ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

আইন শৃঙ্খলা বাহিনী মোতায়েন না থাকায় ইলিশ বিক্রি চলছেই

মাদারীপুরে পদ্মার দুর্গম চরে মা ইলিশের রমরমা হাট-বাজার

প্রকাশিত: ১৮:২১, ২২ অক্টোবর ২০২১

মাদারীপুরে পদ্মার দুর্গম চরে মা ইলিশের রমরমা হাট-বাজার

নিজস্ব সংবাদদাতা, মাদারীপুর ॥ প্রতিনিয়ত প্রশাসন অভিযান চালিয়ে ইলিশ শিকারীদের জেল-জরিমানা অস্থায়ী বাজার উচ্ছেদ করলেও থামেনি ইলিশ শিকারীদের দৌরাত্ম। নদী ও চরগুলোতে স্থায়ীভাবে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী বা ক্যাম্প না থাকায় শিবচর, শরীয়তপুরের জাজিরা, মুন্সীগঞ্জের লৌহজং, ঢাকার দোহার, ফরিদপুরের সদরপুর অংশের পদ্মা নদী ও চরগুলোতে প্রকাশ্যেই বিক্রি হচ্ছে মা ইলিশসহ ছোট বড় ইলিশ। মাছ নদীর চরে রেখেই মুঠোফোনের মাধ্যমে এবং নদী পাড়ের প্রত্যন্ত বাজার বিক্রি হচ্ছে। ক্রেতারা নানা উপায়ে পৌছাচ্ছেন প্রত্যন্ত এসব এলাকায়। নদী পাড়ে বসেছে অস্থায়ী বা তাবু টানিয়ে হাট বাজার। সরেজমিন গিয়ে জানা যায়, মা ইলিশ সংরক্ষনে সরকারের নিধেধাজ্ঞাসহ বিশেষ অভিযান চলছে। ইলিশ নিধনে সরকারের নিষেধজ্ঞা বাস্তবায়নে অভিযানের শুরু থেকেই জেলার শিবচরের পদ্মা নদী ও সংলগ্ন চরগুলোতে প্রশাসনের ব্যাপক অভিযান চলছে। প্রশাসন অভিযান চালিয়ে কয়েকটি হাট বাজারের শতাধিক অস্থায়ী স্থাপনাও উচ্ছেদ করেছে। তবে নদী ও চরগুলোতে স্থায়ীভাবে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী বা প্রশাসন না থাকার সুযোগ পেয়েই জেলেরা নদীতে নেমে পড়ছে। মাদারীপুরের শিবচর, শরীয়তপুরের জাজিরা, মুন্সীগঞ্জের লৌহজং, ঢাকার দোহার, ফরিদপুরের সদরপুরসহ পদ্মা নদীর বিস্তীর্ন জলরাশি ও চরগুলোতে প্রশাসন চলে গেলেই শুরু হচ্ছে ইলিশ নিধনের মহোৎসব। ধরা পড়া মাছ গুলোর পেট ভরা ডিম। জাটকাও ধরা পড়ছে অজ¯্র। ভাটি অঞ্চলে কোস্টগার্ড, নেভি ও নৌ পুলিশ নদীতে সার্বক্ষনিক থাকায় উজানের এ অঞ্চলের নদীতে এখন ইলিশের ছড়াছড়ি হওয়ায় জেলেরা নিধন যজ্ঞে নেমেছে। চরের যে এলাকাগুলোতে সড়ক যোগাযোগ নেই সেখানেই বসছে বাজার। কাশবনগুলোতে গড়ে তোলা হয়েছে জেলেদের আবাসস্থল ও আড়ৎ। অনেকে ইলিশের স্বাদ নিতে আসছেন পিকনিকে। মা ও জাটকা ইলিশ সংরক্ষনে সরকার ঘোষিত ইলিশের ডিম ছাড়ার মৌশুমে নিধন বন্ধে সার্বক্ষনিক অভিযান ছাড়াও কোস্টগার্ড ও নেভি নদীতে স্থায়ীভাবে নিয়োগের দাবী ইলিশ প্রিয় সাধারণ মানুষের। চলতি অভিযানে শিবচরেই প্রায় ২ শ জেলেকে ১ বছর করে কারাদন্ড দিয়েছে ভ্রাম্যমান আদালত। জেলে সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় আমাদের শিবচরের প্রশাসন অনেক কড়াকড়ি থাকলেও মুন্সিগঞ্জ, জাজিরাসহ অন্য অঞ্চলে প্রশাসন ততটা কড়াকড়ি করে না। তাই আমরা ওইসব অঞ্চলে গিয়ে মাছ ধরে চরেই বিক্রি করি।’ নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ক্রেতা বলেন, ‘শুনেছি পদ্মার চর মাদবরচরের খাড়াকান্দি এলাকায় কম দামে ইলিশ মাছ পাওয়া যায়। তাই ট্রলারে চরে ভেঙ্গে ভেঙ্গে এই চরে এসে কিছু মাছ কিনলাম। তবে মাছের দাম বেশি মনে হচ্ছে।’ স্থানীয় বাসিন্দা আল আমিন শেখ বলেন, ‘মা ইলিশ রক্ষায় প্রশাসনের লোকজন নদীতে দিনে দুই বার নামমাত্র টহল দেয়। পাড়ে কেউ আসে না। চরগুলোতে অস্থায়ী বাজার বসিয়ে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত ইলিশের হাট বসে। নিষেধাজ্ঞার সময় নদীতে যদি স্থায়ীভাবে টহলের ব্যবস্থা করা হয় তাহলে মা ইলিশ নিধন বন্ধ করা সম্ভব।’ শিবচর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো: আসাদুজ্জামান বলেন, আমরা প্রতিনিয়ত দফায় দফায় পদ্মায় অভিযান পরিচালনা করছি। জেলেদের জেল জরিমানা করা হচ্ছে। চরগুলোতে অভিযান চালিয়ে শতাধিক ইলিশ বিক্রির স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়েছে। তবে মা ইলিশ রক্ষায় স্থায়ীভাবে নদী ও চরগুলোতে আইন শৃংখলা বাহিনী মোতায়েন করা প্রয়োজন।
×