ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

বাঙালীর নেতা শেখ মুজিব

প্রকাশিত: ২০:৫৭, ২২ জুন ২০২১

বাঙালীর নেতা শেখ মুজিব

‘মোর নাম এই বলে খ্যাত হোক, আমি তোমাদেরই লোক’। বিশ্ব কবির এই ঐকান্তিক ইচ্ছার পরিপূর্ণ বাস্তবায়ন দেখতে পাই একটি জীবনে- যাঁর নাম শেখ মুজিবুর রহমান। তিনি বাঙালীর জাতির পিতা; আমাদের মুক্তির মহানায়ক। বাংলাদেশের আবালবৃদ্ধবনিতার অতি আপনজন মুজিব ভাই। তিনি হাজার বছরের বাঙালীর ইতিহাসে নক্ষত্রের অক্ষরে রচিত একটি নাম, যা আপন আলোতেই ভাস্বর হয়ে থাকবে চিরদিন, চিরকাল। তাই তো স্বাধীনতার অপর নাম শেখ মুজিবুর রহমান। মিছিলের ¯েøাগানের মতোই ধ্বনিত হয়, ‘মুজিব আমার চেতনা, মুজিব আমার বিশ্বাস’। বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের পর যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশে এসেছিলেন বিখ্যাত সাংবাদিক ডেভিড ফ্রস্ট। স্বাধীন দেশের যুদ্ধজয়ী বীর শেখ মুজিবের সাক্ষাতকার নিয়ে ছিলেন ফ্রস্ট। মুজিব তখন বিশ্বজুড়ে নিপীড়িত মানুষের নেতা- একটি ব্র্যান্ড। বিশ্বনেতা মুজিবের সাক্ষাতকার নেয়ার সময় ফ্রস্টের প্রথম প্রশ্নই ছিল, ২৫ মার্চ আপনি কেন গ্রেফতার হলেন? উত্তরে বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, ‘আমি মরি, তবু আমার দেশবাসী রক্ষা পাবে। আমি নেতা, প্রয়োজনে মৃত্যুকে আলিঙ্গন করব, কিন্তু পালিয়ে যাব কেন?’ ডেভিড ফ্রস্টের অনেক প্রশ্নের উত্তরে ঘুরেফিরেই ছিল বাঙালীর প্রতি বঙ্গবন্ধুর গভীর ভালবাসা মমত্ববোধের কথা। ফ্রস্ট বঙ্গবন্ধুর যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন করলে জাতির পিতা বলেছিলেন, ‘আমি বাঙালীকে ভালবাসি’। বড় অযোগ্যতা কোন্টা জানতে চাইলে বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, ‘আমি বাঙালীকে বেশি ভালবাসি। জনতার প্রতিই আমার প্রথম ভালবাসা। আমি তো জানি, আমি অমর নই।’ বঙ্গবন্ধুর মতো বাঙালীকে এতটা ভালবাসতে পেরেছে কে? যে কারণেই বাঙালীর সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর সম্পৃক্তির কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল ভালবাসা, অক্ষয় ভালবাসা। যে ভালবাসার জন্য তিনি জীবনের মায়া ত্যাগ করে জেল খেটেছেন। হাসিমুখে ফাঁসির মঞ্চে যেতে প্রস্তুত ছিলেন। কিন্তু বাঙালীর স্বাধীনতার প্রশ্নে কখনই আপোস করেননি। বাংলাদেশের সকল প্রান্তে জনসাধারণের হৃদয়ে সর্বদা ধ্বনিত হয়- আমরা তোমার, তুমি আমাদের। হঠাৎ ক্ষমতার পালাবদলে বাঙালীর নেতা হননি শেখ মুজিব। শোষিত বাঙালীর মুক্তির ভরসাস্থল হিসেবে নিজেকে গড়ে তুলেছেন। সংগ্রাম থেকে স্বাধীনতার প্রতিটি সোপানে নেতৃত্ব দিয়েছেন। আত্মত্যাগ এবং ব্যক্তিগত স্বার্থের উর্ধে নিজেকে প্রস্তুত করেছেন। এ কারণেই তিনি সাতই মার্চ রেসকোর্সের জনসমুদ্রে বলতে পেরেছিলেন, ‘আমি প্রধানমন্ত্রিত্ব চাই না, আমি এ দেশের মানুষের অধিকার চাই’। বঙ্গবন্ধু আওয়ামী লীগ নামের গণমানুষের দলের নেতা হয়েছিলেন। বাঙালীর একক নেতা হিসেবে আমাদের হৃদয়ে স্থান করে নিয়েছিলেন। বিশ্বাসের জায়গা তৈরি করে একটি নিরস্ত্র জাতিকে সশস্ত্র জাতিতে পরিণত করেছিলেন। ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ রেসকোর্সের ময়দানে ঐতিহাসিক ভাষণে বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম; এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম’। সাড়ে সাত কোটি বাঙালীর প্রতি বঙ্গবন্ধুর আস্থা ছিল বলেই তিনি স্বাধীনতার ঘোষণা দিতে পেরেছিলেন। রেসকোর্সের ময়দানে বঙ্গবন্ধু আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে প্রত্যেক গ্রামে, প্রত্যেক মহল্লায় সংগ্রাম পরিষদ গড়ে তোলার আহŸান জানিয়েছিলেন। আমাদের যা কিছু আছে, তা-ই নিয়ে প্রস্তুত থাকতে বলেছিলেন। এ কারণে প্রিয় নেতা শেখ মুজিবের নির্দেশ মেনে ফার্মগেট এলাকায় আমরা প্রতিরোধের ব্যারিকেড তৈরি করেছিলাম। ২৫ মার্চ আমরা স্বাধীন বাংলা কেন্দ্রীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের নেতাদের নির্দেশে ফার্মগেটে কড়ই গাছ কেটে, পুরনো ভাঙ্গা গাড়ি, ইট-সুরকি দিয়ে বড় ব্যারিকেড তৈরি করেছিলাম। ভয়াল সেই কালরাতে নিরস্ত্র বাঙালীদের হত্যা করতেই অপারেশন সার্চলাইটের নীলনক্সা চ‚ড়ান্ত হয়। এই অপারেশনের প্রধান টার্গেট ছিল আন্দোলনরত আওয়ামী লীগ এবং ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীকে গ্রেফতার করতে হিংস্রবল প্রয়োগ করা। অস্ত্রের ভাষায় পাকিস্তানী সামরিক শাসকরা পূর্ব পাকিস্তানকে নিয়ন্ত্রণে আনতে চেয়েছিল। যে কারণে ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাত সাড়ে ১১টায় ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট থেকে বের হওয়া অসংখ্য সাঁজোয়া যানের গন্তব্য ছিল রাজারবাগ পুলিশ লাইনস, ধানমণ্ডিতে বঙ্গবন্ধুর বাসভবন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস ও পিলখানা ইপিআর সদর দফতর। কিছুক্ষণের মধ্যেই ফার্মগেটের সামনে এসে বাঙালীর ব্যারিকেডের মুখে পাকিস্তানী সেনারা নির্বিচারে গুলিবর্ষণ করতে থাকে। মুক্তিযুদ্ধের প্রতিরোধের প্রথম ব্যারিকেড গুঁড়িয়ে দিয়ে আধুনিক সমরাস্ত্রে সজ্জিত পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ঘাতকরা সামনের দিকে চলে যায়। বঙ্গবন্ধুর নির্দেশ মেনেই আমরা ফার্মগেটে মুক্তিযুদ্ধের প্রথম প্রতিরোধ তৈরি করতে পেরেছিলাম। সে রাতে রচিত হয়েছিল পৃথিবীর ইতিহাসের জঘন্যতম গণহত্যা। মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় আমাদের প্রেরণার শক্তির উৎস ছিলেন আমাদের নেতা শেখ মুজিব। তাঁর নেতৃত্বেই আমরা স্বাধীনতা পেয়েছি। বঙ্গবন্ধুর রাজনীতির অপর নাম জনগণকে ভালবাসা। নিঃস্বার্থ ভালবাসার অমৃতধারায় সঞ্জীবিত এক প্রাণশক্তি। যিনি ফাঁসির মঞ্চে গিয়েও বলতে দ্বিধা করেননি, ‘আমি বাঙালী, আমি মানুষ, আমি মুসলমান। মানুষ একবার মরে, দুইবার মরে না। আমি বলেছিলাম, তোমরা আমাকে মেরে ফেললেও আমার আপত্তি নেই। শুধু মৃত্যুর পর আমার লাশটা আমার বাঙালীর কাছে ফিরে দিও।’ রাজনীতির মহাকবি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্ম হয়েছিল ১৯২০ সালের ১৭ মার্চ। গোপালগঞ্জে বাইগার নদীর তীর ঘেঁষে ছবির মতো সাজানো গ্রাম টুঙ্গিপাড়ায়। বাবা শেখ লুৎফর রহমান ও মা সায়েরা খাতুনের আদরের তৃতীয় সন্তান ‘খোকা’। গিমাডাঙ্গা-টুঙ্গিপাড়া স্কুলে হাতেখড়ি। কিশোর বয়সেই খোকা হয়ে ওঠেন প্রতিবাদী কিশোর। অন্যায়ের বিরুদ্ধে সাহসী। একবার বাংলার মুখ্যমন্ত্রী শেরেবাংলা এ কে ফজলুল হক এবং মন্ত্রী হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী গোপালগঞ্জে সফরে যান এবং মিশনারি স্কুল পরিদর্শন করেন। সেই সময় সাহসী কিশোর মুজিব তাঁদের কাছে স্কুল ঘরে বর্ষার পানি পড়ার বিষয়টি তুলে ধরে মেরামত করিয়ে নেয়ার অঙ্গীকার আদায় করেন। তখনই সবার নজরে আসে খোকা। সবাই বলতে শুরু করে- এই ছেলে একদিন অনেক বিখ্যাত হবে। পরবর্তীকালে এই খোকাই হয়ে ওঠেন বাঙালীর সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মহানায়ক জাতির পিতা। যার নেতৃত্বে আমরা পেয়েছি বহু কাক্সিক্ষত স্বাধীনতা। পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পরই শেখ মুজিব বুঝতে পারলেন, বাঙালী জাতির প্রকৃত স্বাধীনতা অর্জিত হয়নি। সংকল্প করলেন লড়াই চালিয়ে যাওয়ার। প্রতিষ্ঠা করেন পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগ। প্রথম প্রতিবাদ করেন রাষ্ট্রভাষা বাংলার প্রশ্নে। যখন পাকিস্তানের প্রতিষ্ঠাতা মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ একমাত্র উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে চাপিয়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেন, তখন ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের লড়াকু ছাত্রনেতা শেখ মুজিবসহ উপস্থিত ছাত্ররা ‘নো’ ‘নো’ বলে স্হোগান দেন। ১৯৪৮ সালের ১১ মার্চ মাতৃভাষা বাংলার দাবিতে ছাত্র ধর্মঘট করতে গিয়ে গ্রেফতার হলেন শেখ মুজিব। কিন্তু কয়েকদিন পর পাকিস্তান সরকার তাঁকে মুক্তি দিতে বাধ্য হয়। এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারীদের অধিকার আদায়ে মিছিল করে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রত্ব হারান শেখ মুজিব। তাঁকে আবারও জেলে নেয়া হয়। কিন্তু তিনি অন্যায়ের কাছে মাথা নত করেননি কোনদিন। জেলে থাকতেই বাঙালীর অধিকার আদায়ে রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হন শেখ মুজিবুর রহমান। জেল থেকে বের হয়ে তিনি আওয়ামী লীগকে গ্রামে-গঞ্জে ছড়িয়ে দেন। অল্প কিছুদিনের মধ্যে গোটা পূর্ব পাকিস্তান চষে বেড়িয়েছেন, মানুষের সঙ্গে মিশেছেন। বাঙালীর মনোভাব বোঝার চেষ্টা করেছেন। নেতা-কর্মীদের খোঁজ রাখা, কর্মী সংগ্রহ, যাচাই-বাছাই করা এবং প্রতিক‚ল পরিস্থিতিতে সরকারবিরোধী সংগঠন আওয়ামী লীগকে তৃণমূল পর্যন্ত সংগঠিত করেছিলেন। প্রচণ্ড ধীশক্তির অধিকারী নেতা শেখ মুজিব কর্মীদের নাম মনে রাখতেন। