ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

নওগাঁয় সোনামুল গ্যাংয়ের খপ্পরে পড়ে সর্বশান্ত শতাধিক মানুষ ॥ চরম আতঙ্কে এলাকাবাসী

প্রকাশিত: ১৭:৪৬, ২৩ জানুয়ারি ২০২২

নওগাঁয় সোনামুল গ্যাংয়ের খপ্পরে পড়ে সর্বশান্ত শতাধিক মানুষ ॥ চরম আতঙ্কে এলাকাবাসী

নিজস্ব সংবাদদাতা, নওগাঁ ॥ নওগাঁর রাণীনগরে সোনামুল নামে এক চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ীর গ্যাংয়ের খপ্পরে পড়ে সর্বশান্ত হচ্ছে অনেক মানুষ। বুলবুলি নামে আরেক মাদক ব্যবসায়ী মেয়েই হচ্ছে সোনামুল গ্যাংয়ের প্রধান হাতিয়ার। বুলবুলি ওরফে বুলির প্রেমের ফাঁদে ফেলে ইতোমধ্যেই প্রায় শতাধিক মানুষকে ব্লাকমেইল করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে সোনামুল গ্যাং। এছাড়া প্রকাশ্যে মাদক ব্যবসা, চুরি, ছিনতাই, চাঁদাবাজি, দখল ও বিভিন্ন মানুষকে টার্গেট বানিয়ে তাদের কাছে অজান্তে মাদক কিংবা অস্ত্র রেখে পুলিশি হয়রানী ও মিথ্যে মামলার সমঝোতার নামে অর্থ আদায়সহ তাদের হাজারো অবৈধ কর্মকান্ডে অতিষ্ঠ এলাকাবাসী। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, জেলার রাণীনগর উপজেলার গোনা ইউনিয়নের দুর্গাপুর গ্রামের সমতুল খন্দকারের ছেলে সোনামুল খন্দকার। এক সময় পুলিশের সোর্স হিসেবে কাজ করা সোনামুল বর্তমানে বিভিন্ন এলাকার ১৮জন চিহ্নিত সন্ত্রাসীদের নিয়ে তৈরি করেছে এক ভয়ংকর কিশোর গ্যাং। এই গ্যাংয়ের প্রধান হাতিয়ার হচ্ছে আরেক মাদক ব্যবসায়ী বুলবুলি বিবি। স্বামী পরিত্যক্তা এই বুলবুলির প্রেমের ফাঁদে ফেলে চলছে সোনামুল গ্যাংয়ের ব্লাকমেইল কর্মকান্ড। প্রথমে এলাকার অর্থশালী, ব্যবসায়ী ও সম্ভ্রান্ত পরিবারের ব্যক্তিদের ফোন নম্বর সংগ্রহ করে বুলিবুলিকে সরবরাহ করে সোনামুল। এরপর বিভিন্ন সময় বিভিন্ন নামধারী বুলবুলি ওই ব্যক্তির সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তোলার ২-৩দিনের মধ্যে কোন এক বাসা কিংবা পার্কে দেখা করার কথা বলে ডেকে নিয়ে অন্তরঙ্গ অবস্থায় ছবি তোলার পর পূর্ব থেকেই প্রস্তুত থাকা ওই গ্যাংয়ের মধ্য থেকে ডিবি পুলিশ সেজে ওই লোককে ভয়ভীতি দেখিয়ে সবকিছু কেড়ে নিয়ে ব্লাকমেইল করে। এরপর সমঝোতার নাম করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয় সোনামুল। এছাড়া বিভিন্ন সময় বিভিন্ন মানুষকে টার্গেট করে তাদের বাড়িতে মাদক কিংবা অস্ত্র রেখে ব্লাকমেইল করে লাখ লাখ টাকা সমঝোতার নামে আদায় করে আসছে। সোনামুল গ্যাংয়ের খপ্পরে পড়ে