ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

দুর্ঘটনা রোধে সচেতনতা

প্রকাশিত: ০৩:৫৯, ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৬

দুর্ঘটনা রোধে সচেতনতা

মোঃ মিনহাজুর রহমান ভূঁঞা সড়ক দুর্ঘটনা যেন প্রতিদিনের নৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। সংবাদপত্রে খুব সম্ভব একটি কলাম খালি থাকে, সড়ক দুর্ঘটনার সংবাদ ছাপা হবে বলে। আবার, সব সড়ক দুর্ঘটনার খবর গণমাধ্যমে আসেও না । তবে, যেসব খবর আসে, তার পরিসংখ্যান তৈরি করলে পর্বত ছুঁই ছুঁই হবে। সড়ক দুর্ঘটনার কবলে পড়ছেন আবাল-বৃদ্ধ, শিশু। বাদ পড়ছে না নারীরাও। কেউ নিহত, কেউ আহত। কেউ আহত হয়ে অচল হয়ে বেঁচে আছেন। সড়ক দুর্ঘটনা ঘটছে নগরী, মহানগরী, শহর, মফস্বল, মহাসড়ক সবখানে। যেহেতু প্রতিদিনই ঘটছে সেহেতু আমি-আপনি যে কেউ, যে কখন দুর্ঘটনায় পড়ে যাব তার কোন নিশ্চয়তা নেই। দুর্ঘটনার একটি সাধারণ কারণ আগে পরে যাওয়ার জন গাড়িগুলোর মধ্যে প্রতিযোগিতা করা। এ ব্যাপারটি বেশিরভাগ গণপরিবহনের মধ্যে দেখা যায়। যে আগে যেতে পারবে সে আরেকটি ট্রিপ বেশি দিতে পারবে, আয় বেশি হবে। অর্থাৎ চালক-সহকারী বেশি বেতন পাবে। এই আশায় একই কোম্পানির গাড়ির মধ্যেও এখন প্রতিযোগিতা দেখা যায়। এসব প্রতিযোগিতার প্রতিবাদ করতে গেলেও বিপদ! শুধু বিপদ নয়, মহাবিপদ! এই তো সেদিন ৮ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর মিরপুর ১০ নম্বর গোলচত্বরের কাছে দুই বাসের প্রতিযোগিতার ক্ষোভ জানাতে গিয়ে এক যাত্রীর ওপর বাস তুলে দিল ঘাতক বাস চালক। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয়ে গেল প্রতিবাদের, মৃত্যু হলো বাস যাত্রীর আর হেরে গেলাম আমরা যাত্রীরা। সব দুর্ঘটনার দায় যে শুধু চালকের তা নয়। মোবাইল নামক বস্তুটি আমাদের সবার দুর্ঘটনার অন্তরায়। চালকের কানে মোবাইল ফোন যেমন গাড়ি দুর্ঘটনার শিকার হয় তেমনি পথচারীর কানে মোবাইল ব্যবহারে নিজেই পড়েন দুর্ঘটনায়। সড়ক দুর্ঘটনার কিছু সাধারণ কারণ রয়েছে, যে কারণে নিয়মিত দুর্ঘটনা ঘটছেই। শুধুমাত্র সচেতনতা, কিছু অবকাঠামো নির্মাণ এবং আইনের সঠিক প্রয়োগে রোধ হতে পারে সড়ক দুর্ঘটনা। সচেতনতা শুধু গণপরিবহন চালকের মধ্যেই হবে না, সচেতনতা তৈরি করতে হবে প্রাইভেট গাড়ির চালক, মালিক, যাত্রী, বাস-ট্রাক-চালক, সহকারী, মালিক, ট্রাফিক, পুলিশ তদুপরি সমগ্র জাতির মধ্যে। কেবল আইন করে কিংবা আইনের প্রয়োগ করে সচেতনতা সৃষ্টি করা যায় না। সচেতনতা সৃষ্টির জন্য চালক-সহকারীদের মধ্যে সচেতনতার সেমিনার আয়োজন করা যেতে পারে। সেমিনারে শুধু বক্তব্য দিয়ে শেষ করলে হবে না। মজার মজার কিছু ইভেন্ট থাকবে যেন, যারা সেমিনারে আসবে, তারা যেন পরবর্তী সময় আসতে উৎসাহী হন এবং অন্যকে উৎসাহিত করেন। আবার, এসব আয়োজনে যেন চালক-সহকারী এবং সংশ্লিষ্ট সবাই উপস্থিত হতে পারে, এ বিষয়ে গাড়ির মালিক কিংবা কর্তৃপক্ষের একান্ত সহযোগিতা প্রয়োজন। কর্তৃপক্ষ চালক- সহকারীদের আসতে ছুটি দেবেন এবং উৎসাহিত করবেন। এই আয়োজন শুধু চালকদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে না। পাশাপাশি, মালিক-যাত্রীদের জন্যও থাকবে। সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্য সেমিনার আয়োজন। প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্কুল-কলেজের ছাত্রছাত্রী এবং অভিভাবকদের নিয়ে মাসে অন্তত একটি সচেতনতা ইভেন্ট আয়োজন করতে পারে। বিভিন্ন পাবলিক-প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় এই আয়োজন করতে পারে। তাছাড়া সরকারী-বেসরকারী, স্বায়ত্তশাসিত সকল প্রতিষ্ঠানে আয়োজন হতে পারে। প্রতিষ্ঠানভেদে ভিন্ন ভিন্ন আয়োজন। এছাড়া সবচেয়ে বড় ভূমিকা রাখতে পারে গণমাধ্যম। প্রিন্ট-ইলেক্ট্রনিক-অনলাইন মাধ্যমগুলোতে সচেতনতামূলক আয়োজন প্রচার কিংবা প্রকাশ করতে পারে। পাশাপাশি, ট্রাফিক আইন যেন সর্বাত্মক মান্য করা যায় সে পরিবেশ তৈরি করতে হবে। বাইক চালকরা ট্রাফিক সিগন্যালে, বাইক নিয়ে উঠে পড়ে ফুটপাথে, যার ফলপ্রসূ দুর্ঘটনা। এর জন্য প্রয়োজন বাইকের আলাদা নির্দিষ্ট লেন তৈরি করা। আবার, ফুটপাথগুলো দখলমুক্ত করতে হবে হকারদের কাছ থেকে, যেখানে পথচারীরা ফুটপাথ ব্যবহার না করে রাস্তায় নেমে হাঁটতে থাকে। তেমনি কিছু পদচারী সেতু ফুটপাথজুড়ে বানানোয় পথচারীদের হাঁটার পথ বন্ধ হয়ে গেছে। কিছু পথচারীর সেতুর সিঁড়ির সামনে বসেছে অবৈধ দোকানপাট। পথচারীরা এগুলো ব্যবহার না করে যানবাহনের সামনে দিয়ে বিপজ্জনকভাবে রাস্তা পার হচ্ছেন। তাতে প্রায়ই ঘটছে ছোটবড় দুর্ঘটনা। দুর্ঘটনা কারোই কাম্য হতে পারে না। তবু, আমরা দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছি নিয়মিত। সরকার সড়ক দুর্ঘটনা রোধে প্রয়োজনীয় সকল পদক্ষেপ গ্রহণ করবে। আর নয় দুর্ঘটনা, আর নয় মৃত্যু, সচেতনতা আসুক সবার মাঝে। কুমিল্লা থেকে
×