ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

উন্নত দেশের পথে বাংলাদেশ

প্রকাশিত: ২২:৪২, ১৮ অক্টোবর ২০২১

উন্নত দেশের পথে বাংলাদেশ

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) পূর্বাভাস দিয়ে বলেছে, চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরে বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) প্রবৃদ্ধির হার বেড়ে দাঁড়াবে ৬ দশমিক ৫ শতাংশে যা প্রতিবেশী দেশ ভারতকে ছাড়িয়ে যাবে। গত ১২ অক্টোবর/২০২১ তারিখে প্রকাশিত আইএমএফের ‘ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক আউটলুক’ প্রতিবেদনে এই পূর্বাভাস দেয়া হয়। বিশ্বব্যাংক কিছু দিন আগে বলেছিল, চলতি অর্থবছরে বাংলাদেশের জিডিপির প্রবৃদ্ধির হার চলতি অর্থবছরে ৬ দশমিক ৪ শতাংশ হবে। বহুজাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠান স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক বলেছে, চলতি অর্থবছরে প্রবৃদ্ধির হার বেড়ে ৭ দশমিক ২ শতাংশ হবে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস)-এর পরিসংখ্যান অনুযায়ী গত অর্থবছরে প্রবৃদ্ধির হার হয়েছিল ৫ দশমিক ৪৭ শতাংশ। অর্থাৎ, জিডিপির প্রবৃদ্ধি বেশ উর্ধমুখী। পাশাপাশি সামাজিক খাতের উন্নয়নেও বাংলাদেশ প্রতিবেশী ভারত-পাকিস্তানকে ছড়িয়ে গেছে। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক চাকা আবার উন্নয়নের দিকে ঘুরছে। করোনার দ্বিতীয় ধাক্কা সামলে নেয়ার পর দেশের সার্বিক অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। মাথা পিছু আয়, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ, রাজস্ব খাতে প্রবৃদ্ধি, রফতানির আয়সহ অর্থনৈতিক প্রতিটি খাত ইতিবাচক ধারায় এগিয়ে চলেছে। প্রতিটি খাতের সূচক এখন উর্ধমুখী। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) বলেছে, গত অর্থবছরে (২০২০-২১) মাথা পিছু আয় প্রতিবেশী ভারতকে ছাড়িয়ে দুই হাজার ২২৭ ডলারে পৌঁছায় যা একই সময়ে ভারতের ছিল এক হাজার ৯৪৭ ডলার। করোনা মহামারীর মধ্যেও রাজস্ব আয়ের ক্ষেত্রে তেমন একটা নেতিবাচক প্রভাব পড়েনি। গত অর্থবছরে রাজস্ব আদায় হয়েছে ২ লাখ ৬০ হাজার কোটি টাকা (প্রবৃদ্ধি ২০ শতাংশ), যা গত একদশকের মধ্যে সর্বোচ্চ। সর্বাধিক আয় এসেছে মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) থেকে, ৯৭ হাজার ৫০৭ কোটি টাকা। ২০১৯-২০ অর্থবছরে মোট আয় হয়েছিল ২ লাখ ১৬ হাজার ৪৫১ কোটি টাকা। উল্লেখ্য, দেশে কাক্সিক্ষত অনুযায়ী রাজস্ব না হওয়ার কারণ হলো সক্ষম ব্যক্তিদের রাজস্ব না দেয়ার প্রবণতা। বেসরকারী গবেষণা সংস্থা সিপিডির এক জরিপে বলা হয়, এখনও রাজস্ব প্রদানে সক্ষম ব্যক্তি রাজস্ব দিচ্ছে না। ২০১৯ সালে জাতিসংঘের বাণিজ্য ও উন্নয়ন সংস্থা আঙ্কটাডের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, বাংলাদেশ বছরে যত টাকা রাজস্ব আদায় হয়, তার ৩৬ ভাগ বিদেশে পাচার হয়ে যায়। বর্তমানে করদাতাদের কর প্রদান অনেক সহজ করা হয়েছে। এখন অনলাইনে ঘরে বসেই কর দেয়া যায়। করদাতাদের কর প্রদানে উৎসাহিত করার লক্ষ্যে আয়কর মেলা, বৈশাখী মেলাসহ নানা উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। অবশ্য রাজস্ব আদায়ে অনেকটাই গতি ফিরে এসেছে। প্রতি বছরই আদায়ের পরিমাণ বাড়ছে। ২০০৮-০৯ অর্থবছরে রাজস্ব আদায়ের প্রবৃদ্ধি ছিল ৯ দশমিক ২ শতাংশ। গত ২০২০-২১ অর্থবছরে তা বেড়ে ১১ দশমিক ৯ শতাংশে বৃদ্ধি পায়। উল্লিখিত সময়ের মধ্যে টাকার অঙ্কে রাজস্ব আদায় সাড়ে ৬৪ হাজার কোটি টাকা থেকে বেড়ে ৩ লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকায় দাঁড়ায়। কোভিড-১৯ এর প্রথম ধাক্কায় গোটা বিশ্বের অর্থনীতিকে এলোমেলো করে দিলেও বাংলাদেশ দক্ষতার সঙ্গে করোনা মোকাবেলা করে অর্থনৈতিক গতি অনেকটাই স্বাভাবিক রাখতে সক্ষম হয়। আবার দ্বিতীয় ঢেউও দক্ষতার সঙ্গে সামাল দিয়ে অর্থনীতির চাকা গতিশীল রাখতে সক্ষম হয় সরকার। আর্থ-সামাজিক খাতে কিছুটা ভাটা পড়লেও আবার দেশের অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে। এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) সম্প্রতি তাদের প্রকাশিত এক পরিসংখ্যানে উল্লেখ করে যে, ‘করোনা ভাইরাস সংক্রাণের দ্বিতীয় ঢেউয়ের মধ্যেও বাংলাদেশের অর্থনীতি পুনরুদ্ধার হচ্ছে।’ ম্যানিলা থেকে প্রকাশিত ‘এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট আউটলুক (এডিও) সাপ্লিমেন্ট’ প্রতিবেদনে এশিয়ার অর্থনীতির ২০২১-২২ সালের পূর্বাভাস দিয়ে এডিবি আরও বলেছে, বাংলাদেশ, ভারতসহ কয়েকটি দেশে নতুন করে করোনা সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় এডিবি অবশ্য ২০২১ সালে এশিয়ার অর্থনীতিতে প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস আগের চেয়ে কিছুটা কমিয়েছে। বর্তমান সরকারের দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা, এমডিজি অর্জন, এসডিজি বাস্তবায়নসহ শিক্ষা, স্বাস্থ্য, লিঙ্গসমতা, কৃষি, দারিদ্র্যসীমা হ্রাস, গড় আয়ু বৃদ্ধি, রফতানিমুখী শিল্পায়ন, শতাধিক বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ উৎক্ষেপণ, শিল্প খাতে প্রবৃদ্ধি অর্জন দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলছে। আশঙ্কা করা হয়েছিল যে, করোনা পরিস্থিতে দেশের বহু মানুষ মারা যেতে পারে না খেয়ে। বর্তমান সরকারের দূরদর্শিতা ও সময়োপযোগী পদক্ষেপের ফলে দেশের কোন মানুষ অনাহারে মারা যায়নি। সরকার একদিকে করোনা সামলে নিয়ে অর্থনৈতিক চাকা সচল রাখতে পেরেছে, অপরদিকে করোনা মহামারীর গণমহামারীর কবল থেকে দেশের জনগণকে রক্ষা করতে পেরেছে। সব মিলিয়ে দেশের সার্বিক পরিস্থিতি ইতিবাচক ধারায় চলেছে। করোনার প্রথম ধাক্কা যেমন সামলে নিয়ে অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে সক্ষম হয়েছিল, দ্বিতীয় ধাক্কাও সামলে নিয়ে অর্থনৈতিক গতি স্বাভাবিক রাখতে সক্ষম হয়েছে। বর্তমান সরকার স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ে তুলতে ২০৪১ সালকে বিশেষ বিবেচনায় নিয়েছে। ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তোলার লক্ষ্য নিয়ে দীর্ঘমেয়াদী উন্নয়ন পরিকল্পনা ‘রূপকল্প -২০৪১’ নির্ধারণ করা হয়। ২০৪১ সালে বাংলাদেশ হবে একটি উন্নত দেশ। তখন মাথাপিছু আয় দাঁড়াবে সাড়ে ১২ হাজার ডলারের বেশি। সেই লক্ষ্য অর্জনে আগামী দুই দশকে কৃষি, শিল্প. বাণিজ্য, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসহ অন্যান্য খাতে ব্যাপক পরিবর্তন আসবে। একই সময়ে জিডিপির প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৯ দশমিক ২ শতাংশ। ‘রূপকল্প-২০৪১’ একটি উচ্চ আয়ের অর্থনীতিতে দেশকে উন্নীত করা। বাংলাদেশ সাম্প্রতিক সময়ে যেভাবে দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে, সে ধারা অব্যাহত থাকলে ২০৪১ সালের মধ্যে ‘রূপকল্প-২০৪১’ লক্ষ্যমাত্রা পূরণ অসম্ভব কিছু নয়। বর্তমান সরকার দেশকে যেভাবে আর্থ-সামাজিকভাবে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে, তাতে আগামী দিনে বাংলাদেশ হবে বিশ্বের একটি উন্নত দেশ, এতে কোন সন্দেহ নেই। লেখক : বীর মুক্তিযোদ্ধা, সাবেক কর কমিশনার ও পরিচালক : বাংলাদেশ স্যাটেলাইট কোম্পানি লিমিটেড
×