ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

কোরবানির চামড়া

প্রকাশিত: ২০:৩৫, ১৫ জুন ২০২১

কোরবানির চামড়া

পবিত্র ঈদ-উল-আজহা আসতে খুব বেশি দেরি নেই। দেশে এটি কোরবানির ঈদ হিসেবে সমধিক পরিচিত। প্রতিবছর অন্তত এক কোটি ২৫ লাখ গবাদি পশু কোরবানি করা হয়। এর বাইরেও রয়েছে ছাগল-খাসি-ভেড়া-দুম্বা-উট প্রভৃতি। গত দুই বছর ধরে করোনা মহামারীর কারণে পশু কোরবানির সংখ্যা কিছু কমবেশি হলেও দেশের চামড়া শিল্পের প্রায় সিংহভাগ, কমপক্ষে ৬০ শতাংশ সংগৃহীত হয়ে থাকে এ সময়ে। তবে দুঃখজনক ও পরিতাপের বিষয় হলো, প্রতিবছরই এক শ্রেণীর অসাধু টেনারি মালিক, চামড়া ব্যবসায়ী ও মৌসুমি পাইকাররা চামড়া কেনা, সংগ্রহ, সংরক্ষণ, গুদামজাতকরণ তদুপরি প্রক্রিয়াজাতকরণ নিয়ে নানা তেলেসমাতি কাণ্ড-কারখানা করে থাকে। এমনকি কাঁচা চামড়া সংরক্ষণের অন্যতম উপাদান লবণের দাম নিয়েও হয় হুলস্থ‚ল কারবার। একই সঙ্গে প্রায় একই সময়ে এত বিপুল পরিমাণের চামড়া নিয়ে একশ্রেণীর অসাধু ব্যবসায়ীদের কারসাজিতে প্রতিবছরই হয় ও হচ্ছে এহেন সমস্যা সঙ্কট। অনেক চামড়া সীমান্ত পথে প্রতিবেশী দেশে পাচারের খবরও আছে। এবারে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আগে-ভাগে ব্যাপক প্রস্তুতি ও কঠোর নীতিমালা নিয়ে অগ্রসর হচ্ছে সরকার। কাঁচা চামড়া সংগ্রহ ও সংরক্ষণে পাঁচটি মন্ত্রণালয়ের সমন্বয়ে গঠিত হয়েছে কম্প্রিহেন্সিভ মনিটরিং টিম। কোরবানির আগে গঠিত হবে ৪টি জেলায় কাঁচা চামড়ার হাব তথা মডেল সংস্করক্ষণাগার বা গুদাম। পর্যায়ক্রমে সরকারী-বেসরকারী অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে সারা দেশে নির্মাণ করা হবে ৬০০টি গুদাম। ইতোমধ্যে দেশীয় চামড়া খাত, চামড়া শিল্প, চামড়াজাত পণ্য ও পাদুকা শিল্পের যথার্থ বিকাশ এবং উন্নয়নে আরও অন্তত পাঁচ বছর আর্থিক প্রণোদনা অব্যাহত রাখার ঘোষণা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। এর পাশাপাশি সব রফতানি খাতের জন্য সমান সুযোগ ও নীতিগত সহায়তা নিশ্চিত করার কথাও বলেছেন। এক্ষেত্রে যেসব বৈষম্যমূলক প্রতিবন্ধকতা রয়েছে তাও দূর করার আশ্বাস দিয়েছেন। সরকার সাভারে চামড়া শিল্পনগরীর বর্ধিত প্রকল্পে আন্তর্জাতিক মান ও এলডবিøউজি সনদ অর্জন-উপযোগী কম্পোজিট, চামড়াজাত পণ্য ও পাদুকা কারখানা গড়ে তোলার জন্য আরও ১৫০ একর জমি বরাদ্দ দিয়েছে। দেশীয় চামড়া ও পাদুকা শিল্পের মালিকদের এই সুযোগ কাজে লাগাতে হবে অবশ্যই। গত কয়েক বছর ধরে কোরবানির চামড়া নিয়ে যা হচ্ছে তাও মূলত সংশ্লিষ্ট স্বার্থান্বেষীদের দুরভিসন্ধি ও কারসাজি ছাড়া কিছু নয়। চামড়ার দাম না পেয়ে কাঁচা চামড়া মাটিতে পুঁতে ফেলাসহ ফেলে দেয়ার খবরও আছে। চামড়া ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করেন, ট্যানারি মালিকরা বকেয়া তথা পাওনা পরিশোধ না করায় এহেন শোচনীয় অবস্থার সৃষ্টি, যা সত্য হয়ে থাকে। অথচ চামড়া কেনার জন্য প্রতিবছর রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো কয়েক শ’ কোটি টাকা ঋণ দিয়ে থাকে স্বল্পসুদে। এহেন অনাকাক্সিক্ষত ঘটনায় সমূহ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বিকাশমান ও সম্ভাবনাময় চামড়া শিল্প। পূর্ব প্রস্তুতি গ্রহণ করা হলে এবার তা কাটবে না বলেই প্রত্যাশা।
×