ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

বাউফলে শীষ কাটা লেদা পোকার আক্রমণ

প্রকাশিত: ১৭:৩৩, ৪ ডিসেম্বর ২০২০

বাউফলে শীষ কাটা লেদা পোকার আক্রমণ

নিজস্ব সংবাদদাতা, বাউফল ॥ বাউফলে লেদা পোকার আক্রমণে আধা-পাকা ধান কেটে ঘরে তুলছে কৃষক। এর ফলে তাদের মধ্যে এখন হতাশা দেখা দিয়েছে। ধুলিয়া ইউনিয়নের মঠবাড়িয়া গ্রামের কৃষক মজিবর ফকির জানান, তিনি এ বছর সাড়ে ৩ কানি (৯৪০ শতাংশ) জমিতে ইরি-৫২ জাতের ধান চাষ করেছেন। কিন্তু শীষকাটা লেদা পোকার আক্রমণে তিনি আধা-পাকা ধান কেটে ঘরে তুলেছেন। কেবল মজিবরই নয়, আধা-পাকা ধান কেটে ঘরে তুলেছেন একই গ্রামের সেলিম ফকির, জাহাঙ্গির খান, নিজাম খান, জসিম খানসহ অনেক কৃষক। পোকার আক্রমন ঠেকাতে কেউ কেউ আবার ক্ষেতের আধা-পাকা ধানে ওষুধ ছিটাচ্ছেন। পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্লান্ট ফাইটোলোজির এসোসিয়েট প্রফেসর ড. শাহ মোঃ আশরাফুল ইসলাম বলেন, ‘অতি বৃষ্টিপাতের মতো আবহায়ার বিরুপ প্রভাব, রোদ, তাপমাত্রা, শীত, গাছের শক্তিমত্তা এসব কারণে বংশবৃদ্ধি ঘটে পোকার আক্রমণ হতে পারে। প্রশিক্ষণের মাধ্যমে পোকা দমন ও চাসবাসে কৃষক-কৃষাণীর সচেতনতা সৃষ্টি খুবই জরুরী হয়েছে।’ একই বিশ্ববিদ্যালয়ের এ্যানটোমোলোজির প্রফেসর ড. মোহাম্মদ আতিকুর রহমান বলেন, ‘আমাদের দক্ষিনাঞ্চলে এ ধরণের অবস্থা প্রায়ই হয়ে থাকে। ১০-১২ বছর আগে একবার পাতা মোড়ানো রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা গিয়েছিল। গত তিন বছর আগে একবার কারেন্ট পোকা বা ধানের বাদামি পোকার আক্রমণ হয়। লেদা পোকার আক্রমনের কথা গত বছরেও জানা গেছে। পরিমিত মাত্রায় বৃষ্টিপাত না হওয়া, তাপমাত্রা কিংবা গাছ থেকে গাছের দূরত্বের কারণে পাতার সংখ্যা বেড়ে গিয়ে তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেয়ে ধানের শীষকাটা লেদা পোকার আক্রমন হতে পারে। শীষ যখন বের হয়ে আসে তখন শীষ কাটা এই লেদা পোকা আক্রমন করে। এই মথগুলো এক একটি ২-৩শ ডিম দেয়। আর মাত্র একজোড়া মথই একটি ফসলের জমি ধ্বংস করতে যথেষ্ট। প্রাথমিক স্টেজে সচেতন থেকে কৃষদের উচিত এই মথগুলো মেরে ফেলা বা কন্টোলে নিয়ে আসা। কৃষি বিভাগেরও উচিত এই শীষ কাটা মথটিকে কৃষকদের চিনিয়ে দিয়ে সচেতন করা। রাতে এগুলো সক্রিয় থাকে। সহজে ও কম খরচে আলোর ফাঁদ, আক্রান্ত জমিতে গর্তকরে পাতা জমিয়ে রেখে সেখানে এগুলোকে আশ্রয় নিতে দিয়ে, পাকা শুরু হওয়ার আগে কেরশিনে ভিজিয়ে ধানের ওপর রশি টেনে দিয়ে ও আক্রান্ত ক্ষেতের অংশের চারপাশে ছাঁই ছিটিয়ে দিয়ে পোকাগুলো মেরে ও নিয়ন্ত্রণ করা। একই জমিতে বারবার একই ফসল ফলানো হলে ফসল তুলে নিয়ে গাছের গোড়াগুলো পুড়িয়ে জৈব সার হিসেবে জমিতে মিশিয়ে দেওয়া উচিত। কৃষি অফিসের উচিৎ কৃষকদের আবহাওয়ার সতর্কবার্তা দেওয়া ও লিফলেট বিতরণের মতো কাজের মাধ্যমে কৃষকদের সতর্ক করা।’ সংশ্লিষ্ট অফিস সুত্রে জানা গেছে, এবছর উপজেলায় প্রায় ৩৭ হাজার হেক্টর জমি আমন চাষ করা হয়েছে। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোঃ মনিরুজ্জামান বলেন, ‘আমাদের লোকজন লিফলেট বিতরণসহ মাঠে কৃষকদের সচেতন করে নিয়মিত প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছে। সার্বক্ষনিক ক্ষেতের অবস্থা জানানোর জন্য কৃষকদেরকেও অনুরোধ করা হয়েছে।’
×