ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

চালু হয়নি আইসিইউ বেড

নওগাঁয় করোনায় উচ্চ সংক্রমণ অনুমোদনের এক মাসেও স্থাপন হয়নি আরটি পিসিআর ল্যাব

প্রকাশিত: ১৬:৩৭, ১৬ জুন ২০২১

নওগাঁয় করোনায় উচ্চ সংক্রমণ অনুমোদনের এক মাসেও স্থাপন হয়নি আরটি পিসিআর ল্যাব

নিজস্ব সংবাদদাতা, নওগাঁ ॥ করোনা ভাইরাসের রোগীদের চিকিৎসায় প্রায় এক মাস আগে সরকারের দেয়া দুটি আইসিইউ বেড দক্ষলোকের অভাবে চালু সম্ভব হয়নি নওগাঁ সদর জেনারেল হাসপাতালে। অন্যদিকে অনুমোদনের পরও আরটি পিসিরা ল্যাব স্থাপন হয়নি। ফলে করোনায় উচ্চ সংক্রমণের জেলা নওগাঁয় দ্রুত করোনা ভাইরাস পরীক্ষার ফলাফল না পাওয়ায় আক্রান্ত হচ্ছেন অনেকেই। এ নিয়ে নওগাঁবাসির চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে নওগাঁয় দ্রুত পিসিআর ল্যাব স্থাপনের তাগিদ সচেতন নাগরিকদের। হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, দেশে নতুন করে করোনা সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়লে গত ৯ মে নওগাঁ সদর হাসপাতালে আরটি পিসিআর ল্যাব ও দুটি আইসিইউ বেড স্থাপনের অনুমোদন দেয় স্বাস্থ্য বিভাগ। তবে, একমাস পরও নওগাঁয় আরটি পিসিআর ল্যাবের প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি পৌঁছায়নি । দুটি আইসিইউ বেড হাসপাতালে পৌছঁলেও দক্ষ লোকের অভাবে বসানো সম্ভব হয়নি। নওগাঁ সদর হসপাতালের আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার (আরএমও) (ভারপ্রাপ্ত) ডাঃ মো: আবু আনসার আলী জানান, আরটি পিসিআর ল্যাব ও দুটি আইসিইউ বেড স্থাপনের অনুমোদন হলেও নানা সমস্যা থাকায় তা চালু করা সম্ভব হচ্ছে না। আর কবে নাগাদ স্থাপন করা হবে এ বিষয়েও সঠিক ভাবে কিছুই বলতে পারছেন না তিনি। জানা গেছে, দেশের মধ্যে ২য় বৃহত্তম জেলা ও রাজশাহী বিভাগের সবেচেয়ে বড় জেলা নওগাঁ। এ জেলায় প্রায় ৩০ লাখ মানুষ বসবাস করেন। গত বছর জেলায় প্রথম ২৩ এপ্রিল করোনা ভাইরাসে রাণীনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের একজন স্বাস্থ্যকর্মী শনাক্ত হন। আর ৩০মে নওগাঁ শহরের সুলতানপুর গ্রামের শাজাহান নামে এক ব্যক্তি মারা যান। এরপর করোনার শনাক্ত ও মৃত্যুর হার নওগাঁয় নিয়ন্ত্রণের মধ্যেই ছিল। কিন্তু নওগাঁ জেলার পার্শবর্তী জেলা চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও রাজশাহীতে করোনায় শনাক্ত ও মৃত্যুর হার বৃদ্ধি পাওয়ায় জেলাতেও করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ে। ফলে গত মাসের ঈদের পর থেকে হঠাৎ করে নওগাঁয় শনাক্ত ও মৃত্যুর হার বৃদ্ধি পেয়েছে। হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, জেলায় করোনা শনাক্ত হওয়ার পর থেকে মে মাসের আগ পর্যন্ত শনাক্তের হার ছিল গড়ে ৮ ভাগ। ঈদের আগে মে মাসে যেখানে শনাক্তের হার ছিল গড়ে ১৮ ভাগ। ঈদের পরে মে মাসে সেটি বৃদ্ধি পায় ২৫ ভাগে। গত বছর থেকে চলতি জুন পর্যন্ত (অদ্যাবধি) জেলায় করোনায় মারা গেছেন ৫৬ জন। শনাক্ত হয়েছে ৩ হাজার ১৩১ জন। আর সুস্থ হয়েছেন ২ হাজার ৫ জন। নওগাঁর ডেপুটি সিভিল সার্জন ডাঃ মনজুর এ মোর্শেদ জানান, গত মাসে জেলায় সবচেয়ে মৃত্যু ও শনাক্ত হয়েছে বেশী। ফলে চলতি মাসের শুরুতে করোনায় উচ্চ সংক্রমণ এলাকা নওগাঁ পৌরসভা ও নিয়ামতপুরে ৭ দিনের বিশেষ লকডাউন দেয়া হয়। তবে এরপরও এই ১৪ দিনে মৃত্যু ও শনাক্তের হারের বিষয়টি উদ্বেগজনক। এইজন্যে সবাইকে স্বাস্থ্য বিধি মেনে চলার অনুরোধ করেন করেন তিনি। এদিকে এ হাসপাতালে আসা আইসিইউ বেড দুটি নওগাঁয় ৩০ লাখ মানুষের প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ভুক্তভোগীরা। স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ (স্বাচিপ) নওগাঁর সাধারণ সম্পাদক ডা: রেজাউল মাহমুদ জানান, আরটি পিসিআর ল্যাব ও অত্যন্ত ২০/২৫ টি আইসিইউ বেড দ্রুত প্রয়োজন। এই দাবি কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দদের জানানো হয়েছে। নওগাঁ সদর হসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক এবং সিভিল সার্জন ডা. এবিএম আবু হানিফ জানান, করোনার নমুনা দিতে আসা ব্যক্তিদের হয়রানিসহ নানান অভিযোগের বিষয়টি বন্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। তারপরও কেউ যদি হয়রানি হয়ে থাকে তবে বিষয়টি ক্ষতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তিনি আরো জানান, আরটি পিসিআর মেশিন ও অন্যান্য যন্ত্রপাতি আসা মাত্র তা চালু করা হবে। প্রশিক্ষিত জনবলের অভাবে দুটি আইসিইউ বেড বসিয়ে এখনও চালু করা যায়নি। ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের তত্ত্বাবধানে ঠিকাদারের মাধ্যমে এসব আইসিইউ বেড হাসপাতালে বসানো হয়েছে। তিনি আরো বলেন, ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের জানানো হয়েছে। আশা করছি দ্রুতই এটি চালু হবে।
×