ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

ড. ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরী

বাংলা নববর্ষে করোনা নির্মূলে ধানশী নৈবেদ্য

প্রকাশিত: ২০:৪৮, ১৪ এপ্রিল ২০২১

বাংলা নববর্ষে করোনা নির্মূলে ধানশী নৈবেদ্য

অমিত প্রাণস্পন্দনে পরিপূর্ণ বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নববর্ষ অবগাহনে জনপ্রিয়তায় অতুলনীয় সঙ্গীতের পঙক্তি উচ্চারণে নিবন্ধের সূচনাপাঠ। ‘এসো হে বৈশাখ এসো এসো/ তাপস নিশ্বাস বায়ে মুমূর্ষুরে দাও উড়ায়ে,/ বৎসরের আবর্জনা দূর হয়ে যাক, যাক পুরাতন স্মৃতি,/ যাক ভুলে যাওয়া গীতি, অশ্রুবাষ্প সুদূরে মিলাক।/ মুছে যাক গ্লানি, ঘুচে যাক জরা, অগ্নি¯œানে শুচি হোক ধরা/ রসের আবেগ রাশি শুষ্ক করি দাও আসি,/ আনো আনো আনো তব প্রলয়ের শাঁখ মায়ার কুম্বেটিজাল যাক দূরে যাক।’ দেশীয় ও বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে করোনা আতিমারীর দ্বিতীয় তরঙ্গের প্রবল সংক্রমণ ও প্রাণসংহারের উর্ধমুখী কঠিন দুঃসময়ে বাংলা নববর্ষ উদযাপনে বাঙালীর হৃদয়ে নবতর মানবিক চেতনার উন্মেষ ঘটেছে। বাঙালী বরাবরই দৃঢ়চেতা ও আত্মপ্রত্যয়ী এবং বীরত্বের গৌরবগাথায় অভিষিক্ত। দুর্ভেদ্য ভয়কে জয় করে বিজয় পতাকা উড্ডীন করার মধ্যে বাঙালী জাতির কৃষ্টি-সংস্কৃতি-ঐতিহ্যের বিকাশমানতা প্রতিষ্ঠিত। স্বাস্থ্য সুরক্ষার স্বার্থে জনসমাগম ব্যাপৃত আড়ম্বর পরিবেশে নববর্ষ উদযাপন ব্যাহত হলেও প্রত্যেক বাঙালী পরিবার-বাঙালী হৃদয় নববর্ষকে সাবলীল ও স্বাভাবিকতায় উপভোগ করার লক্ষ্যে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। ষড়ঋতুর মহাজাগতিক অপরূপ বিদায়-বরণে ঋদ্ধ বাঙালী সংস্কৃতির সঞ্চারিত আবেগ-আনন্দ-নান্দনিক-মাঙ্গলিক মূল্যবোধকে অত্যুজ্জ্বল রাখার ক্ষেত্রে জাতি কখনও কোন সঙ্কটকে অন্তরায় মনে করে না। বৈশাখের প্রথম প্রহরে রবিঠাকুরের উল্লিখিত গান উপস্থাপনে সকল অন্ধকারকে দূরীভূত করে জগতকে আলোয় উদ্ভাসিত করার নিগূঢ় ব্রত গ্রহণ করবে নিশ্চয়ই। এটি সর্বজনবিদিত যে, বিশ্বের প্রায় সকল জাতিগোষ্ঠীর নববর্ষ উদযাপনের সংস্কৃতি, ঐতিহ্য ও রীতিনীতি দীর্ঘ প্রাচীন ইতিহাসসমৃদ্ধ। এশিয়া, ইউরোপ, আফ্রিকা, উত্তর ও দক্ষিণ আমেরিকার বহু দেশে জাতিগোষ্ঠী, উপজাতি বা আদিবাসী প্রত্যেকেই প্রায় নিজস্ব পঞ্জিকা বা নির্ধারিত তারিখ অনুসারে নববর্ষ উদযাপনের মাধ্যমে বংশ পরম্পরায় জাতিগত স্বাজাত্য কৃষ্টির অনুশীলনকে ধারণ করে আসছে। মূলত এরই প্রেক্ষিতে তৈরি হয়েছে বিভিন্ন মাত্রিকতায় বিশ্বজনীন আধুনিক সাংস্কৃতিক পরিম-ল। বেশ কিছু জাতিগোষ্ঠীর মতো বাংলা নববর্ষের প্রচলন ও উদযাপন ভারতবর্ষের কৃষি কাঠামোর পরিবর্তন বাস্তবতায় নিরূপিত। এদেশে দীর্ঘকাল ধরে অপরিনাম-সঙ্কীর্ণ একদেশদর্শী এবং সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী অনর্থক বাংলা নববর্ষ উদযাপনকে ধর্মান্ধ-বৈশিষ্ট্যে বিরাগী করার অপচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। আরব বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বা অন্যান্য জাতি যেমন- ইংরেজ, তাইওয়ান, স্কটিস এবং ইউরোপীয় অনেক ভাষাভাষী জনগোষ্ঠী নানা অভিধায় ভাবার্থ আবেগে নববর্ষ উদযাপনে প্রকীর্ণ দৃষ্টান্ত হয়ে আছে। প্রায় সাড়ে চার হাজার বছর আগে ব্যাবিলন সভ্যতায় এবং ইরান, চীন, ভিয়েতনাম, লাওসসহ প্রায় দেশে নববর্ষ উদযাপনের প্রেক্ষিত জগজ্জয়ী। উল্লেখ্য, লাওসের নববর্ষ উৎসব যে দিন থেকে শুরু হয়, কাকতালীয়ভাবে সেদিনই বাংলাদেশের ১ বৈশাখ। খ্যাতিমান কবি ও প্রাবন্ধিক সুভাষ মুখোপাধ্যায়-এর মতানুসারে আসমুদ্র হিমাচল আমাদের এই দেশের নাম বঙ্গদেশ বা বাংলা দেশ। বঙ্গ শব্দের সঙ্গে আল্ যুক্ত হয়ে দেশের নাম বাঙ্গাল বা বাঙ্গালা হয়েছে। আল্ বলতে শুধু খেতের আল নয়, ছোট-বড় বাঁধও বোঝায়। বাংলাদেশ জলবৃষ্টির দেশ। ছোট-বড় বাঁধ না দিলে বৃষ্টি, বন্যা আর জোয়ারের হাত থেকে ভিটে-মাটি-খেত-খামার রক্ষা করা যায় না। যে অঞ্চলে জল কম হয়, সে অঞ্চলেও বর্ষার জল ধারণ করার জন্যে বাঁধের প্রয়োজন। প্রায়োগিক জল-ব্যবস্থাপনার কারণেই ‘আল’ এর সংখ্যাভিত্তিক অধিকতর প্রতুলতায় জমির বিভাজন প্রক্রিয়ায় এদেশের নামাকরণ হয়েছে বাঙ্গালা বা বাংলাদেশ। সচেতন সকল মহলের সম্যক জানা যে, বিপ্রতীপ অনুধ্যানে ব-দ্বীপ খ্যাত ক্ষুদ্র আয়তনের স্বাধীন বাংলাদেশ শুধু ভারতবর্ষ নয়, বিশ্ব ইতিহাসের ঐতিহ্যিক মূল্যায়নে বর্ণীল ও সুপ্রাচীন সমাজ ইতিহাসের অবিচ্ছেদ্য অধ্যায় হিসেবে বিবেচিত। রাঢ়-মৌর্য-তুর্কী-পাঠান-মোগল-ইংরেজ-পাকিস্তানীসহ নানা ভিনদেশী ঔপনিবেশিক শাসনকালে বাংলার সমাজ ইতিহাস মানব-গোষ্ঠীর কৃষ্টি, সংস্কৃতি, ভাষা, সাহিত্য, ধর্ম, চিন্তা-চেতনা ইত্যাদির অবর্ণনীয় ঘাত-প্রতিঘাতের মধ্য দিয়ে বর্তমান অবস্থানে উপনীত হয়েছে। গাঙ্গেয় নদী বিধৌত