ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

তেজস্ক্রিয়তা থেকে সুরক্ষা

প্রকাশিত: ২০:৩৭, ২২ নভেম্বর ২০২০

তেজস্ক্রিয়তা থেকে সুরক্ষা

বর্তমান বিশ্বে পারমাণবিক বিকিরণ ও তেজস্ক্রিয়তা অন্যতম প্রধান একটি সমস্যা। ভয়াবহ পরিবেশ দূষণের ভয়াবহ কারণও বটে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে স্থাপিত অসংখ্য পারমাণবিক বিদ্যুতের চুল্লি থেকে প্রতিনিয়ত নানা ক্ষতিকর রশ্মি বিকিরিত হয়েই চলেছে, যা মানব স্বাস্থ্য, জীবজগত, উদ্ভিদজগত এমনকি বৈশ্বিক নির্মল পরিবেশের জন্যও সমূহ ক্ষতিকর। রয়েছে পারস্পরিক বর্জ্য। এর বাইরেও সুবিশাল বিশ্বব্রহ্মাণ্ড তথা মহাকাশ থেকে প্রতিদিন ধেয়ে আসছে জানা-অজানা ক্ষতিকর নানা রশ্মি ও তেজস্ক্রিয়তা। মানুষের দৈনন্দিন জীবনেও প্রতিদিন প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ঘটে চলেছে ক্ষতিকর নানা বিকিরণ ও তেজস্ক্রিয়তা। যেমন চিকিৎসায় ব্যবহৃত এক্সরে, ক্যান্সার-টিউমার চিকিৎসায় ব্যবহৃত কোবাল্ট রে, গামা রশ্মিসহ নানা উপাদান এমনকি মোবাইল ফোন এবং এর টাওয়ার থেকে নানা বিকিরণ, যা বিপন্ন ও বিপদগ্রস্ত করে তুলেছে মানুষের জীবনের নিরাপত্তাকে। বিচক্ষণ পাঠক জাপানের হিরোশিমা-নাগাসাকি ও ফুকুশিমা পারমাণবিক দুর্ঘটনা, রাশিয়ার চেরনোবিলের ভয়াবহ দুর্ঘটনার কথা নিশ্চয়ই ভুলে যাননি, যার জের অদ্যাবধি টানতে হচ্ছে মানব সভ্যতাকে। কয়েক বছর আগে পোল্যান্ড এবং চীন থেকে বাংলাদেশে আমদানিকৃত গুঁড়া দুধেও পাওয়া গিয়েছিল ক্ষতিকর তেজস্ক্রিয় উপাদান ও মেলামাইন। তদুপরি বাংলাদেশও এখন প্রবেশ করেছে পারমাণবিক বিদ্যুত উৎপাদনের দিকে, যা রাশিয়া-ভারতের সহযোগিতায় নির্মিত হচ্ছে রূপপুরে। এতদিন পর্যন্ত দেশে পারমাণবিক বিকিরণ ও তেজস্ক্রিয়তা থেকে জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশ সুরক্ষায় কোন আইন বা গাইড লাইন ছিল না। এ নিয়ে স্বভাবতই ব্যাপক উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা বিরাজ করছিল বিভিন্ন মহলে। যে কারণে অনেকেই এর বিরোধিতা করেছিলেন। সম্প্রতি সরকার এ সংক্রান্ত দুর্যোগ ও দুর্বিপাক মোকাবেলায় একটি গাইডলাইন প্রস্তুত করেছে, যা গত সোমবার অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। প্রণীত হয়েছে ‘জাতীয় পারমাণবিক ও তেজস্ক্রিয়তা বিষয়ক জরুরী অবস্থা প্রস্তুতি ও সাড়া দান’ পরিকল্পনার খসড়া। জাতীয় সংসদে খুঁটিনাটি পর্যালোচনার পর চূড়ান্তভাবে অনুমোদিত হলে এটি পরিণত হবে আইনে। এর পাশাপাশি রূপপুর পাওয়ার প্লান্টের জন্য নিরাপত্তা পরিকল্পনাও নেয়া হয়েছে। তা না হলে আন্তর্জাতিক এ্যাটমিক এনার্জি এজেন্সির (আইএইএ) সম্মতি ও অনুমোদন পাওয়া যাবে না কেন্দ্রটি চালু করার জন্য। সে জন্য আইএইএ-এর পরিকল্পনা অবকাঠামো অনুসারে প্রণীত হয়েছে এই গাইড লাইন। তৎসঙ্গে সুরক্ষার ব্যবস্থাও নিতে হবে অবশ্যই। ১৯৬১ সালে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে পাকিস্তান সরকার কর্তৃক পাবনার রূপপুরে পারমাণবিক বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হলেও সত্যি বলতে কি কোন সরকারই এ বিষয়ে কার্যকর কোন উদ্যোগ নেয়নি। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর রূপপুরে পারমাণবিক বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণের ওপর সবিশেষ জোর দেয়। মূলত রাশিয়ার সহযোগিতায় ২ হাজার ৪০০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন দুটি ইউনিট স্থাপন করা হবে। এর জন্য ব্যয় ধরা হয়েছে ১২ দশমিক ৬৫ বিলিয়ন ডলার, যা টাকার অঙ্কে এক লাখ এক হাজার কোটি টাকা। নির্মাণের ৭ বছরের মাথায় কেন্দ্রটিতে বিদ্যুত উৎপাদনের কথা রয়েছে। প্রথম ইউনিটটি উৎপাদনে যাবে ২০২৩ সালের অক্টোবরে। ২০২৪ সালের অক্টোবরে বিদ্যুত উৎপাদন করবে দ্বিতীয় ইউনিটটি। উৎপাদন অব্যাহত থাকবে একটানা ৫০ বছর। বিনিয়োগের ১ হাজার ২৬৫ কোটি ডলারের মধ্যে রাশিয়া ঋণ হিসেবে দেবে ১১৩৮ দশমিক ৫ কোটি ডলার এবং বাকিটা বহন করবে বাংলাদেশ। ঋণের সুদ ধার্য করা হয়েছে লন্ডন আন্তঃব্যাংক সুদের হারের ওপর ১ দশমিক ৭৫ শতাংশ। এই কেন্দ্রে উৎপাদিত প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের দাম হিসাব করা হয়েছে তিন টাকা। রাশিয়া এবং রোসাতোম এ ব্যাপারে সর্বাত্মক সহযোগিতা করবে বলেই প্রত্যাশা। চুক্তির আওতায় প্রকল্পের বিস্তারিত নকশা প্রণয়ন, যন্ত্রপাতি ও জ্বালানি সরবরাহ, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, বিদ্যুত উৎপাদন সর্বোপরি ওয়ারেন্টি সময়কালে মেরামত, সংরক্ষণ-এ সবই করবে রোসাতোম। সেক্ষেত্রে পারমাণবিক ও তেজস্ক্রিয়তা দুর্যোগ মোকাবেলায় প্রণীত জাতীয় গাইডলাইন সহায়ক হবে নিশ্চয়ই।
×