ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কে শতাধিক স্পিড ব্রেকার

প্রকাশিত: ১৯:৫৮, ৫ ডিসেম্বর ২০২০

চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কে শতাধিক স্পিড ব্রেকার

মাকসুদ আহমদ, কক্সবাজার থেকে ফিরে ॥ ব্রেক কষতে কষতে হয়রান চালক। অহরহ নষ্ট হচ্ছে দুর্বল গাড়ি ও নবাগতদের গাড়ি। তিন ঘণ্টার যাত্রা পথে সর্বোচ্চ ঝুঁকিতে পর্যটকরা চার ঘণ্টা। মহাসড়কের পাশে থাকা স্কুল, কলেজ, মসজিদ, মাদ্রাসা এলাকায় শতাধিক ড্যান্সিং স্পিড ব্রেকার। দুর্ঘটনার ঝুঁকি নিয়ে পর্যটকরা চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার মাত্র ১৬০ কিলোমিটার পাড়ি জমাচ্ছে সৈকতে। অভিযোগ রয়েছে, বাংলাদেশের শুধু চট্টগ্রাম-কক্সবাজার সড়কেই রয়েছে এ ধরনের স্পিড ব্রেকার। যা সম্পূর্ণ ঝুঁকিপূর্ণ ও দুর্ঘটনার অনুকূলে। করোনাকালীন দীর্ঘ তিন মাস বন্ধ থাকলেও ১৭ আগস্ট থেকে খুলে দেয়া হয়েছে কক্সবাজারের হোটেল মোটেল রেস্তরাঁ। জমে উঠেছে সৈকতের বিভিন্ন পয়েন্টগুলো পর্যটকের ভিড়ে। চট্টগ্রামের জিরো পয়েন্ট তথা নিউমার্কেট মোড় থেকে যাত্রা শুরু করে কক্সবাজারের কলাতলী বীচ পর্যন্ত পৌঁছাতে প্রাইভেট গাড়িতেই সময় লাগছে কমপক্ষে চার ঘণ্টা। চট্টগ্রাম রেলস্টেশন থেকে যেমন দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ছুটে আসা সৈকত পিপাসুরা বাসে কিংবা প্রাইভেট পরিবহনে চড়ে বসছেন কক্সবাজারের উদ্দেশে। ভোগান্তির অন্ত নেই কর্ণফুলী সেতু পার হয়ে মইজ্যারটেক এলাকা থেকে চার লেনের রাস্তা শুরু কক্সবাজার মহাসড়কের। মইজ্যারটেক থেকে পটিয়ার কলেজ বাজার হয়ে আনোয়ারা যাচ্ছে গাড়ি কয়েকটি ড্যান্সিং স্পিড ব্রেকার। কলেজ বাজার থেকে বোয়ালখালী বাইপাস পর্যন্ত এর মধ্যেই কয়েকটি ড্যান্সিং স্পিড ব্রেকার। সেখান থেকে পটিয়া পৌরসভা পর্যন্ত কয়েকটি ড্যান্সিং স্পিড ব্রেকার প্রাইভেট গাড়িগুলোর নাকাল অবস্থা। পটিয়া থেকে সাতকানিয়া হয়ে দোহাজারি পর্যন্ত রাস্তায় চলাচল করা দুরূহ ড্যান্সিং স্পিড ব্রেকারের কারণে। কেরানীরহাট থেকে বান্দরবান সেই কক্সবাজার মহাসড়ক থেকেই যেতে হয় তেইশ কিলোমিটার। সেখানেও ধাপে ধাপে কেরানীরহাট থেকে বান্দরবান বাস চালকরা যেন যাত্রী টেনে তোলার কৌশল অবলম্বন করে। কেরানীরহাট থেকে লোহাগাড়া হয়ে চকরিয়া পর্যন্ত হাতেগোনা কয়েকটি ড্যান্সিং স্পিড ব্রেকার। আরও অভিযোগ রয়েছে, কর্ণফুলী ব্রিজ পার হলেই টোল প্লাজার বৃহদায়তন স্পিড ব্রেকার যেমন রয়েছে, তেমনি টোল প্লাজার অপর প্রান্তে রয়েছে ড্যান্সিং স্পিড ব্রেকার। বৃহদায়ন স্পিড ব্রেকারগুলো চোখে দেখা গেলেও চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কে দিনের বেলাতেই ড্যান্সিং স্পিড