ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

ঠাকুরপাড়ার বৌদ্ধ বিহার রক্ষায় সহযোগিতা চায় এলাকাবাসী

প্রকাশিত: ১৭:২৮, ১৪ মে ২০২১

ঠাকুরপাড়ার বৌদ্ধ বিহার রক্ষায় সহযোগিতা চায় এলাকাবাসী

অনলাইন রিপোর্টার ॥ পাহাড় চূড়ায় অবস্থিত বৌদ্ধ বিহারটি প্রায় ৩শ বছরের পুরনো। এলাকার সবচেয়ে প্রাচীন বিহারটির উত্তর পাশে গত ১০ বছর ধরে পাহাড় ভাঙতে ভাঙতে এখন সিঁড়ির গোড়া ছুঁয়েছে। ফলে ভাঙনের কারণে হুমকির মুখে পড়েছে গ্রামের একমাত্র প্রাচীন এই বিহারটি। অথচ এই বিহারের সঙ্গে মিশে আছে এখানকার সহজ সরল মানুষের হাজারো প্রায় ৩শ বছরের স্মৃতি, স্বপ্ন, আবেগ-অনুভূতি; ধর্মীয় চেতনা এবং বিশ্বাস। তাই যেকোনো মূল্যে তাদের ধর্মচর্চার একমাত্র এই উপসনালয়টি বাঁচাতে চায় তারা। কিন্ত তাদের স্বাদ আছে যেন সাধ্য নেই। তাই এটি রক্ষায় জরুরিভিত্তিতে সরকারের সহযোগিতা দরকার। বলছিলাম বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার দুর্গম সোনাইছড়ি ইউনিয়নের ঠাকুরপাড়া গ্রামের ‘ঠাকুরপাড়া বৌদ্ধ বিহার’ বা ক্যাংয়ের’ কথা। জানা গেছে, নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা সদর থেকে ১৭ কিলোমিটার এবং জেলা সদর থেকে কিলোমিটার দূরে দুর্গম সোনাইছড়ি ইউনিয়ন। ইউনিয়ন পরিষদ ভবনের অদূরেই ঠাকুরপাড়া গ্রাম। সোনাইছড়িতে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর আরও পাঁচ-ছয়টি গ্রাম থাকলে শুধু ঠাকুরপাড়ায় আছে ১৫৬টি পরিবার। এক সময়ের অতি দুর্গম সোনাইছড়ির অনুন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থার কারণে এই ইউনিয়নটি উপজেলা সদরের সঙ্গে অনেকটা বিচ্ছিন্ন থাকলেও গত পাঁচ-সাত বছর আগে থেকে যোগাযোগ অনেক সহজ হয়েছে। ঠাকুরপাড়া বৌদ্ধ বিহারের অধ্যক্ষ উইন্দা ভিক্ষু জানান, ১৭২৩ সালে বিহারটি প্রতিষ্ঠা করা হয়। মূলত এই বিহারটিকে কেন্দ্র করেই কয়েকশ বছর আগে থেকে এখানকার ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর হাজারো মানুষের বেঁচে থাকার স্বপ্ন বুনন শুরু হয়। কিন্তু গত ১০ বছর আগে থেকেই বিহারের উত্তরপাশে পাহাড়ের ভাঙন শুরু হওয়ায় হুমকির মুখে পড়ে বিহারটি। তিনি বলেন, এখন পাহাড় ধসের কারণে পাহাড়টি ভাঙতে ভাঙতে সিঁড়ির গোড়া পর্যন্ত চলে এসেছে। কিন্তু এই ভাঙন ঠেকানোর সেই সামর্থ গ্রামের মানুষের নেই। এ অবস্থায় জরুরিভিত্তিতে ভাঙন প্রতিরোধে ব্যবস্থা না নিলে প্রাচীন এই বিহারটি বাঁচানো কঠিন হয়ে পড়বে। তাই সরকারের কাছে বিহারটি রক্ষায় সহযোগিতা চাই। স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য ঞো থোয়াইপ্রু মার্মা মিলন বলেন, এই এলাকার সবচেয়ে প্রাচীন বৌদ্ধ বিহার এটি। বিহারটি প্রথমে কাঠের ছিল। জরাজীর্ণ হয়ে গেলে ৫-৭ বছর পুরনো বিহার ভেঙে গ্রামবাসীর বাৎসরিক চাঁদায় পাকা করা হয়। এখনো কাজ শেষ হতে অনেক কিছু বাকি। গ্রামের মানুষ তিল তিল করে বিহারটি গড়ে তুলছে। ‘ধর্মীয় বিশ্বাস, চেতনা, আবেগ অনুভূতি তো আছেই দুর্গম এই জনপদের শিল্প, সংস্কৃতি, কৃষ্টি, আচার-অনুষ্ঠান সবকিছুই বিহারটিকে ঘিরে বিরাজমান। তাই সবার প্রাণের দাবি, বিহারটি রক্ষায় সরকার এগিয়ে আসুক’ যোগ করেন মিলন। ঠাকুরপাড়া গ্রামের কারবারী মংছুহ্লা মার্মা বলেন, এক সময় কাটের বিহার ছিল এটি। জরাজীর্ণ হয়ে যাওয়ায় গ্রামবাসী এং সরকারি-বেসরকারি নানা সহযোগিতায় বিহারটি পাকা করা হয়। এখনো বিহারের কাজ পুরোপুরি শেষ করা যায়নি। এ অবস্থায় উত্তর পাশে পাহাড় ধস শুরু হয়েছে। তিনি বলেন, এখানকার বেশিরভাগ মানুষ আর্থিক দৈন্যতায় জীবন চলছে। এ অবস্থায় পাহাড় ধস ঠেকানোর উদ্যোগ নেওয়ার সেই সামর্থ্য এলাকাবাসীর নেই। এ পরিস্থিতিতে বিহারটি রক্ষায় সরকারি সহযোগিতা জরুরি। তবে, পাহাড় ধসের কবল থেকে বিহারটি রক্ষায় উদ্যোগ নেওয়া হবে বলে জানালেন নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শফিউল্লাহ। তিনি বলেন, এসব বৌদ্ধ বিহারগুলো এলাকার ঐতিহ্য। তবে, এ বিষয়টি আমার জানা ছিল না, এলাকাবাসীও কোনো দিন বলেননি। তিনি বলেন, গ্রামবাসীর পক্ষ থেকে একটি লিখিত আবেদন দিলেই এ বিষয়ে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
×