ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

জোয়ারে এক হয়ে যায় দুই নদী

প্রকাশিত: ১২:৫০, ১৮ মে ২০২১

জোয়ারে এক হয়ে যায় দুই নদী

স্টাফ রিপোর্টার, বরিশাল ॥ ষাটোর্ধ্ব বরকত আলী থাকেন বরিশাল সদর উপজেলা চরবাড়িয়া ইউনিয়নের লামচরী গ্রামে। কীর্তনখোলা নদীর ভাঙ্গনে তার পৈতৃক ভিটা বিলীন হয়েছে অনেক আগেই। এখন জমি কিনে থাকছেন সেই গ্রামেই। কিন্তু ভাঙ্গন পিছু ছাড়ছে না তার। পরিবার নিয়ে রয়েছেন প্রতিনিয়ত নদীভাঙ্গনের আতঙ্কে। তিনি বলেন, মোরা দুই নদীর মাঝখানে থাহি। প্রতিবছর বর্ষার সিজনেই মোরা আতঙ্কে থাহি। কোন সময় আবার ভাঙ্গন শুরু হয়। অনেক বছর ধইরাতো ঝামেলা আরও বাড়ছে। মোগো আশপাশের কয়েকটা গ্রাম আলেদা হইয়া যাই পুরা ইউনিয়ন দিয়া। তহন যে কী দুর্ভোগে পরতে হয়, হেয়া আল্লাহ মাবুদ ছাড়া কেউ জানেনা। সূত্রমতে, প্রতিবছরই বর্ষা মৌসুমে কীর্তনখোলা নদীর ভাঙ্গনের কবলে পরে চরবাড়িয়া ইউনিয়নের বাসিন্দারা। সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পাশেই থাকা আড়িয়াল খাঁ নদীর সাথে মিশে যায় কীর্তনখোলা। এসময় শহরের সাথে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় এই ইউনিয়নের সাতটি গ্রাম। কয়েক বছর আগে মূল সড়ক বিলীন হয়েছে কীর্তনখোলা নদীগর্ভে। পরবর্তীতে এক ব্যবসায়ীর নিজস্ব অর্থায়ন ও স্থানীয় লোকজনের সহায়তায় পাশ দিয়ে আরেকটি বিকল্প সড়ক নির্মাণ করা হয়। তবে সেই সড়কেরও নাজেহাল অবস্থা। সারাবছর সড়ক যোগাযোগ চালু থাকলেও বর্ষা মৌসুমে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় পুরো যোগাযোগ ব্যবস্থা। বরিশাল নগরীর বেসরকারী একটি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত চরবাড়িয়ার লামচরী এলাকার বাসিন্দা রাসেল হোসেন বলেন, মূল সমস্যায় রয়েছেন লামচরী, উত্তর লামচরী, দক্ষিণ লামচরী, চরকান্দা, পোটকারচর, ময়দান ও কদমতলা গ্রামের বাসিন্দারা। এসব গ্রামের প্রায় ১০ হাজার পরিবার চরম দুর্ভোগের মধ্যে রয়েছে। অনেকের ভিটেমাটি চলে গেছে নদীগর্ভে। তিনি আরও বলেন, নদীভাঙন থেকে রক্ষায় অনেক আবেদন করা হয়েছে। কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। সামনে বর্ষামৌসুম। দুই বছর যাবৎ এই মৌসুমে বাড়ি যেতে পারিনি। মোটরসাইকেল নিয়ে বর্ষা মৌসুমে বাড়ি থেকে আসা-যাওয়া করে অফিস করা সম্ভব হয়না। কারণে জোয়ারের সময়-ই কোনো রাস্তা থাকে না। দুই নদী এক হয়ে যায়। যারা এসব এলাকার চাকরিজীবী, মানে যারা বরিশাল শহরে চাকরি করেন, তাদের দুই পাশে থাকা দুই নদী রাক্ষুসে চরিত্রের কারণে চরম দুর্ভোগে পরতে হচ্ছে। সূত্রমতে, বর্তমানে ভাঙ্গনের হুমকিতে আছে লামচরীর দার্শনিক আরজ আলী মাতুব্বরের বাড়ি ও তার স্মৃতিবিজড়িত লাইব্রেরি। বরিশাল নগরীর বাজার রোডে চাকরি করেন চরবাড়িয়া ইউনিয়নের চরকান্দা গ্রামের নজরুল হোসেন। তিনি বলেন, বর্ষাকালে এমন অবস্থা হয় যে বাইসাইকেল চালিয়েও আসা-যাওয়া সম্ভব হচ্ছেনা। তিনি জরুরি ভিত্তিত্বে জনগুরুত্বপূর্ণ সড়কটি সংস্কারের জন্য সংশ্লিষ্ট উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। বরিশাল সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ মুনিবুর রহমান বলেন, তালতলী-লামচরী সড়কের কাজ খুব শীঘ্রই শুরু করা হবে। ইতোমধ্যে দরপত্র আহবান করা হয়েছে। নদীভাঙ্গনেরোধ একটি বড় প্রকল্প জানিয়ে তিনি আরও বলেন, ইতোমধ্যে নদীভাঙ্গন প্রতিরোধের জন্য স্থানীয় সংসদ সদস্য ও পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী সরেজমিন পরিদর্শন করেছেন। বরিশাল সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সাইদুর রহমান রিন্টু বলেন, ওই সড়কের কাজের জন্য স্থানীয় সাংসদ ডিও লেটার দিয়েছেন। শীঘ্রই কাজ শুরু করা হলে সাত গ্রামের প্রায় ১০ হাজার পরিবারের সদস্যরা তাদের দীর্ঘদিনের চরম ভোগান্তি থেকে রেহাই পাবেন।
×