প্রাকৃতিক সবুজ আচ্ছাদিত এ অঞ্চলে আর্যদের আগমনের প্রায় পনেরো শ’ বছর আগে বাঙালীদের জীবনযাত্রার স্বগত উন্মীলন। কৃষিভিত্তিক সংস্কৃতির পাঠোদ্ধারে বাঙালী জাতির অবদান বিবেচনা সর্বজনস্বীকৃত। দ্রাবিড় সভ্যতার ক্রমবিস্তারের আড়ালে বাঙালী জনগোষ্ঠী আর্য ও অনার্যদের সংঘাত রসায়নে অভিমিশ্র ভাষা-ঐতিহ্য-কৃষ্টির বহমানতায় সমৃদ্ধ হয়ে ওঠে। ফলশ্রুতিতে শতাব্দীর পর শতাব্দী ব্যতিক্রম প্রত্যয় সৃজন করে স্বয়ংসম্পূর্ণ গ্রাম ব্যবস্থাকে বিশ্বপরিম-লে অগ্রগণ্য করে তোলে। অধ্যাপক আলী নেওয়াজের মতে, ‘তথাকথিত সভ্য আর্যরা এদেশে এসে অনার্যদের সংস্কৃতির বারো আনাই মেনে নিয়েছিল, নবান্ন উৎসবটিও তারা বাদ দেয়নি, যার রেওয়াজ আজও বাংলাদেশে চলছে।’ স্মরণাতীত কাল থেকে ধন-ধান্যে ভরা অগ্রহায়ণ মাসের নবান্ন উৎসবকে উপলক্ষ করে বাঙালীর বছর গণনা পরবর্তীতে মুসলিম আমলেও যে প্রচলিত ছিল, বহু সূত্র থেকে তার সত্যতা সমর্থনপুষ্ট। প্রায় পাঁচ শ’ বছর আগে কবি মুকুন্দরাম তার চন্ডীমঙ্গল কাব্যে ‘ধন্য অগ্রহায়ণ মাস- ধন্য অগ্রহায়ণ মাস, বিফল জনম তার নাহি যার চাষ’ পঙক্তির মাধ্যমে সে যুগের কৃষিজীবী বাঙালীর সন গণনার যথার্থতা সত্যাগ্রহী করেছেন। ঐতিহাসিক বহু তথ্য থেকে এটি স্পষ্ট যে, বাংলাদেশে আর্য হিন্দুদের শত বিরেধিতা সত্ত্বেও প্রচলিত অনার্যদের প্রচীন আমলের কৃষিভিত্তিক সংস্কৃতিÑ বধূবরণ, অন্নপ্রাশন, সংক্রান্তি, গৃহ প্রবেশ, জমি কর্ষণ, ফসল তোলা, আচার-অনুষ্ঠান, ব্রত ও প্রথার বিলুপ্তি ঘটেনি। বরং বৌদ্ধ, হিন্দু এবং সূফী মনীষীদের মাধ্যমে ইসলাম ধর্ম প্রচারের পরও এ ধরনের কৃষি সংস্কৃতির উপাদানগুলো বাঙালী ঐতিহ্যের নিয়ামক হিসেবে প্রধান আচার-অনুষ্ঠান ও মঙ্গল-আনন্দের কর্মকা-ে অস্তিত্বকে সমুজ্জ্বল করেছে। এ সব আচার-অনুষ্ঠানকে ‘হিন্দুয়ানী’ বলে আখ্যায়িত করার অবিরাম প্রচেষ্টা যে এ দেশের কিছু সংখ্যক কুশিক্ষিত ধর্ম-ব্যবসায়ী ও সাম্প্রদায়িক-সম্প্রীতিবিরোধী ব্যক্তিবর্গের নষ্ট-ভ্রষ্ট মানসিকতার পরিচায়ক তা বলার অপেক্ষা রাখে না। চমকপ্রদ ও সমাদৃত অনন্য সংযোজন হচ্ছে, নববর্ষের বাংলা সনের ‘সন’ শব্দটি আরবী, পহেলা বৈশাখের ‘পহেলা’ শব্দটি ফরাসী এবং বছরের প্রারম্ভে ব্যবসাবাণিজ্যে প্রচলিত ‘হালখাতা’ শব্দটি ইসলামী। মুঘল স¤্রাট আকবর ৯৬৩ হিজরী (চান্দ্র বর্ষ) ২ রবিউসসানি, রোজ শুক্রবার, ইংরেজী ১৪ এপ্রিল ১৫৫৬ সাল থেকে ১ বৈশাখ পালনের রেওয়াজ শুরু করেন। সৌর বছর (বঙ্গাব্দ) ও চান্দ্রবর্ষ (হিজরী) উভয়ের অপূর্ব সন্ধিক্ষণে রাজজ্যোতিষী আমির ফতেউল্লাহ সিরাজীর হিসাব-নিকাশের মাধ্যমে শুভক্ষণ গণনার দিন হিসেবে ১ বৈশাখকে নববর্ষ উদযাপনের দিন হিসেবে ধার্য করা হয়। বর্ষ গণনায় প্রতিটি মাসের ৩০ বা ৩১ দিনের নামও ছিল ভিন্ন ভিন্ন প্রক্রিয়ায় শোভিত। প্রণিধানযোগ্য বিষয় হচ্ছেÑ সম্রাট আকবরের পৌত্র স¤্রাট শাহজাহানই বিভিন্ন গ্রহ-নক্ষত্রের নামানুসারে পুরো মাসকে সপ্তাহে বিভক্ত করে দিনগুলোর নাম নির্ধারণ করে পাশ্চাত্য সময়-সাল গণনার সঙ্গে অভিন্নতা নির্দিষ্টকরণে রবিবারকে সপ্তাহের ১ম দিন হিসেবে ধার্য করেছিলেন। বিভিন্ন দেবতা-গ্রহের নামানুসারে দিনপঞ্জির পর্যায়ক্রম ছিল অপূর্ব। সূর্য দেবতার নামে রবিবার, শিব দেবতার নামে সোমবার, মঙ্গল গ্রহের নামে মঙ্গলবার, বুধ গ্রহের নামে বুধবার, বৃহস্পতি গ্রহের নামে বৃহস্পতিবার, শুক্র গ্রহের নামে শুক্রবার এবং শনি গ্রহের নামে শনিবার রাখার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। এই বঙ্গাব্দ গণনা শুরু হয়েছিল হিজরী সনকে উপেক্ষা করে নয়, বরং হিজরী ৯৬৩ সালকে অধিকতর গুরুত্ব দিয়ে শুধু ফসল তোলার সময়কে সৌরবর্ষের সঙ্গে সামঞ্জস্য করার লক্ষ্যে সূর্যকে মানদ- ধরে সৌরবর্ষ অথবা ফসলি বর্ষ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। কিন্তু এই সৌরবর্ষ ও চান্দ্র বর্ষের ব্যবধানকে যথাযথভাবে সংযোজন করে নতুন বঙ্গাব্দের পরিচয় বহনে এই দিনের সূচনা এবং এটি চান্দ্র ও সৌর বছরের নবতর সম্মিলন। নক্ষত্র ম-লে চন্দ্রের আবর্তনে বিশেষ তারাসমূহের অবস্থানের ওপর ভিত্তি করেই বঙ্গাব্দের বার মাসের নামকরণ করা হয়েছে। সূর্যসিদ্ধান্ত নামে জ্যোতির্বিজ্ঞান বিষয়ক প্রাচীন গ্রন্থ থেকে নেয়া নক্ষত্র তথা বিশাখা, জ্যেষ্ঠা, উত্তরাষাঢ়া, শ্রবণা, পূর্বভাদ্রপদ, অশ্বিনী, কৃত্তিকা, মৃগশিরা, পুষ্যা, মঘা, উত্তরফল্গুনী, চিত্রা ইত্যাদির নামানুসারে বাংলা মাসের নাম যথাক্রমে বৈশাখ, জ্যৈষ্ঠ্য, আষাঢ়, শ্রাবণ, ভাদ্র, আশ্বিন, কার্তিক, অগ্রহায়ণ (মাঘশীর্ষ), পৌষ, মাঘ, ফাল্গুন, চৈত্রের নামকরণ হয়েছে। এটা সুস্পষ্ট প্রতীয়মান, বাঙালীর নববর্ষের প্রচলন ও বরণ করার যে শাশ্বত অনুষ্ঠান তা সকল কিছুই মুসলমান শাসকদেরই সৃষ্ট এবং চিরায়ত বাংলা সংস্কৃতিরই আবর্তিত সামাজিকীকরণ। এটি শুধু বাঙালী জাতীয় কৃষ্টিকে সমৃদ্ধ করে না, বাঙালী