
ছবি: সংগৃহীত
আমরা সাধারণ মানুষ আয় করলেই কর দেই। বেতন হাতে আসার আগেই তার একটা অংশ চলে যায় রাজস্ব খাতে। কিন্তু যাঁরা সবচেয়ে বেশি আয় করেন, তাঁরা কর দেন সবচেয়ে কম! বিশ্বের শীর্ষ ধনী ইলন মাস্কের নাম সেই তালিকার শীর্ষেই।
তবে প্রশ্নটা জটিল—তিনি কি কর দেন না বলেই এত ধনী, না তিনি এত ধনী বলেই কর দিতে হয় না?
ধনীদের জন্য ভিন্ন নিয়ম?
ইলন মাস্ক টেসলা, স্পেসএক্স, নিউরালিঙ্কের মতো প্রযুক্তি জগতের মুকুটধারী। তাঁর সম্পদের পরিমাণ শত শত বিলিয়ন ডলার। অথচ মার্কিন কর-বিষয়ক অনুসন্ধানী সংস্থা ProPublica জানায়—২০১৪ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত মাস্কের সম্পদ বেড়েছে প্রায় ১৩.৯ বিলিয়ন ডলার, অথচ আয়কর দিয়েছেন মাত্র ৪৫৫ মিলিয়ন। এমনকি ২০১৮ সালে তিনি কোনো করই দেননি।
এরপর ২০২১ সালে মাস্ক ১৪ বিলিয়ন ডলারের শেয়ার বিক্রি করেন, যার ফলে তাঁর করের পরিমাণ দাঁড়ায় প্রায় ১১ বিলিয়ন ডলার—যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে এক ব্যক্তির সর্বোচ্চ করদানের রেকর্ড। এই কর তিনি দিতে বাধ্য হন কারণ তিনি বড় অঙ্কে শেয়ার বিক্রি করেন। তিনি নিজেই তখন টুইট করে লেখেন— “I will pay over $11 billion in taxes this year.”
কিন্তু এই এক বছরের ব্যতিক্রম বাদ দিলে, ২০২২ থেকে ২০২৪ পর্যন্ত টেসলা কোম্পানির আয় ছিল বিশাল, কর ছিল প্রায় শূন্য।
২০২২ সালে টেসলার নিট আয় ছিল ৫.৫ বিলিয়ন ডলার, কিন্তু ফেডারেল ট্যাক্স দিয়েছে শূন্য।
২০২৩ সালে আয় ছিল ৩.১ বিলিয়ন ডলার, ট্যাক্স মাত্র ৪৮ মিলিয়ন, যা মোট আয়ের ১.৫%।
২০২৪ সালে আয় ২.৩ বিলিয়ন ডলার, কিন্তু ফেডারেল কর আবারও শূন্য।
তিন বছরে মোট আয় ১০.৯ বিলিয়ন, কর মাত্র ৪৮ মিলিয়ন — কার্যকর কর হার মাত্র ০.৪%।
২০২৫ সালের শুরুতে পাওয়া তথ্যে দেখা যায়, মাস্ক হয়তো আবার বড় অঙ্কের শেয়ার বিক্রির প্রস্তুতি নিচ্ছেন, কিন্তু এখনো তা কর হিসেবে ধরা পড়েনি। বরং তাঁর আয় বা সম্পদের প্রকৃত করযোগ্য অংশ কমিয়ে রাখার জন্য তিনি পূর্বের মতোই “লোন টেকনিক” ও “unrealized gain” ব্যবস্থাকে কাজে লাগাচ্ছেন।
কর না দিয়ে কৌশলে জয়
মাস্ক নিয়মিত বেতন নেন না। তাঁর সব সম্পদ মূলত শেয়ারে। যতক্ষণ না তিনি শেয়ার বিক্রি করছেন, ততক্ষণ পর্যন্ত সেই অর্থ ‘আয়’ হিসেবে বিবেচিত হয় না—সুতরাং কর দেয়াও লাগে না। এর সঙ্গে যুক্ত হয় আরও এক চালাকি—লোন।
তিনি তাঁর শেয়ারের বিপরীতে ঋণ নিয়ে জীবনযাপন করেন। লোনে কর নেই। শেয়ারও বিক্রি করতে হয় না।এ যেন খেলায় অংশ না নিয়েও ট্রফি জিতে নেওয়ার মত এক নিখুঁত কৌশল!
দানের মধ্যেও কৌশল
এছাড়া ২০২১–২২ সালে মাস্ক প্রায় ৭.৬ বিলিয়ন ডলারের শেয়ার দান করেন দাতব্য ফাউন্ডেশনে, যার ফলে তিনি বড় অঙ্কের কর ছাড় পান—এবং তাঁর ইমেজও রক্ষা পায় দানবীর হিসেবে।। একদিকে তিনি দানবীর হিসেবে প্রশংসিত হলেন, অন্যদিকে কর রেহাইও পেয়ে গেলেন। এটাই ধনীদের অর্থনীতি—দানও এক ধরনের বিনিয়োগ।
❝"আইন সবার জন্য সমান?"❞
এ প্রশ্ন এখন জোরেশোরে উঠছে। সাধারণ মানুষ যেখানে ইনকামের ২৫–৩০ শতাংশ কর দেয়, সেখানে ধনীদের ক্ষেত্রে আইন যেন আরেক রকম। ইলন মাস্ক নিজেই একবার বলেছেন— "I only sell stock when I have to pay taxes." অর্থাৎ তিনি কর দেন, কিন্তু সময়টা নির্ধারণ করেন নিজেই। আইন তাঁর কাছে বাধা নয়, বরং হাতিয়ার।
তাহলে কি কর না দিলেই ধনী হওয়া যায়?
এই প্রশ্নটা অনেকটা “ডিম আগে, না মুরগি?” টাইপ।
ইলন মাস্করা হয়তো কর না দিয়েই আরও ধনী হন, আবার ধনী বলেই করের ফাঁকফোকর খুঁজে পান। যেখানে সাধারণ মানুষ কর দিতে গিয়ে কাঁধ ঝুঁকিয়ে হাঁটে, সেখানে ধনীরা করের দড়ি লাফিয়ে পার হয়ে যান, হাসিমুখে।
Mily