সমাজের বিভিন্ন শ্রেণির শতাধিক মানুষ তাদের সর্বস্ব হারিয়ে এখন পথে পথে ঘুরছে। এলাকার মানুষরা বর্তমানে চরম আতঙ্কে রয়েছে যে কে কখন সোনামুল গ্যাংয়ের খপ্পরের শিকার হয়ে পড়ে। প্রকাশ্যে মাদক বিক্রি, চুরি, ডাকাতি ও ছিনতাই এই গ্যাংয়ের নিত্যদিনের কাজ। পুলিশ ও আদালতের খাতায় সোনামুল ও বুলবুলির নামে অন্তত অর্ধশতাধিক মামলা থাকলেও প্রতিনিয়তই বহাল তবিয়তে এই গ্যাং তাদের কর্মকান্ড চালিয়ে আসছে। বর্তমানে এলাকাবাসী সোনামুলের গ্যাংয়ের হাত থেকে রক্ষা পেতে চায়। ঘোষগ্রামের আ: কাদের মন্ডলের ছেলে ভুক্তভোগী সাজ্জাদ হোসেন বলেন প্রথমে আমার ছোট ভাইকে ব্লাকমেইল করে সোনামুল গ্যাং। ভাইকে বাঁচাতে গিয়ে আমি নিজেও বুলবুলির ফাঁদে পড়ে যাই। এই ফাঁদ থেকে বাঁচতে লোক মারফত সোনামুল আমার কাছে ১০লাখ টাকা দাবী করে। পরে আমাকে ভয়ভীতি ও হুমকি-ধামকী দিয়ে বিভিন্ন সময় আমার কাছ থেকে প্রায় ৩লাখ টাকা আদায় করে সোনামুল গ্যাং। বর্তমানে আমি আর আমার ছোট ভাই নি:স্ব হয়ে পড়েছি। আমি এই বিষয়ে থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছি কিন্ত এখন পর্যন্ত কোন লাভ হয়নি। এছাড়া আতাইকুলা গ্রামের মৃত ওছমানের ছেলে মোকলেছুর রহমান, দুর্গাপুর গ্রামের হাফেজ মো. কেফায়েত উল্লাহ, বাবুল সরদার, সোনামুলের বড় ভাই সামিনুর খন্দকার সোনামুল গ্যাংয়ের শিকার হয়েছেন। ভুক্তভোগী সামিনুর খন্দকার বলেন সোনামুল আমাকেও ছাড়েনি। সোনামুল একজন চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী। সে বর্তমানে আমার নির্মাধিন বাড়ি জোরপূর্বক দখল করে সেখান থেকেই এই সব অবৈধ কর্মকান্ড চালিয়ে আসছে। সোনামুল বর্তমানে আমাকে প্রাননাশের হুমকি-ধামকি দিয়ে আসছে। প্রমানাদিসহ থানা ও আদালতে মামলা করেও কোন লাভ হচ্ছে না। এব্যাপারে গোনা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল খালেক বলেন, সোনামুল গ্যাংয়ের অত্যাচারে আমরা অতিষ্ঠ। আমি প্রশাসনের সহযোগিতা নিয়ে চেস্টা করছি সোনামুলের কর্মকান্ড বন্ধ করতে। কিন্তু তা আমার একার পক্ষে সম্ভব নয়। প্রশাসনের কঠোর পদক্ষেপ আর স্থানীয় মানুষদের চেস্টাই পারে সোনামুলের গ্যাং কে নির্মুল করতে। থানার অফিসার ইনচার্জ শাহিন আকন্দ বলেন, সোনামুল একজন চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী। আমি চেস্টা করছি সোনামুলকে আটক করে আইনের হাতে সোর্পদ করতে। কিন্তু সে ও তার দলের সদস্যরা পলাতক থাকায় আটক করা সম্ভব হচ্ছে না। তবে আমাদের চেস্টা অব্যাহত রয়েছে।
×