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত ত্যাগী নেতা-কর্মীদের মূল্যায়ন করেছেন। আমাদের নেতা শেখ মুজিব শুধু বাঙালীর অধিকার আদায়ের জন্য বিভিন্ন মেয়াদে ৩০৫৩ দিন জেল খেটেছেন। জনগণের কাছে বন্ধু, জাতির কাছে পিতা। আর পরিবারের কাছে? ঘরের থেকে যিনি বেশি থাকেন জেলখানায়, পরিবারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার তাঁর সুযোগ মিলেছে কম। এমনকি বড় মেয়ের বিয়েটাও নিজে উপস্থিত থেকে দিতে পারেননি বাবা হয়ে। যদিও তাঁর হয়ে নীরবে কিন্তু শক্ত হাতে সংসার সামলেছেন যোগ্য সহধর্মিণী বেগম ফজিলাতুননেছা মুজিব। যাঁর ওপর ন্যস্ত ছিল পরিবারের সবাইকে দেখে রাখার দায়িত্ব। এমনকি আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের কাছে বিপদের আশ্রয়স্থল ছিলেন বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুননেছা মুজিব। তিনি সংসার চালানোর পাশাপাশি কারাবন্দী স্বামীর কাছ থেকে তথ্য নিয়ে গোপনে নেতা-কর্মীদের কাছে পৌঁছে দিতেন। সংসারের খরচের টাকা রাজনৈতিক নেতা-কর্মীদের হাতে দিতে অভ্যস্ত ছিলেন বেগম মুজিব। বাসার ফ্রিজ বিক্রি করে দিয়েও সংসারের খরচ চালিয়েছেন। বঙ্গবন্ধুর অনুপস্থিতিতে নানাভাবে আওয়ামী লীগ পরিচালনায় বঙ্গমাতা অবদান রাখতেন। রেণু থেকে বঙ্গমাতা হয়ে ওঠা সহজ ছিল না। তিনি বঙ্গবন্ধুকে সাহস জোগাতে বার বার ছুটে যেতেন জেলখানায় আবার তাঁকে লেখা লম্বা চিঠিতে লুকাতেন এক হাতে সংসার সামলানোর যাতনা। এই বঙ্গমাতাকে পাশে পেয়েছিলেন বলেই ‘বঙ্গবন্ধু’ হতে পেরেছেন বাংলার অবিসংবাদিত শ্রেষ্ঠ পুরুষ। ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ রেসকোর্স ময়দানের জনসমুদ্রে যাওয়ার আগে বঙ্গবন্ধুকে দলীয় নেতারা অনেক পরামর্শ দিয়েছিলেন। শুধু ব্যতিক্রম ছিলেন বেগম মুজিব। তিনি বঙ্গবন্ধুকে কারও পরামর্শ না শুনে নিজের মনের কথাই পৃথিবীর ইতিহাসের অন্যতম বিখ্যাত ভাষণে বলার অনুরোধ করেন। বঙ্গবন্ধু এতদিন যে স্বপ্ন দেখেছেন, সেই হৃদয়ের কথাগুলো শুনতে বাঙালী ব্যাকুল হয়ে আছে- বঙ্গমাতার কয়েকটি সহজ কথা মেনেই বঙ্গবন্ধু দিতে পেরেছিলেন স্বাধীনতার ঘোষণা। রচিত হয়েছিল ইতিহাস। একজন বড় মাপের মানবতাবাদী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, বিশ্বের একজন শ্রেষ্ঠ রাজনীতিবিদ ও রাষ্ট্রনায়ক। একটি সফল অসহযোগ আন্দোলন তিনি পরিচালনা করেছেন। সামরিক জান্তার উসকানি, হত্যা, রক্তপাত এবং অবাঙালীদের দিয়ে বিভিন্ন স্থানে দাঙ্গা-হাঙ্গামা সৃষ্টি সত্তে¡ও তিনি শান্তিপূর্ণ আন্দোলন থেকে সরে আসেননি। দেশ স্বাধীন হওয়ার আগেই সামরিক বাহিনীর সশস্ত্র অবস্থানের মধ্যে বেসামরিক প্রশাসন পরিচালনা করেছেন। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর মাত্র তিন মাসের মধ্যে বাংলাদেশের ভ‚খণ্ড থেকে ভারতীয় সৈন্য প্রত্যাহার করা হয়েছিল বঙ্গবন্ধুরই দূরদর্শী ও সাহসী নেতৃত্বের কল্যাণে। তাঁর ব্যক্তিত্ব এবং দক্ষতায় ভারতের প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতী ইন্দিরা গান্ধী যুদ্ধজয়ের তিন মাসের মধ্যেই বাংলাদেশ থেকে সব ভারতীয় সৈন্য নিজ দেশে ফিরিয়ে নেন। পঁচাত্তরের পনেরো আগস্ট যখন ভোর হচ্ছিল, বাঙালী তখনও বোঝেনি, কী ভয়ঙ্কর অমানিশায় নিপতিত হচ্ছে গোটা জাতি। নিজ বাসভবনে সেনাবাহিনীর একদল পথভ্রষ্ট উচ্চাভিলাষী কর্মকর্তার হাতে সপরিবারে নিহত হয়েছেন হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালী। তাঁর বিদায়ে মুখ থুবড়ে পড়ে বাংলার চেতনা, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা। প্রশাসন