ব্রেকারগুলো চোখে পড়ে না। কারণ এসব ব্রেকারের ওপর সাদা রং থাকার কথা থাকলেও বালাই নেই। চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কে এসব ড্যান্সিং স্পিড ব্রেকারের কারণে অহরহ গাড়ি যেমন বিকল হচ্ছে, তেমনি দুর্ঘটনাও থেমে নেই। স্কুল, কলেজ, মসজিদ, মাদ্রাসা এমনকি এতিমখানাও যদি মহাসড়কের পাশে থাকে তাহলে তো কথাই নেই। প্রত্যেকটি পয়েন্টে পয়েন্টে ড্যান্সিং স্পিড ব্রেকার দিয়ে ভরিয়ে রাখা হয়েছে। প্রতিষ্ঠানগুলোর শুরুতে যেমন স্পিড ব্রেকার রয়েছে, তেমনি প্রতিষ্ঠানের গেট পার হলে দ্বিতীয় দফায় আবারও ড্যান্সিং স্পিড ব্রেকার দেয়া হয়েছে। চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কে প্রতিদিন যাতায়াত করছে প্রায় ২০ হাজার পর্যটক। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা এসব পর্যটক নগরীর জিরো পয়েন্টখ্যাত নিউমার্কেট পর্যন্ত স্পিড ব্রেকারের কোন দৃশ্য দেখতে পায় না। কিন্তু এরপরই শুরু স্পিড ব্রেকারের ভোগান্তি। কর্ণফুলী ব্রিজ পার হলেই শুরু হয় ঝুঁকিপূর্ণ এসব স্পিড ব্রেকারের অবস্থান। পটিয়া পৌরসভা পর্যন্ত মহাসড়কের পাশে থাকা প্রাইমারি স্কুলগুলোর সামনেও ড্যান্সিং স্পিড ব্রেকার তৈরি করে দিয়েছে সড়কের ঠিকাদাররা। এর কারণ হলো প্রতিষ্ঠানের সামনে স্পিড ব্রেকার না দিলে স্থানীয় এমপি থেকে শুরু করে চেয়ারম্যান ও প্রভাবশালীদের চাপের মুখে ঠিকাদাররা বাধ্য হচ্ছে স্পিড ব্রেকার বসাতে। এতে ব্রেক কষতে কষতে হয়রান হচ্ছেন প্রাইভেট গাড়ির চালকরা। ভোগান্তিতে পড়ছেন পর্যটকরা। বিশেষ করে চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার রাতের বেলায় ভ্রমণপিপাসুর সংখ্যা অনেক বেশি। কারণ ঢাকা থেকে যেসকল বাস ছেড়ে আসে সেগুলো রাত আড়াইটা থেকে তিনটার দিকে চট্টগ্রাম শহর অতিক্রম করে কক্সবাজারের মহাসড়কে উঠে যায়। ঘুমন্ত যাত্রীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে যখন প্রাইভেট গাড়িগুলো ড্যান্সিং স্পিড ব্রেকার অতিক্রম করে। দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ হিসেবে চিহ্নিত হচ্ছে রাতের বেলায় ড্যান্সিং স্পিড ব্রেকার। এ ব্যাপারে চট্টগ্রাম-দোহাজারি এবং কক্সবাজার সড়ক ও জনপথ বিভাগের বক্তব্য জানতে চাওয়া হলে প্রকৌশলীরা মুখ খুলতে রাজি হননি। তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক প্রকৌশলী জানিয়েছেন, ড্যান্সিং স্পিড ব্রেকার স্কুল কলেজ, মসজিদ, মাদ্রাসা ও এতিমখানার সামনে ছাড়া আর কোথাও নেই। কর্তৃপক্ষ ও ঠিকাদার এসব স্পিড ব্রেকারের বিরোধী। কিন্তু স্থানীয় এমপি, চেয়ারম্যানের চাপ ছাড়াও কিছু প্রভাবশালী মহলের চাপের মুখে আমরা বাধ্য হই স্পিড ব্রেকার স্থাপনে।
×