ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

বরিশাল নগরীর তিন পয়েন্টে তীব্র যানজট

প্রকাশিত: ১৫:০২, ১৬ জুন ২০২১

বরিশাল নগরীর তিন পয়েন্টে তীব্র যানজট

স্টাফ রিপোর্টার, বরিশাল ॥ বিভাগীয় শহর বরিশাল নগরীতে যানজট এখন যেন নিত্যদিনের ঝঞ্জাট হয়ে দাঁড়িয়েছে। ব্যস্ততম এ নগরীর আমতলার মোড় থেকে চান্দু মার্কেট, সদর রোডের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার থেকে বিবির পুকুর পাড় ও নতুন বাজার মোড় এই তিন পয়েন্টের যানজটে নাকাল হয়ে পরেছে পুরো নগরবাসী। তীব্র থেকে তীব্রতর এ যানজটের মূলে রয়েছে তিন চাকার যানের আধিক্য, সরু রাস্তা এবং মাস্টারপ্লানের বাস্তবায়ন না হওয়া। তবে এসব ব্যাপারে উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। পাশাপাশি যানজট দূর করতে জনগণের সচেতনতা জরুরি বলে দাবি করেছেন স্থানীয় প্রশাসন। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নগরীর উল্লেখিত তিন পয়েন্টে যানজটের প্রধান কারণ সরু রাস্তা। এছাড়া অতিরিক্ত হলুদ ইজিবাইকসহ অন্যান্য তিন চাকার যানচলাচলের কারণে যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। আমতলার মোড় থেকে চান্দুমার্কেট পর্যন্ত প্রায় দেড় কিলোমিটার রাস্তায় যানজট সৃষ্টির পেছনে মাঝখানের সাগরদী ব্রিজও অন্যতম একটি কারণ। সরু এ ব্রিজ দিয়ে রাস্তার দু’পাশের যান চলাচলে দিনের প্রায় পুরোটা সময়ই সময়ক্ষেপণ করতে হয় যাত্রীদের। এছাড়া ব্রিজের ঢালেই (চান্দু মার্কেটের দিকে) ধান গবেষণা সড়কের সংযোগস্থল। ওইস্থানে যত্রতত্রভাবে ইজিবাইক থেকে যাত্রী ওঠানামা করায় সৃষ্টি হয় প্রতিদিনের যানজট। অপরদিকে নগরীর মূল প্রাণকেন্দ্র সদর রোড। এখানকার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার এলাকা থেকে বিবিরপুকুর পাড় পর্যন্ত এলাকাজুড়ে সরকারি-বেসরকারি অফিস, বিভিন্ন ডায়াগনস্টিক সেন্টার, শপিং মল এবং লঞ্চঘাট থেকে নগরীতে প্রবেশের মূলপথের সংযোগ স্থল (কাকলির মোড়) অবস্থিত। তবে এ জায়গার পুরো রাস্তার প্রশস্থতা নগরীর অন্য যেকোনো রাস্তার চেয়ে সরু। আর এ সরু রাস্তার মধ্যেই কাকলির মোড় থেকে বিবির পুকুর পাড় পর্যন্ত সড়কের মাঝ বরাবর ডাইভারশন (সড়ক বিভাজন) রয়েছে। বিভিন্ন দিক থেকে আসা চলন্ত যানবাহন ও অযথা পার্কিং করে রাখা গাড়িগুলোর সম্মিলন যানজটের সৃষ্টি করছে। এছাড়া নগরীর নতুনবাজার মোড়ের (বিএম কলেজ থেকে জেলখানার মোড়ের অংশ) আধা কিলোমিটার জুড়ে কাঁচাবাজার, মাছের বাজার, মুদি বাজার ও অসংখ্য রেস্টুরেন্টের সমাহার। এর ওপর চলার পথ তুলনামূলক সরু। নগরীর সদর রোড থেকে জেলখানার মোড় হয়ে নথুল্লাবাদ ও বিএম কলেজ পর্যন্ত যাবার প্রধান সড়কও এটি। যে কারণে তিন চাকার যানের