ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

‘শিশু বক্তা’ রফিকুল ইসলাম মাদানীর দুইদিনের রিমান্ড, শনিবার থানায় আনা হবে

প্রকাশিত: ২০:১৮, ১৬ এপ্রিল ২০২১

‘শিশু বক্তা’ রফিকুল ইসলাম মাদানীর দুইদিনের রিমান্ড, শনিবার থানায় আনা হবে

স্টাফ রিপোর্টার, গাজীপুর ॥ বিতর্কিত ‘শিশু বক্তা’ রফিকুল ইসলাম মাদানীকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছে আদালত। বৃহষ্পতিবার গাজীপুরের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট শেখ নাজমুন নাহার এ রিমান্ড মঞ্জুর করেন। তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য শনিবার কাশিমপুর কারাগার থেকে থানায় আনা হবে। গাজীপুর মেট্রোপলিটন আদালতের সহকারি কমিশনার শুভাশীষ ধর জানান, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে গ্রেফতারকৃত কথিত ‘শিশু বক্তা’ রফিকুল ইসলাম মাদানীকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য গত মঙ্গলবার (১৩ এপ্রিল) ৭দিনের রিমান্ড চেয়ে আদালতে আবেদন করেছে গাছা থানা পুলিশ। ওই আবেদনের প্রেক্ষিতে আদালতের বিচারক গাজীপুরের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট শেখ নাজমুন নাহার বৃহষ্পতিবার ভার্চুয়ালী শুনানী গ্রহণ করেন। শুনানী শেষে তিনি রফিকুল ইসলাম মাদানীকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। গ্রেফতারকৃত রফিকুল ইসলাম বর্তমানে কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার-২ তে বন্দী রয়েছেন। তার বিরুদ্ধে গত ৮ এপ্রিল গাছা থানায় এবং ১১ এপ্রিল জিএমপি’র বাসন থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে পৃথক দুইটি মামলা দায়ের করা হয়। জিএমপি’র গাছা থানার ওসি ইসমাইল হোসেন জানান, গ্রেফতারকৃত কথিত ‘শিশু বক্তা’ রফিকুল ইসলাম মাদানীকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আদালত দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন। তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য শনিবার কাশিমপুর কারাগার থেকে থানায় আনা হবে। ওসি ইসমাইল হোসেন জানান, গত ৭এপ্রিল ভোররাতে ‘শিশু বক্তা’ হিসেবে পরিচিত রফিকুল ইসলাম মাদানীকে (২৬) নেত্রকোনা জেলার পূর্বধলা থানার লেটিরকান্দা এলাকার বাড়ি থেকে আটক করে র‌্যাব-১ এর সদস্যরা। তিনি ওই এলাকার মৃত সাহাব উদ্দিনের ছেলে। ওই দিন রাতেই গাজীপুর মহানগরীর গাছা থানায় তাকে হস্তান্তর করা হয়। ৮ এপ্রিল তার বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে একটি মামলা দায়ের করেন র‌্যাব-১ এর নায়েব সুবেদার (ডিএডি) মোঃ আব্দুল খালেক। এ মামলায় তাকে গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে প্রেরণ করা হয়। আটককালে রফিকুল ইসলাম মাদানীর কাছ থেকে ৪টি মোবাইল ফোন জব্দ করা হয়। তিনি মোবাইল ফোনের মাধ্যমে রাষ্ট্রবিরোধী বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করতেন। এছাড়াও জব্দকৃত মোবাইল ফোনে আপত্তিকর ও কুরুচিপূর্ণ ‘এডাল্ট কনটেন্ট’ অশ্লীল ভিডিও চিত্রসহ পর্নোগ্রাফি পাওয়া গেছে। এসব এডাল্ট ছবি ও ভিডিও তিনি নিয়মিত দেখতেন এবং সেগুলো স্টোর করতেন ও লিংক দিতেন। এজন্য রফিকুল ইসলাম মাদানীর বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে রুজুকৃত মামলায় পর্ণোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইন ২০১২ এর ৮(৫)(ক) ধারা সংযোজন করা হয়েছে। এ মামলায় তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ৭দিনের রিমান্ড চেয়ে আবেদন করলে আদালত বৃহষ্পতিবার দুইদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। উল্লেখ্য, কথিত ‘শিশু বক্তা’ রফিকুল ইসলাম মাদানী বিভিন্ন মাহফিলে রাষ্ট্র তথা সরকার বিরোধী ও আইন শৃঙ্খলা পরিপন্থী উস্কানী ও বিদ্বেষমূলক বক্তব্য ডিজিটাল মাধ্যমে প্রদান করেন। যা তার নির্দেশে ইউটিউবসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশ পায়। রফিকুল ইসলাম মাদানীর উস্কানীমূলক বক্তব্যের কারনে তার অনুসারীরা গত ২৬ মার্চ ঢাকা বায়তুল মোকাররম মসজিদ, ব্রাহ্মণবাড়ীয়া, চট্রগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় ভাংচুর, অগ্নিসংযোগ ও নাশকতা করে। এতে হতাহতের ঘটনাও ঘটে। এছাড়াও তিনি বিভিন্ন সময়ে রাষ্ট্রের ভাবমূর্তি ও সুনাম ক্ষুন্ন করা, জনমনে আতংক সৃষ্টি, সামাজিক তথা রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা বিঘœ ঘটানো, আইন শৃঙ্খলা বিনষ্ট করা, প্রতিবেশী রাষ্ট্রের সঙ্গে শত্রুতাসহ সরকারের প্রতি ঘৃণারভাব সৃষ্টি এবং সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করার উদ্দেশ্যে দেশের সরল ও ধর্মানুরাগী মানুষের ধর্মীয় মুল্যবোধ ও ধর্মী অনুভুতিতে আঘাত করে বক্তব্য প্রদান করেন, যা ইউটিউবসহ বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয়। তিনি বাড়িয়ালী এলাকাস্থিত নিজের ‘মারকাজুল নূর আল ইসলামিয়া মাদরাসায়’ বসে দেশদ্রোহ ও সরকার বিরোধী কার্যকলাপ এবং নাশকতা কর্মকান্ড ঘটানোর পরিকল্পনা করতেন। তিনি সরাসরি সশস্ত্র জিহাদের ডাক দেন, এবং এক্ষুনি জিহাদের উপযুক্ত সময় বলে সবাইকে জিহাদে অংশ নেওয়ার আহবান জানিয়ে জঙ্গীবাদ ও সন্ত্রাসী কর্মকান্ডে উস্কানির ভিডিও চিত্র ফেসবুক, ইন্টারনেট ও ইউটিউবের বিভিন্ন চ্যানেল ও পেজে আপলোডের মাধ্যমে ছড়িয়ে দেন বলে দায়েরকৃত মামলায় উল্লেখ করা হয়।
×