ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ০৬ মে ২০২৪, ২২ বৈশাখ ১৪৩১

হিটস্ট্রোকে ট্রাফিক পরিদর্শকসহ ৪ মৃত্যু

ফের হিট অ্যালার্ট জারি

স্টাফ রিপোর্টার

প্রকাশিত: ০০:০০, ২৬ এপ্রিল ২০২৪

ফের হিট অ্যালার্ট জারি

প্রচণ্ড দাবদাহের কারণে বগুড়া শহরের পৌর ও নন্দিগ্রামের সিংজানি এলাকার পুকুর-জলাশয়গুলো পানিশূন্য হয়ে পড়ছে

নতুন করে তাপপ্রবাহের সতর্কবার্তা বা ‘হিট অ্যালার্ট’ জারি করেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। বৃহস্পতিবার থেকে আগামী ৭২ ঘণ্টা অব্যাহত থাকবে এই তাপপ্রবাহ। তবে এবার আগামী সপ্তাহের শুরুর দিকে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বৃষ্টির সম্ভাবনার কথা জানানো হয়েছে। অধিদপ্তর বলছে, দেশে চলমান তাপপ্রবাহের ব্যপ্তি বেড়েছে, অন্তত ৩৫ জেলার ওপর দিয়ে দাবদাহ বয়ে যাচ্ছে, যা আরও দুই-তিনদিন অব্যাহত থাকবে।

বৃহস্পতিবার দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে যশোরে ৪২ দশমিক চার ডিগ্রি সেলসিয়াস। রাজধানী ঢাকার তাপমাত্রা ছিল ৩৯ দশমিক এক ডিগ্রি। এদিন হিট স্টোকে ট্রাফিক পরিদর্শকসহ চারজনের মৃত্যু হয়েছে। 
ঢাকায় দাবদাহে সড়কে মানুষের চলাচল কমেছে। দুপুরে মিরপুরের অনেক গণপরিবহন যাত্রীর অভাবে সড়কে অলস পড়ে থাকতে দেখা গেছে। বৃহস্পতিবার সড়কে যান চলাচলও ছিল কম। নগরীর একাধিক ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, রবিবার থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়া হচ্ছে। এ কারণে প্রচণ্ড গরমে সড়কে চাপও বাড়বে। মোটরবাইক চালক রফিক মিয়া জনকণ্ঠকে বলেন, প্রচণ্ড গরমে ঢাকার রাজপথে মোটরসাইকেল চালানো কঠিন হয়ে পড়েছে।