আধিক্যও এ সড়কে সবচেয়ে বেশি। এছাড়া পার্কিংয়ের জায়গা না থাকায় রাস্তার পাশেই ব্যক্তিগত গাড়ি রেখে বাজার করতে হয় সেখানকার নাগরিকদের। এতেও বৃদ্ধি পাচ্ছে যানজট। নগর উন্নয়ন অধিদপ্তরের বরিশাল অঞ্চলের জেষ্ঠ্য পরিকল্পনাবিদ মোঃ আসাদুজ্জামান জানান, যানজট সমস্যার মূলে রয়েছে প্রায় একযুগ আগে প্রস্তাবিত মাস্টারপ্লানের কার্যকর না হওয়া। তিনি বলেন, সারাদেশেই নগরায়নের হার বিগতদিনের চেয়ে বেশি। কিন্তু এই নগরায়ন যদি অপরিকল্পিত হয়, তবে যানজট সৃষ্টি হওয়া স্বাভাবিক। ২০১০ সালে নগরী উন্নয়নের মূল পরিকল্পনা (মাস্টারপ্লান) তৈরি করা হয়। সেখানে সাগরদী থেকে আমতলার মোড়, নতুন বাজার মোড় এবং সদর রোডের প্রশস্ততা বর্ধিতকরণসহ আরও বেশ কয়েকটি বিষয় উল্লেখ করা রয়েছে। কিন্তু দীর্ঘদিনে ওই মাস্টারপ্লান কার্যকরের তেমন কোন উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি। তবে বরিশাল সিটি কর্পোরেশন (বিসিসি) এলাকায় রাস্তা বর্ধিতকরণ ও মেরামতের প্রক্রিয়া চলমান থাকার বিষয়টি উল্লেখ করে বিসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দ মোঃ ফারুক আহমেদ জানান, নিজস্ব তহবিল দিয়ে সিটি মেয়র নগরীর বিভিন্ন রাস্তার কাজ শুরু করেছেন। তারই ধারাবাহিকতায় এবং প্রকল্পের অনুমোদন অনুযায়ী যে রাস্তাগুলো বর্ধিত করা প্রয়োজন পর্যায়ক্রমে সেগুলো বর্ধিত করা হবে। অপরদিকে নাম প্রকাশ না করার শর্তে বরিশাল মেট্রোপলিটন ট্রাফিক বিভাগের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা জানান, সাগরদী ব্রিজ ও ধান গবেষণা রোডের সংযোগস্থলে, আমতলার মোড়, নতুনবাজার মোড় এবং এর পার্শ্ববর্তী মড়কখোলা পোল ও সদর রোডের একাধিক পয়েন্টে ট্রাফিক পুলিশের সদস্যরা উপস্থিত থেকে দায়িত্ব পালন করছেন। তারা যানজট নিরসনে অবিরতভাবে যথাসাধ্য কাজ করছেন। এছাড়া দিনের যে সময়ে এসব রুটে হলুদ ইজিবাইক বা অন্যান্য তিন চাকার যান চালানো নিষিদ্ধ, যে সময়ে যেন এ ধরণের কোনো যানবাহন না চলে সে বিষয়েও নজর রাখা হচ্ছে। তারা আরও জানান, নগরীতে অতিরিক্ত হলুদ ইজিবাইক চলাচল নিয়ন্ত্রণে ট্রাফিক বিভাগ থেকে যথাসাধ্য চেষ্টা করা হচ্ছে। সেক্ষেত্রে সিটি কর্পোরেশন কর্তৃপক্ষ এগিয়ে আসলে আরও সুবিধা হবে। যানজট নিরসনে নাগরিকদের সচেতনতা সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ দাবি করে সূত্রটি জানিয়েছেন, বিনা কারণে বা অযথা নিজের যানবাহন রাস্তার যত্রতত্রভাবে পাকিং করে না রাখলে যানজট অনেকটা কমে আসবে। রাস্তার যত্রতত্রভাবে পাকিং করে রাখা যানের বিরুদ্ধে ইতোমধ্যে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে গিয়ে ট্রাফিক বিভাগকে বিভিন্ন রোষানলে পরতে হচ্ছে বলেও সূত্রটি নিশ্চিত করেছেন।
×