
শরত এসেছে। এমন নীল আকাশের স্বপ্ন এখন সবার মনে
কী যে বৃষ্টি হচ্ছে গত কদিন! অবিরাম বৃষ্টিতে ধুয়ে যাচ্ছে রাজধানী শহর। দেখে মনে হচ্ছেÑ ভরাবর্ষা। আসলে ঘটনা উল্টো। বর্ষা বিদায় নিয়েছে। বৃষ্টিভেজা প্রকৃতিতে খুব নীরবে ঢুকে পড়েছে শরত। কেউ টের পেয়েছেন। কেউ পাননি। তাই বলে পরিবর্তন থেমে থাকেনি।
ছয় ঋতুর বাংলাদেশে তৃতীয় ঋতুটি শরত। এর বিস্তৃতি ভাদ্র থেকে আশ্বিন পর্যন্ত। আজ বৃহস্পতিবার শরতের দ্বিতীয় দিন। এখনো বর্ষার প্রভাব স্পষ্ট। মেঘে ঢাকা রাজধানীর আকাশ। তবে যত দিন যাবে ততই বদলাতে থাকবে প্রকৃতি। শরতের রঙে সেজে উঠবে চারপাশ। এ ঋতুর অন্যতম বৈশিষ্ট্য নীল আকাশ। স্বচ্ছ নীল আকাশে সাদা তুলার মতো মেঘ উড়ে বেড়ায়। ঘুরে বেড়ায়। দেখে মন গুনগুন করে গাইতে শুরু করে: ‘আজ ধানের খেতে রৌদ্রছায়ায় লুকোচুরি খেলা রে ভাই, লুকোচুরি খেলা-/নীল আকাশে কে ভাসালে সাদা মেঘের ভেলা রে ভাই- লুকোচুরি খেলা।’ অপরূপ সেই দৃশ্য দেখা যাবে এবারও। অবশ্য ঢাকার আকাশ অনেক আগেই চুরি হয়ে গেছে। ওপরের দিকে তাকালে বাধা হয়ে দাঁড়ায় কংক্রিটের বহুতল ভবন কিংবা উড়াল সেতু। এর পরও ফাঁক-ফোকর দিয়ে রাজধানীবাসী শরতের নীল আকাশ দেখার চেষ্টা করেন।
শরতের আরেক সৌন্দর্য কাশফুল। এ সময় নদীর ধারে বিস্তৃত এলাকাজুড়ে ফুটে থাকে সাদা কাশফুল। কবিগুরুর ভাষায়: ‘আমরা বেঁধেছি কাশের গুচ্ছ, আমরা গেঁথেছি শেফালিমালা- নবীন ধানের মঞ্জরী দিয়ে সাজিয়ে এনেছি ডালা।’ গ্রামের অপরূপ ছবি এখন ঢাকার আশপাশের কিছু এলাকাতেও দেখা যায়।
শরতের আরেক দান শিউলি। কারণ প্রিয় ফুলের মিষ্টি ঘ্রাণ শরতকে ছড়িয়ে দেয়। দ্রোহ ও প্রেমের কবি নজরুল তেমনি এক সকালের বর্ণনা দিয়ে লিখেছিলেন, শিউলিতলায় ভোরবেলায় কুসুম কুড়ায় পল্লী-বালা।/শেফালি ফুল ঝরে পড়ে মুখে খোঁপাতে চিবুকে আবেশ-উতলা।
শরতে শুধু প্রকৃতি নয়, মনও বদলাতে থাকে। পরিবর্তিত হয়। শরতের আনন্দ প্রকাশ করে রবীন্দ্রনাথ লিখেছেন, শরতে আজ কোন অতিথি এল প্রাণের দ্বারে।/আনন্দগান গা রে হৃদয়, আনন্দগান গা রে...।
নজরুল শরতে হারানো প্রিয়ার জন্য শোক করেছেন। লিখেছেন: ‘শিউলি ফুলের মালা দোলে শারদ-রাতের বুকে ঐ/এমন রাতে একলা জাগি সাথে জাগার সাথী কই।’ একইরকম বিরহ আক্রান্ত হয়ে কবি লিখেছেন: ‘দূর প্রবাসে প্রাণ কাঁদে আজ শরতের ভোর হাওয়ায়।/শিশির-ভেজা শিউলি ফুলের গন্ধে কেন কান্না পায়।’ প্রায় অভিন্ন অনুভূতির প্রকাশ ঘটিয়ে কবিগুরু লিখেছেন: আজি শরতাপনে প্রভাতস্বপনে কী জানি পরাণ কী যে চায়।/ওই শেফালির শাখে কী বলিয়া ডাকে বিহগ বিহগী কী যে গায় গো...।
সব মিলিয়ে শরত অনন্য। প্রতি বছর নানা আয়োজনে এ ঋতুকে বরণ করে নেয় বাঙালি। রাজধানী শহরে একাধিক উৎসব অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এবারও হবে। চলছে প্রস্তুতি। আপনিও প্রস্তুতি নিন। যোগ দিন শারদ উৎসবে।