সমাজের কৃষি ও অন্যান্য আর্থ-সামাজিক প্রতিটি প্রাতিষ্ঠানিক কর্মকা-ে নতুন অলঙ্কারে করেছে ভূষিত। সঠিক ইতিহাস চর্চা ও পরিচর্যায় এটি সুপ্রতিষ্ঠিত যে, বাংলা নববর্ষ উদযাপন কোন বিশেষ ধর্ম বা সম্প্রদায়ের উৎসব নয়। এটি ধর্ম-বর্ণ-দল-মত-অঞ্চল নির্বিশেষে বাঙালীর সহজাত ও চিরন্তন অভিব্যক্তিরূপে প্রকাশিত এবং সমাদৃত। বাংলাদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমানদের বিভ্রান্ত করার উদ্দেশ্যে অন্ধকারের অশুভ শক্তির কোন ধরনের কূট প্ররোচনা-প্রচারণা ও দুরভিসন্ধির অপকৌশল-উদ্যোগ কোনভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। প্রণত অনুষঙ্গে জাতীয় কবি নজরুলের ‘পল্লী-জননী’ কবিতার চরণ নিবেদনে প্রতিটি ঋতুর প্রকৃতি ও চরিত্র অনুধাবনের তাৎপর্য বাঙালীর হৃদয় গভীরে প্রোথিত করতে হবে। ‘এ কি অপরূপ রূপে মা তোমায় হেরিনু পল্লী-জননী।/ ফুলে ও ফসলে কাদা মাটি জলে ঝলমল করে লাবণী॥/ রৌদ্রতপ্ত বৈশাখে তুমি চাতকের সাথে চাহ জল,/ আম কাঁঠালের মধুর গন্ধে জ্যৈষ্ঠে মাতাও তরুতল।/ ঝঞ্ঝার সাথে প্রান্তরে মাঠে কভু খেল ল’য়ে অশনি॥/ কেতকী-কদম-যূঁথিকা কুসুমে বর্ষায় গাঁথ মালিকা,/ পথে অবিরল ছিটাইয়া জল খেল চঞ্চলা বালিকা।/ তড়াগে পুকুরে থই থই করে শ্যামল শোভার নবনী॥/ শাপলা শালুকে সাজাইয়া সাজি শরতে শিশিরে নাহিয়া।/ অঘ্রাণে মা গো আমন ধানের সুঘ্রাণে ভরে অবনী॥/ শীতের শূন্য মাঠে তুমি ফের উদাসী বাউল সাথে মা,/ ভাটিয়ালী গাও মাঝিদের সাথে, কীর্তন শোনো রাতে মা।/ ফাল্গুনে রাঙা ফুলের আবীরে রাঙাও নিখিল ধরণী॥’। কী অসাধারণ উপমায় কবি নজরুল প্রতিটি ঋতুকে মহিমান্বিত করেছেন। দেশবাসী বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মের উপলব্ধিতে যথার্থ অর্থে তা জ্ঞাপিত করা না হলে বাঙালীর সমাজ-ইতিহাস রুদ্ধ হওয়ার সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে। নববর্ষের সার্থকতা নিরূপণে বার বার রবিঠাকুর-নজরুলের মতো বাংলার ঐতিহ্য আবিষ্কারে নিবেদিত স্বনামধন্য কবি-সাহিত্যিকদের রচনাকে নিবিড় স্মরণযোগ্য করতেই হবে। করোনা অতিমারীর আশঙ্কা-আতঙ্ক নিধনে বাংলা নববর্ষ বাঙালীর অন্তর-নিকেতন অধিকতর বিকশিত করার নিষিক্ত আবেদনে পরিদৃষ্ট হোকÑ এই প্রত্যাশাই ব্যক্ত করি শুভ বাংলা নববর্ষে। লেখক : শিক্ষাবিদ, সমাজ-অপরাধবিজ্ঞানী, সাবেক উপাচার্য চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়
×