সড়কের মাঝে গাছ না থাকায় কয়েক কিমি যেতে কষ্ট হয়। এ ছাড়াও রাস্তায় গাড়ির তাপ ও সিগন্যালে আটকে থাকতে হয়। বৃহস্পতিবার দুপুরে মিরপুরের টেকনিক্যাল সিগন্যালে দূরপাল্লার গণপরিবহনের লম্বা লাইন দেখা গেছে। ঈদপরবর্তী এ সময়ও এখানে ঢাকার বাইরের যাত্রী ওঠা-নামা করানো হচ্ছে। স্থানীয়রা জানায়, বড় গাড়ি ঘোরানোর কারণে এই সড়কে চাপ বেড়েছে। দীর্ঘক্ষণ সিগন্যালে প্রচ- গরমে চলাচলে সমস্যা হচ্ছে। 
এদিকে ঢাকার বাইরে চুয়াডাঙ্গায় টানা ২৪ দিন তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। সকালে তাপমাত্রা কম থাকলেও বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সূর্যের চোখ রাঙ্গানিও বৃদ্ধি পায়। প্রচ- দাবদাহে জেলার হাসপাতালগুলোতে রোগীদের ব্যাপক চাপ তৈরি হয়েছে। শরীয়তপুরে তাপপ্রবাহে সড়কের পিচ (বিটুমিন) উঠে গেছে। পাল্লা দিয়ে ঝুঁকি বাড়ছে যান চলাচলে। জেলার নিজস্ব সংবাদদাতা সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
আবহাওয়াবিদ বজলুর রশিদ জনকণ্ঠকে বলেন, আগামী মাসের শুরুতে মোটামুটি ভালোই বৃষ্টির সম্ভাবনা আছে। তিনি জানান, বৃষ্টিপাত পশ্চিমাঞ্চল থেকে শুরু হলে সেটি দ্রুত আবহাওয়া ঠান্ডা করতে শুরু করে, কিন্তু এবার বৃষ্টিপাত শুরু হতে পারে সিলেট ও চট্টগ্রাম অঞ্চল দিয়ে। এ ছাড়া ময়মনসিংহ, মৌলভীবাজার, রাঙ্গামাটি, চাঁদপুর, নোয়াখালী, ফেনী ও বান্দরবান জেলা এবং বরিশাল, রংপুর, রাজশাহী ও ঢাকা বিভাগের কিছু এলাকার ওপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের যে তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে তা অব্যাহত থাকতে পারে।
গত ২০ এপ্রিল দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪২ দশমিক ছয় ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছিল যশোরে। এটিই ছিল চলতি মৌসুমে সবচেয়ে বেশি সর্বোচ্চ তাপমাত্রা। ওই দিন দিনের তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায় ৪২ দশমিক চার ও পাবনার ঈশ্বরদীতে ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াস হয়েছিল। ঢাকায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৪০ দশমিক চার ডিগ্রি সেলসিয়াস। এরপর তাপমাত্রা কিছুটা কমে অতি তীব্র তাপপ্রবাহ দূর হলেও জনজীবনে স্বস্তি ফেরেনি। আবহাওয়াবিদরা জানিয়েছেন, আগামী কয়েকদিন বর্তমান অবস্থা থেকে তাপমাত্রা আর খুব বেশি বাড়বে না। তবে তাপপ্রবাহ পরিস্থিতি মে মাসের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে।
আবহাওয়া অধিদপ্তর জানায়, দেশের ওপর দিয়ে চলমান মৃদু থেকে তীব্র ধরনের তাপপ্রবাহ অব্যাহত থাকবে আরও কিছুদিন। জলীয় বাষ্পের আধিক্যের কারণে অস্বস্তি বাড়বে। আগামী তিনদিনে তাপমাত্রা এমনই থাকবে। তবে গরম খুব একটা কমার সম্ভাবনা নেই। তবে এবারের তাপপ্রবাহের পর একটু একটু করে বৃষ্টি শুরু হতে পারে বলে আশা করছেন আবহাওয়াবিদরা।
তাপমাত্রা ৩৬ থেকে ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসের কম হলে, সেটিকে মৃদু তাপপ্রবাহ বলে থাকেন আবহাওয়াবিদরা। এ ছাড়া তাপমাত্রা ৩৮ থেকে ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে হলে মাঝারি এবং ৪০ থেকে ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে হলে, সেটিকে তীব্র তাপপ্রবাহ বলা হয়ে থাকে। আর তাপমাত্রা যদি ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ওপরে উঠে যায়, তখন তাকে বলা হয় অতি তীব্র তাপপ্রবাহ।
২০২৩ সালকে বাংলাদেশের উষ্ণতম বছর হিসেবে বর্ণনা করেছিলেন আবহাওয়াবিদরা। ওই বছর একটানা তিন সপ্তাহ পর্যন্ত তাপপ্রবাহ চলার রেকর্ড হয়েছিল। ফলে এ নিয়ে পরপর দুই বছর প্রায় একই ধরনের দাবদাহের ভেতর দিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। এ বিষয়ে আবহাওয়াবিদ শাহানাজ সুলতানা বলেন, এ বছর খুলনা বিভাগ বিশেষ করে যশোর ও চুয়াডাঙ্গায় রেকর্ড তাপমাত্রা অব্যাহত ছিল।

বৃহস্পতিবারও খুলনা বিভাগের দুই জেলা যশোর ও চুয়াডাঙ্গাতে অতি তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে গেছে। বিভাগের অন্য জেলাতে অতি তীব্র না হলেও তাপপ্রবাহ ছিল। 
এদিকে আগামী ৭২ ঘণ্টার শেষের দিকে দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে বৃষ্টিপাতের প্রবণতা বাড়তে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অফিস। বৃহস্পতিবার সকাল ৯টায় দেওয়া বর্ধিত পাঁচদিনের আবহাওয়া বার্তায় এ তথ্য জানানো হয়। এতে বলা হয়েছে, তিনদিনের হিট অ্যালার্ট শেষে সামনের সপ্তাহের মাঝামাঝি সময়ে বৃষ্টিপাতের প্রবণতা বাড়তে পারে।

