ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

নওগাঁর রাণীনগরে অবৈধ ভাবে চলছে ব্যক্তিগত গভীর নলকুপ

প্রকাশিত: ১৬:৩৬, ১১ জুন ২০২১

নওগাঁর রাণীনগরে অবৈধ ভাবে চলছে ব্যক্তিগত গভীর নলকুপ

নিজস্ব সংবাদদাতা, নওগাঁ॥ নওগাঁর রাণীনগের বিধিনিষেধ ও নিয়মনীতি না মেনেই অবৈধ ভাবে চলছে ব্যক্তিগত গভীর নলকুপ। ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে জমির চাষাবাদ ও অপর বিএমডিএর গভীর নলকুপ। ঘটনাটি ঘটেছে উপজেলার একডালা ইউনিয়নের নারায়নপাড়া গ্রামে। প্রতিপক্ষ প্রভাবশালী হওয়াই সরকারের কোন বিধিনিষেধ ও নিয়মনীতি না মেনেই অবৈধ ভাবে চালিয়ে আসছে ব্যক্তিগত এই গভীর নলকুপ। ফলে এলাকার কৃষকদের মাঝে চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে। অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, নারায়নপাড়া গ্রামের কৃষকদের মাঝে সুলভ মূল্যে সেচের পানি দেয়ার লক্ষ্যে রামজীবনপুর মৌজায় বিগত ২০০৯সালে বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের আওতায় একটি গভীর নলকুপ স্থাপন করা হয়। সেই সময় থেকে নলকুপের অপারেটরের দায়িত্ব পালন করে আসছে নারায়নপাড়া গ্রামের মৃত লোকমান আলী মাঝির ছেলে আনিছুর আলী মাঝি। এর পরবর্তি সময়ে ২০১৩সালে তৎকালীন উপজেলা বরেন্দ্র উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ ও উপজেলা সেচ কমিটির যোগসাজসে নিয়ম বহির্ভুত ভাবে নারায়নপাড়া ও রামজীবনপুর মৌজায় একই গ্রামের মৃত আক্কাছ আলীর ছেলে হারুন-অর-রশিদকে আরেকটি ব্যক্তিগত গভীর নলকুপের লাইসেন্স ও ছাড়পত্র প্রদান করা হয়। ২০১৮ সালের পূর্বে নিয়ম অনুসারে এক গভীর নলকুপ থেকে অন্য একটি নলকুপের দূরত্ব সর্বনিম্ম ১৮০০ফুট হতে হবে এবং ২০১৮সালের পর এই দূরত্ব নির্ধারণ করা হয় ২৫৪০ফুট। কিন্তু হারুন-অর-রশিদের ব্যক্তিগত নলকুপের দূরত্ব প্রায় ১৪০০ফুট। এই ক্ষেত্রে নির্ধারিত দূরত্বও মানা হয়নি। এই বিষয়ে পরবর্তিতে আনিছুর রহমান ২০১৯সালে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, বিএমডিএর নির্বাহী প্রকৌশলী ও অন্যান্য দপ্তর বরাবর লিখিত অভিযোগ প্রদান করেন। অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত সাপেক্ষে ২০২০সালের জানুয়ারি মাসের ২৮তারিখে বিএমডিএর নওগাঁর রিজিয়ন-১এর নির্বাহী প্রকৌশলী মো: সমশের আলী স্বাক্ষরিত এক আদেশে বলা হয় হারুনÑঅর-রশিদের স্থাপন করা ব্যক্তিগত গভীর নলকুপে বিদ্যুৎ সংযোগের জন্য অনিয়মতান্ত্রিক ভাবে লাইসেন্স প্রদান করা হয়েছে। ওই নলকুপে সংযোগ প্রদান করা হলে বিএমডিএর স্থাপনকৃত গভীর নলকুপটি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তাই হারুন-অর-রশিদের ১১৪নং লাইসেন্স বাতিলের পরবর্তি ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য উপজেলা বিএমডিএকে নির্দেশনা প্রদান করা হয়। এর পরবর্তিতে ২০২০সালের জুন মাসের ৮তারিখে উপজেলা সেচ কমিটির এক সভায় বিএমডিএর স্থাপন করা গভীর নলকুপের এরিয়ায় প্রবেশ না করা, নির্ধারিত রেটে কৃষকদের কাছে পানি সরবরাহ করাসহ ৫টি শর্ত প্রদান করা হয় হারুন-অর-রশিদকে। কিন্তু হারুন কোন শর্তই আজ পর্যন্ত মেনে চলছে না। হারুন শর্ত ভঙ্গ করে অবৈধ ভাবে বিএমডিএর স্থাপন করা গভীর নলকুপের এরিয়ায় প্রবেশ করে পেশীবলের জোরে পানি সেচ দিয়ে আসছে। তার এলাকার কৃষকদের কাছ থেকে পানি সেচের নির্ধারিত মূল্য থেকে বেশি অর্থ আদায় করে আসছে। আর চরম ভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে বিএমডিএর গভীর নলকুপটি। এই বিষয়টি বছরের পর বছর সমাধান না হওয়ায় পানির সেচ নিয়ে চরম বিড়ম্বনার শিকার হয়ে আসছেন এলাকার শত শত কৃষক। স্থানীয় বাসিন্দারা হারুন-অর-রশিদের অবৈধ নলকুপের দ্রুত অপসারন দাবী করেছেন। বিএমডিএ অনুমোদিত নলকুপের অপারেটর আনিছুর রহমান মাঝি বলেন, হারুন প্রভাবশালী ব্যক্তি হওয়ায় সে সরকারের নিয়মনীতিকে তোয়াক্কা না করে এমন কি আদালতের নির্দেশনা অমান্য করে তার নলকুপ পরিচালনা করে আসছে। যার কারণে স্থানীয় কৃষকসহ বিএমডিএ অনুমোদিত নলকুপটি চরম ভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। দ্রুত এই সমস্যাটির সমাধান করা না হলে স্থানীয়দের মাঝে এক রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের আশঙ্কা রয়েছে। অভিযুক্ত হারুন-অর-রশিদ বলেন, সেই সময় আমিসহ আরো কয়েকজন শেয়ারের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অনমুতি নিয়েই নলকুপ স্থাপন করেছি। তবে বিএমডিএর গভীর নলকুপের এরিয়ার মধ্যে আমার এক অংশীদারের কিছু জমি থাকায় সেই জমিতে আমি আমার নলকুপ থেকে পানি সেচ দিয়ে আসছি। আমি কোন শর্তই অমান্য করিনি। বিএমডিএর রাণীনগর জোনের সদ্য বিদায়ী সহকারী প্রকৌশলী সৈয়দ মো: মিজানুর রহমান বলেন, তৎকালীন সময়ের সেচ কমিটি ও বিএমডিএ কর্মকর্তা কিভাবে হারুনকে এই গভীর নলকুপ স্থাপনের অনুমতি দিয়েছিল, তা আমার জানার বাইরে। কিন্তু গত বছর হারুনকে ৩শ’ টাকার ষ্ট্যাম্পে ৫টি অবশ্যই পালনীয় শর্তের মাধ্যমে নলকুপ পরিচালনার অনুমতি দেয়া হয়েছিল। এখন যদি হারুন সেই শর্তগুলো ভঙ্গ করে তাহলে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা অবশ্যই গ্রহণ করা যেতে পারে। বিএমডিএর রাণীনগর জোনের বর্তমান সহকারী প্রকৌশলী ফারুক হোসেন বলেন, এই বিষয়ে সম্প্রতি আমি অভিযোগ পেয়েছি। সরেজমিনে তদন্ত সাপেক্ষে অভিযুক্ত ব্যক্তি এবং গভীর নলকুপ পরিচালনার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
×