ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

টাঙ্গাইলের ধলেশ্বরী নদীতে অবৈধ বালু উত্তোলন

প্রকাশিত: ১৫:৩৪, ২৪ জানুয়ারি ২০২১

টাঙ্গাইলের ধলেশ্বরী নদীতে অবৈধ বালু উত্তোলন

নিজস্ব সংবাদদাতা, টাঙ্গাইল ॥ টাঙ্গাইলের ধলেশ্বরী নদীতে বাংলা ড্রেজারের মহোৎসব বসেছে। সদর উপজেলার দাইন্যা ইউনিয়নের চর ফতেপুর থেকে শ্যামার ঘাট পর্যন্ত প্রায় এক কিলোমিটার নদী এলাকা জুড়ে ৩টি বাংলা ড্রেজারে চলছে অবৈধ বালু উত্তোলন। এতে চরম ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে সদ্য নির্মিত হওয়া শাম্যার ঘাট ব্রীজ এবং অনেকটি পরিবারের জন্য নবনির্মিত গুচ্ছ গ্রামের আবাসন প্রকল্পের ঘরগুলো। ইতোমধ্যে বন্যায় ব্যাপক ভাঙ্গন কবলিত হয়েছে এই ইউনিয়নের নদী তীরবর্তী গ্রামগুলো। ভাঙনে গ্রামবাসী হারিয়েছেন শত শত একর আবাদী জমি। ইউনিয়নের ওয়ার্ড মেম্বারসহ প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় ড্রেজারগুলো চলমান থাকায় প্রতিবাদ করতে সাহস পাচ্ছে না গ্রামবাসী। একইভাবে সদর উপজেলার বাঘিল ইউনিয়নের ব্যাপারী পাড়া গ্রামের ধলেশ্বরী নদীর অংশেও চলমান রয়েছে একাধিক বাংলা ড্রেজার। জানা যায়, সদর উপজেলার দাইন্যা ইউনিয়নের চর ফতেপুর গ্রাম থেকে শ্যামার ঘাট পর্যন্ত প্রায় এক কিলোমিটার ধলেশ্বরী নদীর এলাকা জুড়ে অবাধে চলছে ৩টি বাংলা ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলন। বছর জুড়ে বালু উত্তোলন আর বিক্রি চলমান থাকলেও প্রশাসনের নেই কোন পদক্ষেপ। কালাম, রফিক নামে এই দুই বালু ব্যবসায়ী ধলেশ্বরী নদীর চর ফতেপুর এলাকায় চালাচ্ছে বালু উত্তোলন আর রফিক ও ফজলু নামের দুই বালু ব্যবসায়ী নদীর শ্যামার ঘাটে সদ্য নির্মিত ব্রীজের পাশ থেকেই অবৈধভাবে ড্রেজারে বালু উত্তোলন করছেন। এছাড়াও বাঘিল ইউনিয়নের ব্যাপারী পাড়া গ্রামের ধলেশ্বরী নদীর অংশেও অবৈধ ড্রেজার ব্যবসায় লিপ্ত রয়েছেন। অবৈধ এই বালু ব্যবসায়ীরা নদীর আশেপাশে গ্রামসহ বিভিন্ন এলাকায় বাড়ি ও পুকুর ভরাট করার চুক্তি নিচ্ছেন। স্থানীয় ও গ্রামবাসীর অভিযোগ করেন, অবৈধ এই বাংলা ড্রেজারে বালু উত্তোলনের ফলে তাদের ফসলী জমি, বসতভিটা ও গাছপালা নদী ভাঙনের কবলে পরেছে। গত তিন বছর যাবৎ নিয়মিতভাবে অবৈধ এই ড্রেজার চললেও স্থায়ীভাবে বন্ধ করার কোন উদ্যোগ নেয়নি প্রশাসন। তবে মাঝে মাঝে পুলিশ ও প্রশাসনের লোকজন এসে ড্রেজারের পাইপ ভাংচুর করলেও পরদিন থেকেই আবার তা পুনরায় চালু হয়েছে এই ড্রেজার ব্যবসা। এভাবে নিয়মিত ড্রেজার চালু থাকায় দিনদিনই বাড়ছে নদীর আশেপাশের এলাকায় বসতবাড়ি ভাঙনের শঙ্কা। সদর উপজেলার হুগড়া ইউনিয়নের কাজী বাজার, সাতানী হুগড়া পর্যন্ত প্রায় তিন কিলোমিটার নদী এলাকা জুড়ে ৪টি বাংলা ড্রেজারে চলছে অবৈধ বালু উত্তোলন। এতে চরম ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে সদ্য নির্মিত হওয়া এবং অনেকটি পরিবারের জন্য নবনির্মিত গুচ্ছ গ্রামের আবাসন প্রকল্পের ঘরগুলো। ইতোমধ্যে বন্যায় ব্যাপক ভাঙন কবলিত হয়েছে এই ইউনিয়নের নদী তীরবর্তী গ্রামগুলো। ভাঙনে গ্রামবাসী হারিয়েছেন শত শত একর আবাদী জমি। ইউনিয়নের প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় ড্রেজারগুলো চলমান থাকায় প্রতিবাদ করতে সাহস পাচ্ছে না গ্রামবাসী। যমুনা নদীর অংশে ও চলমান রয়েছে একাধিক বাংলা ড্রেজার। গ্রামবাসীর অভিযোগ, বিভিন্ন উপজেলায় ড্রেজার বন্ধে প্রশাসন নানা উদ্যোগ গ্রহণ করলেও সদর উপজেলায় কেন নেয়া হচ্ছে না এ ধরণের কোন পদক্ষেপ। এ নিয়ে গ্রামবাসীর মধ্যে উঠেছে নানা প্রশ্ন। স্থায়ীভাবে বাংলা ড্রেজার বন্ধের দাবি জানান চরফতেপুরসহ ব্যাপারী পাড়ার গ্রামবাসীরা। বক্তব্য নিতে চাইলে বালু ব্যবসায়ী রফিক উত্তেজিত হয়ে বলেন, আমি বক্তব্য দিব কেন প্রশাসনকে ম্যানেজ করেই করছেন এ বালু উত্তোলন আর বিক্রি। আপনেরা যত পারেন ভিডিও করেন, ছবি তুলেন, কোন সমস্যা নাই। ব্রীজের পাশ থেকেই কেন এবং কার অনুমতিতে এই বালু উত্তোলন করছেন এ প্রশ্নের উত্তর এড়িয়ে যান তিনি। সত্যতা নিশ্চিত করে দাইন্যা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান লাবলু মিয়া বলেন, রফিক, কালামসহ বেশকয়েকজন নিয়মিত চালাচ্ছেন এই ড্রেজার ব্যবসা। আমি প্রতিনিয়ত প্রশাসনকে অবগত করার পরও বন্ধ হয়নি অবৈধ ড্রেজারে এই বালু উত্তোলন আর বিক্রি। বন্ধ না হওয়ার ফলে এই ইউনিয়নে প্রতিনিয়তই বাড়ছে ড্রেজার ব্যবসায়ীর সংখ্যা।
×