আগামী ২৪ ঘণ্টার আবহাওয়ার পূর্বাভাসে আবহাওয়াবিদ মো. শাহিনুল ইসলাম জানান, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের দু-এক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা বা ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে এবং সেই সঙ্গে কোথাও কোথাও বিক্ষিপ্তভাবে শিলা বৃষ্টি হতে পারে। এ ছাড়া দেশের অন্যত্র অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ আবহাওয়া শুষ্ক থাকতে পারে। এ সময়ে সারাদেশে দিন এবং রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে। জলীয় বাষ্পের আধিক্যের কারণে অস্বস্তিভাব বিরাজ থাকতে পারে বলেও জানান তিনি।
খুলনা বিভাগসহ দিনাজপুর, নীলফামারী, রাজশাহী, পাবনা, ফরিদপুর ও গোপালগঞ্জ জেলার ওপর দিয়ে তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। ময়মনসিংহ, মৌলভীবাজার, রাঙ্গামাটি, চাঁদপুর, নোয়াখালী, ফেনী ও বান্দরবান জেলাসহ বরিশাল বিভাগ এবং রংপুর, রাজশাহী ও ঢাকা বিভাগের অবশিষ্টাংশের ওপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে এবং তা অব্যাহত থাকতে পারে।
হিট স্ট্রোকে ৪ মৃত্যু ॥ নিজস্ব সংবাদদাতা চাঁপাইনবাবগঞ্জ জানান, চাঁপাইনবাবগঞ্জের সোনামসজিদ স্থলবন্দরে প্রচ- তাপপ্রবাহের মধ্যে দায়িত্ব পালনের সময় হিট স্ট্রোকে রুহুল আমিন (৪২) নামে এক ট্রাফিক পরিদর্শকের মৃত্যু হয়েছে। বৃহস্পতিবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে স্থলবন্দরের পানামা পোর্টে এই ঘটনা ঘটে। ট্রাফিক পরিদর্শকের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করে শিবগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক আল-আকসা মহল জানান, মৃত অবস্থায় রুহুল আমিনকে হাসপাতালে আনা হয়। পরবর্তীতে শরীর পরীক্ষা করে দেখা গেছে তিনি স্ট্রোকজনিত কারণে মারা গেছেন। রুহুল আমিন বাংলাদেশ স্থলবন্দরের অধীনে সোনামসজিদ স্থলবন্দরে ট্রাফিক পরিদর্শক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। তিনি যশোরের শার্শা উপজেলার কোরবান আলীর ছেলে। পানামা পোর্ট লিঙ্ক লিমিটেডের সিনিয়র ম্যানেজার টিপু সুলতান জানান, রুহুল আমিন সকাল থেকেই বন্দরে দায়িত্ব পালন করছিলেন। দুপুরে জিরো পয়েন্ট থেকে এসে পানি চান। পানি চাওয়া মাত্রই তিনি অজ্ঞান হয়ে পড়েন।

তিনি আরও জানান, ‘রুহুল আমিনকে বন্দরের গাড়িতেই হাসপাতালে পাঠানো হয়। প্রচ- গরমের কারণেই তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। সহকর্মীরা দ্রুত উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
নিজস্ব সংবাদদাতা হবিগঞ্জ জানান, তীব্র গরমে হবিগঞ্জ জেলায় তিন দিনমজুরের মৃত্যু হয়েছে। জেলার মাধবপুর ও লাখাই উপজেলার বাসিন্দা তারা। গত তিনদিনে হিট স্ট্রোকে তাদের মৃত্যু হয়। বৃহস্পতিবার সকালে পুলিশ ও স্থানীয় বিভিন্ন সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছে। মৃতরা হলেনÑ জেলার মাধবপুর উপজেলায় তালেবপুর গ্রামের সাঈম উদ্দিনের ছেলে রায়হান উদ্দিন (২২), একই উপজেলার কুলাইচর গ্রামের ফেরদৌস মিয়া (৫৫) ও লাখাই উপজেলার সিংহগ্রামের মৃত আজম আলীর ছেলে আওয়াল মিয়া (৪৫)।

×