ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

ভুটানের সঙ্গে বাণিজ্য বাড়বে

প্রকাশিত: ২০:৪৭, ২২ জুন ২০২১

ভুটানের সঙ্গে বাণিজ্য বাড়বে

বাংলাদেশের সঙ্গে ভুটানের প্রথম অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য চুক্তি (পিটিএ) স্বাক্ষর হওয়ার বিষয়টি নিঃসন্দেহে ইতিবাচক এবং তা দুই দেশের জন্যই। গত বছর বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে থিম্পুতে অবস্থানরত ভুটানের প্রধানমন্ত্রী লোটে শেরিংয়ের উপস্থিতিতে ভার্চুয়াল মাধ্যমে দুই দেশের বাণিজ্যমন্ত্রীর মধ্যে স্বাক্ষরিত হয় চুক্তিটি। চুক্তির আওতায় বাংলাদেশের তৈরি পোশাক, প্রক্রিয়াজাত কৃষিপণ্য, ইলেক্ট্রনিকসহ ১০০টি পণ্য শুল্কমুক্ত সুবিধা পাবে ভুটানে। অন্যদিকে ভুটান থেকে পাথর, বোল্ডার, ফলমূলসহ ৩৪টি পণ্য একই সুবিধা পাবে বাংলাদেশে। আগামীতে এই তালিকায় আরও পণ্য সংযুক্ত হওয়ার সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে। ইতোমধ্যে পিটিএ হয়েছে নেপালের সঙ্গে। এ রকম শুল্কমুক্ত বাণিজ্য সুবিধা চুক্তির জন্য বাংলাদেশের আলোচনা চলছে আরও ১১টি দেশের সঙ্গে। তবে করোনা মহামারীর কারণে দীর্ঘ ৭ মাসেও বাস্তবায়ন হতে পারেনি চুক্তিটি। যা হোক, ভুটানের পার্লামেন্টে অনুমোদনের পর এটি কার্যকর হতে পারে আগামী বছর থেকে। পিটিএর পাশাপাশি স্থাপিত হবে নৌযোগাযোগও দুদেশের মধ্যে। উল্লেখ্য, বাংলাদেশ ২০২৪ সালে স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) থেকে উন্নীত হবে উন্নয়নশীল দেশে যা কার্যকর হবে ২০২৬ সাল থেকে। ফলে বর্তমানে এলডিসি হিসেবে যেসব বাণিজ্য সুবিধা এখন বাংলাদেশ পাচ্ছে তা কিছুটা হলেও কমবে। সেই প্রেক্ষাপটে ভুটানের সঙ্গে প্রথম যে পিটিএ স্বাক্ষর হলো, তা একটি অর্থনৈতিক অর্জন। ভুটান বাংলাদেশের বন্ধুপ্রতিম দেশ। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় চ‚ড়ান্ত বিজয়ের আগেই ৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশকে স্বাধীন ও সার্বভৌম দেশ হিসেবে স্বীকৃতি দেয় ভুটান। ভুটানের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ডাঃ লোটে শেরিং ইতোপূর্বে ১০ বছর বাংলাদেশে অবস্থান করে চিকিৎসাশাস্ত্রে অধ্যয়ন করেন। তদুপরি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষ উদযাপন এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উৎসবেও দেশটি অংশগহণ করেছে। আপাতত বাণিজ্য ভারসাম্য ভুটানের অনুক‚লে থাকলেও উভয় দেশের মধ্যে অদূর ভবিষ্যতে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বৃদ্ধির বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে। যেমন- দেশটি শিল্পে অনুন্নত ও অনগ্রসর। সে দেশে জলবিদ্যুত উৎপাদনের বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে, তেমনি রয়েছে ওষুধশিল্পে। বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা এসব ক্ষেত্রে ভুটানে নিজস্ব অথবা যৌথ উদ্যোগে বিনিয়োগ করে শিল্পকারখানা গড়ে তুলতে পারেন। আর এখানেই নিহিত রয়েছে আগামীর অমিত সম্ভাবনা। প্রতিবেশী দেশ নেপাল, ভারত ও ভুটানের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক অত্যন্ত বন্ধুত্বপূর্ণ। আমাদের সবচেয়ে বড় বাণিজ্য অংশীদারও ভারত। ভুটান-নেপালও তাই হতে যাচ্ছে। পারস্পরিক প্রতিবেশী দেশগুলোর বাণিজ্য আরও সহজীকরণে স্থলবন্দর, রেলপথ, জলপথ, সড়কপথসহ বিভিন্ন খাতে বিনিয়োগ আরও বাড়াতে হবে। বাণিজ্য কার্যক্রমের জন্য এক স্থানে সব সুবিধা (সিঙ্গেল উইনডো ফ্যাসিলিটিজ) দেয়ার বিষয়টিও বিবেচনা করতে হবে। বহুপক্ষীয় বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বৃদ্ধির লক্ষ্যে বর্তমানে যেসব ইস্যু বাধা হিসেবে কাজ করছে সেগুলোর মধ্যে রয়েছে মূলত অবকাঠামো ও যোগাযোগ ব্যবস্থার সুগমতার সঙ্কট। এসব সমস্যা সমাধানে করণীয় নির্ধারণ এবং পর্যালোচনা করা হবে, এমনটাই প্রত্যাশা। সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর উন্নয়নের স্বার্থে বহুপাক্ষিক বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সর্বোপরি শুল্কমুক্ত সুবিধা সম্প্রসারণ করা একান্ত দরকার।
×