে আসে এক পুরনো ক্ষত—মোহসেন ফাখরিজাদেহ হত্যাকাণ্ড।

ছায়ার বিজ্ঞানী

দীর্ঘদিন ধরে ফাখরিজাদেহ ছিলেন এক রহস্যময় ব্যক্তি—না কোনো সাক্ষাৎকার, না কোনো ছবি, না কোনো জনসমক্ষে বক্তব্য। পশ্চিমা গোয়েন্দারা তাকে ‘ইরানের রবার্ট ওপেনহাইমার’ বলে আখ্যা দেয়। এমনকি ২০১৫ সালের ইরান পরমাণু চুক্তিতেও তার নাম উল্লেখ করা হয়নি।

২০১৮ সালে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু জাতির উদ্দেশে ভাষণে ইরানের পরমাণু নথিপত্র প্রকাশ করে বলেন, "এই নামটি মনে রাখবেন—মোহসেন ফাখরিজাদেহ।"

হত্যাকাণ্ডের দিন

২০২০ সালের ২৭ নভেম্বর, স্ত্রী ও দেহরক্ষীদের সঙ্গে ফাখরিজাদেহ তেহরানের পূর্বাঞ্চলীয় আবসার্দ শহরে নিজ বাড়ির পথে রওনা হয়েছিলেন। রাস্তায় একটি পরিত্যক্ত পিকআপ ট্রাকের ভিতর ছিল ৭.৬২ এমএম এফএন ম্যাগ মেশিনগান—ফেসিয়াল রিকগনিশন, স্যাটেলাইট সংযোগ ও বিস্ফোরক-সহ রোবট অস্ত্র।
কোনো এজেন্ট মাটিতে ছিল না।

কনভয় স্পিড ব্রেকারে ধীরগতি হলে একটি কুকুর রাস্তা পার হচ্ছিল—ঠিক তখনই মেশিনগান প্রথমবার গুলি চালায়, গাড়ির সামনের কাঁচ ভেদ করে ফাখরিজাদেহকে কাঁধে আঘাত করে। তিনি গাড়ি থেকে নেমে দরজার আড়ালে আশ্রয় নেন, কিন্তু আরও তিনটি গুলি তাকে মেরুদণ্ডে আঘাত করে। সেখানেই তিনি পড়ে যান। তার স্ত্রী অক্ষত থাকেন।

পুরো ঘটনা ৬০ সেকেন্ডের কম সময়েই ঘটে।

ইসরায়েলের অদৃশ্য ছায়া

এই অপারেশনটি পরিকল্পনা থেকে বাস্তবায়ন পর্যন্ত স্পষ্টভাবে মোসাদের কৌশলের ছাপ বহন করে। যদিও ইসরায়েল আনুষ্ঠানিকভাবে দায় স্বীকার করেনি, কিন্তু প্রাক্তন মোসাদ প্রধান ইয়োসি কোহেন বলেন, ফাখরিজাদেহ ছিল “ন্যায্য লক্ষ্য”।

মোসাদ কয়েক মাস ধরে ফাখরিজাদেহকে নজরদারিতে রাখে। অস্ত্রগুলো খণ্ড খণ্ড করে ইরানে পাঠিয়ে সেখানেই জোড়া লাগানো হয়।

আন্তর্জাতিক প্রভাব

এই হত্যাকাণ্ড শুধু ইরানের বিজ্ঞানীকে সরায়নি, নষ্ট করেছে কূটনৈতিক পথও। ইরান যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় শক্তিগুলোর সঙ্গে আলোচনা থেকে সরে আসে, ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ বাড়িয়ে দেয়, এবং অভ্যন্তরীণভাবে কট্টরপন্থীরা আরও শক্তিশালী হয়ে ওঠে।

ফাখরিজাদেহকে টার্গেট করে যে বুলেট ছোড়া হয়েছিল, তা শুধু একজন মানুষকেই হত্যা করেনি—তা পুরো অঞ্চলকে ঠেলে দিয়েছে নতুন এক সংঘাতের মুখোমুখি।

মুমু

×