ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

বাঁচাতেই হবে ফসলের জমি

প্রকাশিত: ০৪:২৮, ৯ নভেম্বর ২০১৭

বাঁচাতেই হবে ফসলের জমি

এদেশের শতকরা ৭০ ভাগ লোক এখনও কৃষি কাজের ওপর নির্ভরশীল। দেশের কৃষি খাত শুধু অভ্যন্তরীণ খাদ্যের জোগানই দিচ্ছে না, এ খাত থেকে উপার্জিত হচ্ছে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা। কৃষি এদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে পালন করছে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। কৃষি মন্ত্রণালয়ের হিসাব মতে বর্তমানে এদেশে আবাদযোগ্য মোট কৃষি জমির পরিমাণ ৮৫,৬০,৯৬৪.৭৫ হেক্টর। আর আবাদযোগ্য পতিত জমির পরিমাণ হচ্ছে ২,১০,০২৭.৯২ হেক্টর। যা জনসংখ্যার তুলনায় খুবই অপ্রতুল। দুঃখজনক হলেও সত্য যে দেশে দ্রুত হারে কমছে এই কৃষি জমির পরিমাণ। এমন চলতে থাকলে অচিরেই আমাদের অর্থনীতিতে বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে। কৃষি জমির এই দ্রুত হ্রাসকে খাদ্য নিরাপত্তার জন্য বড় একটি হুমকি বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। পরিসংখ্যান অনুযায়ী প্রতি বছরে ফসলি জমির পরিমাণ ৬৮ হাজার ৭০০ হেক্টর করে কমেছে, যা মোট ফসলি জমির শূন্য দশমিক ৭৩৮ শতাংশ। কৃষি জমি দ্রুত হ্রাস হওয়ার পেছনে উল্লেখযোগ্য কারণসমূহ হলো-আবাসস্থল, রাস্তাঘাট, মসজিদ-মাদ্রাসা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও শিল্প কারখানা নির্মাণ। অনুসন্ধানে দেখা যায়, দিনে প্রায় দুই হাজার বিঘা জমি কৃষি থেকে অকৃষি খাতে চলে যাচ্ছে। তামাক ও চিংড়ি চাষের ফলেও প্রতি বছর ২৪ হাজার বিঘা জমি কৃষি কাজের অনুপযোগী হয়ে যাচ্ছে। শহরতলী কিংবা গ্রামে অপরিকল্পিত বাড়িঘর নির্মাণ, নগরায়ন, শিল্প কারখানা নির্মাণ, ইটভাঁটি তৈরি, পুকুর-দীঘি খনন, মাছ চাষ ও নদীভাঙনের ফলে ক্রমাগতভাবে প্রতি বছরই বিপুল পরিমাণ কৃষি জমি হারিয়ে যাচ্ছে। শুধু ব্যক্তিগত বিভিন্ন উদ্যোগের কারণে কৃষি জমি কমে যাচ্ছে তা কিন্তু নয়, সরকারী বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের কারণেও কমছে কৃষি জমি। কয়লাভিত্তিক বিদ্যুতকেন্দ্র, এলএনজি টার্মিনাল, এলএনজিভিত্তিক বিদ্যুতকেন্দ্র, গভীর সমুদ্রবন্দর, সাগরে ভাসমান জ¦ালানি তেলের ডিপো ও পাইপলাইন স্থাপন করতে নষ্ট হচ্ছে কৃষি জমি। কৃষি খাত আমাদের বড় শক্তি। এ খাত কেবল খাদ্যই জোগায় না, শিল্প ও রফতানি খাত বিকাশেরও বড় উৎস। সুতরাং আমাদের কৃষি জমি রক্ষায় সংশ্লিষ্ট সবাইকে এখনই যথার্থ পরিকল্পনা এবং পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। কৃষি জমি রক্ষা করতে এ সংক্রান্ত আইনের বাস্তবায়ন করতে হবে। কৃষিতে উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধির প্রতিও মনোযোগ বাড়াতে হবে। কম জমিতে যাতে বেশি ফলন পাওয়া যায় সে জন্য বিনিয়োগ বাড়ানোর পাশাপাশি বিজ্ঞান-প্রযুক্তিকে কাজে লাগানোর ওপরও সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে। জন্মহার হ্রাসেও চাই আরও সচেতনতা। জন্মহার নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারলে নতুন আবাসনের প্রয়োজনও কম হবে। সর্বোপরি যে কোন অবকাঠামো নির্মাণের ক্ষেত্রে কৃষি জমি বাদ দিয়ে বিকল্প পথ অবলম্বন করতে হবে। মোহাম্মদপুর, ঢাকা থেকে
×