ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১০ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১

কবে হবে সড়ক নিরাপদ

প্রকাশিত: ১৯:৫৫, ২৪ অক্টোবর ২০২১

কবে হবে সড়ক নিরাপদ

শুক্রবার যথারীতি পালিত হলো নিরাপদ সড়ক দিবস। সেদিনই জনকণ্ঠের একটি প্রতিবেদনে দেশে সড়ক দুর্ঘটনায় একদিনে কমপক্ষে ১১ জনের নিহত হওয়ার সংবাদ ছিল। আরেকটি সংবাদে তুলে ধরা হয়েছে সড়ক দুর্ঘটনায় আর্থিক ক্ষতির খতিয়ান। শিরোনাম ছিল- ৯ মাসে ক্ষতি ২৯ হাজার ৭৮০ কোটি টাকা। জাতীয় নিরাপদ সড়ক দিবসের এক অনুষ্ঠানে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী নিজেই বলেছেন, ‘সড়কে মূল সঙ্কট শৃঙ্খলা। রাস্তায় এত উন্নয়ন কাজ হচ্ছে অথচ আমারা সড়কে শৃঙ্খলা ফিরাতে পারছি না। সড়কের শৃঙ্খলা ফিরাতে না পারলে সকল উন্নয়ন ব্যর্থ হয়ে যাবে।’ মন্ত্রীর বক্তব্য, একদিনে দুর্ঘটনার চিত্র এবং ক্ষয়ক্ষতির পরিসংখ্যান থেকেই সার্বিক পরিস্থিতি অনুমান করা যায়। নিরাপদ ও ভ্রমণবান্ধব সড়ক নেটওয়ার্ক গড়ে তোলা সরকারের অগ্রাধিকার। ইতোমধ্যে সড়ক পরিবহন আইন ২০১৮ কার্যকর করা হয়েছে। আন্তর্জাতিক এবং দেশীয় আইনগত কাঠামোর সঙ্গে সমন্বয় করে ন্যাশনাল রোড সেফটি স্ট্র্যাটেজিক এ্যাকশন প্ল্যান বাস্তবায়ন করছে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ। প্রতিপালন করা হচ্ছে সড়ক নিরাপত্তায় প্রধানমন্ত্রীর দেয়া নির্দেশনা। নিরাপদ সড়ক বিষয়ক মন্ত্রিসভা কমিটি, সড়ক পরিবহন উপদেষ্টা পরিষদ এবং জাতীয় সড়ক নিরাপত্তা কাউন্সিলের সভায় গৃহীত সিদ্ধান্তসমূহ বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। এছাড়া কাউন্সিল অনুমোদিত একশ’ এগারোটি সুপারিশ বাস্তবায়নে কাজ করছে একটি টাস্কফোর্স। বিভিন্ন সময় গঠিত কমিটির সুপারিশের আলোকে স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। তবুও ফিরছে সড়কের শৃঙ্খলা, কমছে না দুর্ঘটনা। বিশিষ্টজনদের অভিমত, বিচারহীনতার অপসংস্কৃতিই পথ দুর্ঘটনাকে জিইয়ে রাখতে নিয়ামকের ভূমিকা পালন করছে। সড়ক পরিবহন আইন বাস্তবায়নে তীক্ষ নজরদারি বাড়ানোও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দায়বদ্ধতা। এছাড়া দ্রুতগতি আর স্বল্পগতি যানের ভিন্ন মাত্রার সড়ক নির্মাণও অপরিহার্য। সড়কের পাশে ছোট লেন করে রিক্সা, সাইকেলসহ অন্যান্য কম গতিসম্পন্ন যান চলাচলের সুব্যবস্থা নিশ্চিত করাও অপরিহার্য। এছাড়া পথচারী, যাত্রী, এমনকি চালকদেরও সড়ক পরিবহন আইনকে যথাযথভাবে পালন করতে হবে। এক্ষেত্রেও কর্তৃপক্ষের কঠোর নজরদারি বাঞ্ছনীয়। একটু লক্ষ্য করলেই দেখা যাবে, সড়ক ব্যবস্থাপনার পাহাড় সমান দুর্বলতার বহর। স্বল্পগতির যানবাহনে ভরে গেছে রাজধানীসহ সারাদেশের জাতীয় সড়ক। এতে দ্রুত গতিসম্পন্ন বাহনের সঙ্গে সাংঘর্ষিক অবস্থা সৃষ্টি হচ্ছে। যাত্রীর সময় বিনষ্টসহ দুর্ঘটনা বাড়ছে। দ্রুত গতিসম্পন্ন বাহন চলছে বেপরোয়াভাবে। গতি নিয়ন্ত্রণের স্পিড ডিক্টেটর থাকলেও নেই প্রয়োগ। ভারি যানবাহন চালনার সনদ পাওয়া যায় অতি সহজে। চালকের যোগ্যতার বিষয়টি সেখানে তুচ্ছ। গোদের ওপর বিষফোঁড়া হয়ে দেখা দিয়েছে মাত্রাতিরিক্ত ভাড়া। মালিক-শ্রমিকের হাতে সাধারণ যাত্রী জিম্মি হয়ে প্রতিদিন হয়রানির শিকার হচ্ছেন। অবৈধ, অপরিণত, অযোগ্য চালকদের হাতে গণপরিবহনের চাবি তথা মানুষ মারার লাইসেন্স তুলে দেয় কারা? জেনে-বুঝেই এই কাজটি করে থাকে পরিবহন মালিক এবং এক শ্রেণীর দায়িত্বপ্রপ্ত দায়িত্বহীন অসাধু কর্মকর্তা। তাই যে কোন সড়ক দুর্ঘটনা, বলা ভাল সড়ক বিশৃঙ্খলা ও মানবহত্যার পেছনের মূল হোতা তারাই। অথচ এ জাতীয় ঘটনা ঘটলে শাস্তি পায় কেবল চালক। ওই দুই শ্রেণীর বিপজ্জনক ব্যক্তিরা নয়। সড়ক দুর্ঘটনা লক্ষণীয়ভাবে কমিয়ে আনতে হলে চাই সব পক্ষের সদিচ্ছা ও আইন মানায় আন্তরিকতা।
×