থেকে রাজনীতিতে। নিজের রক্তে, স্বজন-বান্ধবের রক্তে রাঙা যে বাংলাদেশ বঙ্গবন্ধু পরের প্রজন্মের জন্য গড়ছিলেন, তা কলুষিত হলো ষড়যন্ত্র, ক্যু আর বিভ্রান্ত রাজনীতিতে। যারা ছিলেন মুক্তিযুদ্ধের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সৈনিক, যারা বিশ^াস করতেন অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশে, তাদের জন্যও শুরু হয় অন্ধকার সময়। আর সদম্ভে ঘুরতে থাকে মুক্তিযুদ্ধের বিরোধী অপশক্তিরা। তবে আদর্শ কখনও মরে না। শোকাতুর বাঙালীর হৃদয়ে অনেক রক্তক্ষরণের পর জাতির পিতার আদর্শের প্রেরণায় আবারও জেগে ওঠে বাংলাদেশ। পিতার দেখানো পথে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা ১৯৮১ সালে আওয়ামী লীগ সভাপতির দায়িত্ব গ্রহণের পর পিতার মতোই গ্রাম-গঞ্জ-শহর এবং পুরো বাংলাদেশ ঘুরে বেড়িয়েছেন। মানুষের কষ্ট-দুঃখের কথা শুনেছেন। বাংলার মানুষ তখন মুজিবকন্যাকে পেয়ে স্বস্তির নিঃশ^াস ফেলেছে। পঁচাত্তর-পরবর্তী ভঙ্গুর আওয়ামী লীগের তৃণমূল সুসংগঠিত করেছেন। পিতা মুজিবের মতোই কন্যা হাসিনা বাঙালীকে বোঝার চেষ্টা করেছেন। তাই এ দেশের মানুষ দীর্ঘ ২১ বছর পর আওয়ামী লীগকে রাষ্ট্র ক্ষমতায় নিয়ে আসে। বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার বিচার কাজ শুরু হয়। ঘুরে দাঁড়ায় বাংলাদেশ। এরপর আবার শুরু হয় ষড়যন্ত্র। বিএনপি-জামায়াতের দুঃশাসনের পর ওয়ান-ইলেভেনের সামরিক শাসকগোষ্ঠীর রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে গণতন্ত্রকে পুনরুদ্ধার করেন বঙ্গবন্ধুকন্যা এবং বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তাঁকে যোগ্য সাহচর্য দিয়ে যাচ্ছেন বঙ্গবন্ধুর কনিষ্ঠ কন্যা শেখ রেহানা। বঙ্গবন্ধু একটি জাতির রূপকার। স্বাধীন বাংলাদেশ আর বঙ্গবন্ধু- এই দুটি নাম তাই অভিন্ন। আমরা সৌভাগ্যবান এ কারণে যে শেখ মুজিবের কর্মী ছিলাম। আরও সৌভাগ্যবান; কারণ, আমরা বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার কর্মী হিসেবে কাজ করে যাচ্ছি। আমাকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেয়ার পর প্রধানমন্ত্রী সমগ্র বাংলাদেশ ঘুরে ঘুরে মানুষের সমস্যা উপলব্ধি এবং খোঁজ-খবর নেয়ার জন্য উপদেশ দিয়েছিলেন। সেই উপদেশ অক্ষরে অক্ষরে বাস্তবায়ন করে যাচ্ছি। গত এক যুগে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে উন্নয়নের সকল সূচকে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা করোনাভাইরাসের মহামারীর সময় নিঃস্বার্থভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। আমাদের নেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বিশ্বে বাংলাদেশ এখন উন্নয়নের রোল মডেল। মাথাপিছু আয় এবং জিডিপিতে আমরা ভারত-পাকিস্তানকে ছাড়িয়ে গেছি। স্বপ্নের পদ্মা সেতু এখন বাস্তবতা। বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে দুর্বার গতিতে। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা বাস্তবায়ন হবেই, হবে। লেখক : সংসদ সদস্য ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী
×