ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

বরিশালের একমাত্র অভিরুচি সিনেমা হলও বন্ধের পথে

প্রকাশিত: ১২:৩৩, ১৫ এপ্রিল ২০২১

বরিশালের একমাত্র অভিরুচি সিনেমা হলও বন্ধের পথে

স্টাফ রিপোর্টার, বরিশাল ॥ প্রাচ্যের ভেনিসখ্যাত বরিশালে একসময় গড়ে উঠেছিল ১৮টি সিনেমা হল। তখন হল মালিকদের ব্যবসা ছিল রমরমা। তবে পরিস্থিতি এখন পুরোটাই উল্টো। সময়ের পরিক্রমায় জৌলুশের সাথে দর্শক খরায় ভুগছে সিনেমা হলগুলো। দর্শকের অভাবে ইতোমধ্যে জেলার ১৭টি সিনেমা হল বন্ধ হয়েছে। কোনো রকমে চালু থাকা বরিশাল নগরীর একমাত্র অভিরুচি সিনেমা হলটিও যেকোনো সময় বন্ধ হতে পারে। বেশ কয়েক বছর ধরে হলটিতে ঈদ ছাড়া অন্যসময় দর্শক হয়না বললেই চলে। তবে করোনার প্রভাবে অবস্থা এতোটাই শোচনীয় যেকোনো সময় বন্ধ হতে পারে অভিরুচি সিনেমা হলটি। জেলা সহকারী তথ্য কর্মকর্তা লেনিন বালা জনকণ্ঠকে জানান, জেলায় মোট সিমেনা হল ছিলো ১৮টি। বেশ কয়েক বছরের হল মালিকরা লোকসানের কারণে ১৭টি সিনেমা হল বন্ধ করে দিয়েছেন। নগরীতে চারটি সিনেমা হলের মধ্যে বর্তমানে তিনটিই বন্ধ। শুধু অভিরুচি সিনেমা হলটি চালু রয়েছে। তিনি আরও বলেন, জেলা শহরসহ দশ উপজেলার বন্ধ হওয়া সিনেমা হলের মধ্যে রয়েছে, নগরীতে কাকলী, বিউটি ও সোনালি। মেহেন্দিগঞ্জে আজাদ, রাজলক্ষী, মেঘনা, পদ্মা, বাকেরগঞ্জে রংধনু, সঙ্গীতা, ঘোমটা, বাবুগঞ্জে আনারকলি, উজিরপুরে স্বপ্নপুরী, বানারীপাড়ায় সোহাগ, গৌরনদীতে নাহার, আগৈলঝাড়ায় তাজমহল, মুলাদীতে মামুন এবং হিজলায় রূপমহল সিনেমা হল। বরিশালের সংস্কৃতিকর্মীরা জানান, একসময় বিনোদনের অন্যতম মাধ্যম ছিলো সিনেমা হল। পরিবার নিয়ে হলে যাওয়া যেতো। তবে নব্বইয়ের শেষদিকে চলচ্চিত্রে অশ্লীলতা শুরু হওয়ার ফলে পরিবার নিয়ে হলে যাওয়া কমে যায়। তবে অশ্লীলতার আগে সিনেমাকে হুমকিতে ফেলে পাইরেসি। সেটাও নব্বই দশকের শেষের দিকে। সিডি ও পরে ডিভিডির মাধ্যমে পাইরেসি শুরু হয়। এখনও ইউটিউবে পাইরেসি রয়েছে। নব্বই দশকের শেষভাগে বেসরকারি টিভি চ্যানেলের প্রভাব রয়েছে। এরপর ঘরে ঘরে স্যাটেলাইট টিভির বিস্তারে সিনেমা হলের কদর দিন দিন কমতে শুরু করেছে। চলতি দশকে তথ্য প্রযুক্তির প্রসারে হাতের নাগালে আসে ইন্টারনেট। এখন ইউটিউব, নেটফ্লিক্স, আমাজন প্রাইম, দেশি ওয়েবসহ নানা প্ল্যাটফর্ম তৈরি হয়েছে। মুহুর্তেই মুঠোফোনে বা ঘরে বসেই সবকিছু দেখা যায়। এছাড়া গত দুই দশকে মূলধারার মানসম্মত চলচ্চিত্রের অভাবে দর্শকরা সিনেমা হল থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। অভিরুচি সিনেমা হলের ব্যবস্থাপক রেজাউল কবির বলেন, প্রায় ২২ বছর ধরে এ প্রতিষ্ঠানে রয়েছি। প্রথমে ছিলেন টিকিট বিক্রেতা, পদোন্নতি পেয়ে এখন ব্যবস্থাপক হয়েছি। চাকরি জীবনের প্রথমদিকে দর্শক ছিলাম। তখন শীতাতপনিয়ন্ত্রিত এ সিনেমা হলে প্রতিদিন চারটি শো চলতো। দর্শকের ভিড় থাকতো। ঈদ বা ছুটির দিনে সিনেমা হলে ১২শ’ আসনের একটিও ফাঁকা থাকতোনা। পরিবার নিয়ে দর্শকরা সিনেমা হলে হলে আসতো। টেকনিশিয়ান, অপারেটর ও টিকিট বিক্রেতা মিলিয়ে ৪০ জনের বেশি কর্মাচারী ছিল এ সিনেমা হলটিতে। এখন এসব শুধুই স্মৃতি। দিনে দিনে দর্শক কমেছে। কোনো কোনো শো-তে তিন-চারজন দর্শকও হয়না। দর্শকের অভাবে মাঝে মধ্যে শো বন্ধ রাখতে হয়। ফলে চাকরি হারিয়েছে সিনেমা হলের বেশিরভাগ কর্মচারি। পূর্বের ৪০ জন কর্মচারির স্থলে বর্তমানে চারজন কর্মচারি দিয়ে কাজ চলছে। এ অবস্থা চলতে থাকলে হয়তো অভিরুটি সিনেমা হলটিও অন্যান্য হলের মতো বন্ধ হয়ে যাবে। ঐতিহ্যবাহী এ সিনেমা হলটি বাঁচাতে সরকারকে এগিয়ে আসার অনুরোধ করেছেন রেজাউল কবির।
×