ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

উলিপুরে রমনা ট্রেন ২১ মাস ধরে বন্ধ ॥ বিপাকে যাত্রী সাধারণ

প্রকাশিত: ১৭:৫২, ৬ ডিসেম্বর ২০২১

উলিপুরে রমনা ট্রেন ২১ মাস ধরে বন্ধ ॥ বিপাকে যাত্রী সাধারণ

স্টাফ রিপোর্টার, কুড়িগ্রাম ॥ প্রায় দুই বছর থেকে চলছে না রমনা ট্রেন। ফলে চরম বিপাকে পড়েছে যাত্রী সাধারণ। এই ট্রেনকে ঘিরে এ অঞ্চলের কয়েক হাজার মানুষ তাদের জীবন-জীবিকা নির্বাহ করে। কিন্ত দীর্ঘ সময় ধরে ট্রেন চলাচল না হওয়ায় তাদের আয় রোজগার বন্ধ হয়ে গেছে। স্থানীয়রা মনে করছে রমনা ট্রেন চলাচল না করায় সংশ্লিষ্ট কর্তাব্যক্তিদের চরম উদাসীনতার জন্য এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে উত্তরের জেলা কুড়িগ্রামে রমনা ট্রেনটি চালু না করায় চরম কষ্টে পড়েছে সাধারণ মানুষ। জানা গেছে, ১৯৬৪ সাল থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে ৪২২ নম্বর লোকাল রমনা ট্রেনটি পার্বতীপুর-রমনা, ৪১৫ নম্বর রমনা-তিস্তা এবং ৪১৬ তিস্তা-রমনা, ৪২১ রমনা-পার্বতীপুর রুটে নিয়মিত চলাচল করত। এই ট্রেনকে ঘিরে নদী ভাঙন কবলিত দারিদ্রপীড়িত উলিপুর-চিলমারী উপজেলার মানুষজন তাদের উৎপাতিত কৃষি পণ্য বাহিরের জেলায় ন্যায্য মূল্যে বিক্রি করত। এছাড়াও স্থানীয় ফরিয়া পাইকাররা দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে নানান পণ্য আমদানি করত। কিন্ত দেশে করোনার প্রকোপ বৃদ্ধি পাওয়ায় অন্যান্য জেলার মত রমনা ট্রেনটি চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। পরে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলেও রমনা ট্রেনটি চালু করেনি কর্তৃপক্ষ। ফলে চরম ভোগান্তিতে পড়ে রেল নির্ভর সাধারণ যাত্রী, ফেরিওয়ালা, হকার ও ট্রেন কে ঘিরে খেটে খাওয়া মানুষজন। এছাড়াও ট্রেন চলাচল না হওয়ায় চরম ক্ষতির মুখে পড়েছেন ক্ষুদ্র ও মাঝারী ব্যবসায়ীরা। এদিকে, কুড়িগ্রাম থেকে রমনা স্টেশনের দুরুত্ব ২৮ কিলোমিটার। এই রেলপথে ৪টি স্টেশন রয়েছে। দীর্ঘদিন এ এলাকায় ট্রেন না আসায় সন্ধ্যা নামার সাথে সাথে স্টেশনগুলোতে মাদকসেবিদের আনাগোনা শুরু হয়। একসময় উলিপুর রেল স্টেশনে ব্যাপক জনসমাগম থাকলেও বর্তমানে শুনশান নিরবতা। রেলযাত্রীদের বসার ব্রেঞ্চে কয়েকজন স্থানীয় লোককে বসে থাকতে দেখা যায়। এসময় তাদের সাথে কথা হলে তারা জানান, কারোনা থেকে রমনা ট্রেন চলাচল বন্ধ। গত ১২ নভেম্বর রেলমন্ত্রী স্টেশন পরিদর্শণ করে গেলেন। আমাদের ধারনা এবার মনে হয় ট্রেন চলাচল শুরু করবে। কিন্তু ট্রেন তো চলতেছে না। দ্রুত রমনা ট্রেনটি চালু করলে এ এলাকার মানুষ খুবই উপকৃত হত। স্টেশনের কুলির সর্দার শামসুল আলম বলেন, এই স্টেশনে আমরা চারজন কুলি রয়েছি। ট্রেনকে ঘিরে আমরা জীবিকা নির্বাহ করতাম। কিন্তু করোনায় ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় আমাদের আয় রোজগার বন্ধ হয়ে যায়। ফলে পরিবার পরিজন নিয়ে অতি কষ্টে দিনাতিপাত করছি। বাকিরা অন্য পেশায় যোগ দিছেন। আজ কাল করে বহুদিন গেল, তবুও ট্রেন চলাচল শুরু হচ্ছে না। মুদি দোকানী ছালেহা বেগম বলেন, আগে প্রতিদিন ট্রেন আসত, স্টেশনে মানুষ যাতায়াত করত, বেঁচা বিক্রিও ভাল হত। এই ছোট দোকানটা দিয়ে আমাদের পরিবারের চলত। কিন্তু এখন আর ট্রেন আসে না বিক্রিও নেই বলতেই চলে। উলিপুর রেল স্টেশনের অফিস সহায়ক সবুজ মিয়া বলেন, ট্রেন চলাচল বন্ধ, কাজও নেই। ট্রেন বন্ধ থাকলেও প্রতিদিন অফিস খুলতে হয়ে। কবে নাগাদ ট্রেন চলাচল শুরু হবে এ বিষয়ে কিছুই জানেন না। রেল-নৌ যোগাযোগ ও পরিবেশ উন্নয়ন গণকমিটির প্রধান সমন্বয়ক নাহিদ হাসান বলেন, দীর্ঘ ২১ মাস থেকে এ অঞ্চলে রমনা ট্রেনটি না আসার বিষয়টি খুবই দুঃখজনক। রমনা রেল স্টেশনের উপর চিলমারীসহ রৌমারী-রাজীবপুর ও সুন্দরগঞ্জ উপজেলাও নির্ভরশীল। জেলা সড়ক ও নদীবন্দর সংলগ্ন হওয়ায় গুরুত্বটা আরও বেড়েছে। দীর্ঘ দিন থেকে লোকাল ট্রেনটি বন্ধ রাখায় এ এলাকার মানুষ বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন বলেও জানান তিনি। লালমনির হাট রেলওয়ের বিভাগীয় রেলওয়ে ব্যবস্থাপক শাহ সুফী নুর মোহাম্মদ বলেন, আমরা ওই রুটের লাইন পর্যবেক্ষণ করতেছি কিভাবে ট্রেনটি চালু করা যায়। তবে দ্রুত সময়ের মধ্যে রমনা ট্রেনটি চালু করা হবে বলে জানান এ কর্মকর্তা।
×