ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

জামালপুরে স্থাপিত হচ্ছে অর্থনৈতিক অঞ্চল

প্রকাশিত: ১৬:৫০, ৩১ অক্টোবর ২০২০

জামালপুরে স্থাপিত হচ্ছে অর্থনৈতিক অঞ্চল

নিজস্ব সংবাদদাতা, জামালপুর ॥ অনগ্রসর ও দারিদ্র্যপীড়িত জেলা জামালপুরে অর্থনৈতিক কর্মকান্ড বাড়াতে জামালপুর সদর উপজেলার দিগপাইত ও তিতপল্লা ইউনিয়নে ৪৩৭ একর জায়গাজুড়ের স্থাপিত হচ্ছে জামালপুর অর্থনৈতিক অঞ্চল। গ্যাস ও বিদ্যুৎ স্টেশন স্থাপন, প্রশাসনিক ভবন অন্যান্য অবকাঠামো নির্মাণসহ এই অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রকল্পে চলছে বিশাল কর্মযজ্ঞ। জানা গেছে, ২৩ লাখ ২৪ হাজার জনগোষ্ঠী অধ্যুষিত জামালপুর জেলার প্রায় ১২ লাখ ৫২ হাজার মানুষ এখনো দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাস করছে। জামালপুরে শিক্ষার সূচকটিও অত্যন্ত নাজুক। জেলার শতকরা ৮০ ভাগ মানুষের প্রধান পেশা কৃষি। এ জেলায় এখনো বড় কোনো শিল্প-কারখানা গড়ে ওঠেনি। ফলে অন্য জেলার চেয়ে আর্থ-সামাজিক অনেক সূচকে পিছিয়ে আছে জামালপুর। এ অবস্থায় অপেক্ষাকৃত অনগ্রসর ও দারিদ্র্যপীড়িত জেলা জামালপুরে অর্থনৈতিক কর্মকান্ড বাড়াতে সাবেক বস্ত্র ও পাট প্রতিমন্ত্রী মির্জা আজম এমপির ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় একটি অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা)। সদর উপজেলার দিগপাইত ও তিতপল্লা ইউনিয়নে ৪৩৭ একর জমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া শেষে ইতিমধ্যে সেখানে দ্রুতগতিতে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের কার্যক্রম চলমান রয়েছে। সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, এই অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিনিয়োগকারীদের নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস দেওয়ার জন্য চলছে গ্যাসলাইনের কাজ। জেলার সরিষাবাড়ী উপজেলা থেকে প্রকল্প এলাকা পর্যন্ত গ্যাস পাইপলাইন স্থাপনের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। স্থাপন করা হয়েছে ৩৩/১১ কেভি বেদ্যুতিক সাব-স্টেশন। বিনিয়োগকারীদের জন্য ভূমি উন্নয়নের কাজও শেষ পর্যায়ে রয়েছে। অর্থনৈতিক অঞ্চলে প্রশাসনিক কর্মকা- পরিচালনার জন্য ছয়তলা ভিতের ওপর তিনতলা প্রশাসনিক ভবন নির্মাণের কাজ এরই মধ্যে শেষ হয়েছে। এখন চলছে ছয়তলা ভিতের ওপর তিনতলা দুটি ডরমিটরি ভবন নির্মাণের কাজ। দুটি ডরমিটরির ৯০ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। এ ছাড়া পরীক্ষামূলকভাবে গভীর নলকূপ স্থাপন, পাম্প হাউস নির্মাণ এবং তিন হাজার ঘনমিটার ধারণক্ষমতার ভূগর্ভস্থ জলাধার নির্মাণের কাজও চলছে জোরেশোরে। প্রকল্প এলাকায় গ্যাসলাইনের কাজ শেষ পর্যায়ে রয়েছে। জামালপুর অর্থনৈতিক অঞ্চলে অন্তত ৫০ হাজার মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে বলে মনে করা হচ্ছে। বেজা সূত্র জানায়, জামালপুর অর্থনৈতিক অঞ্চলে ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প সংস্থা বিসিককে এরই মধ্যে ৫০ একর জমি এবং বাংলাদেশ শিল্প কারিগরি সহায়তা কেন্দ্রকে (বিটাক) পাঁচ একর জমি দেওয়া হয়েছে। জাপানের একটি কৃষি ও খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ কোম্পানি জামালপুরে বিনিয়োগ করার কথা রয়েছে। এ ছাড়া বেজার গভর্নিং বোর্ডে কৃষিভিত্তিক প্রতিষ্ঠান রিলায়েন্স সলিউশন লিমিটেডসহ এখন পর্যন্ত ১২টি শিল্প প্লট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। তবে অর্থনৈতিক অঞ্চলের সঙ্গে যোগাযোগব্যবস্থার উন্নয়নেরও চিন্তাভাবনা চলছে। প্রকল্প এলাকাটি বন্যাপ্রবণ এলাকা হওয়ায় সেখানে মহাসড়কের সমান উচ্চতায় মাটি ভরাট করা হবে। যাতে অর্থনৈতিক অঞ্চলে বন্যার পানি ঢুকতে না পারে। পুরো অর্থনৈতিক অঞ্চলের চারপাশে সীমানা দেয়াল নির্মাণের কাজের ৮০ শতাংশ কাজই শেষ। ড্রেনেজ ব্যবস্থার কাজ শুরু হচ্ছে শিগগির। বিনিয়োগকারীদের জন্য রাস্তাঘাট, গ্যাস-বিদ্যুৎ, পানিসহ সব ধরনের পরিষেবা নিশ্চিত করা হবে। বেজার তথ্যমতে, বিনিয়োগকারীদের সব ধরনের সুযোগ-সুবিধাই দেওয়া হবে জামালপুর অর্থনৈতিক অঞ্চলে। কৃষিসমৃদ্ধ জেলাটিতে কৃষি ও মসলাজাত পণ্য, পাট, চামড়া, সিরামিক, ফার্মাসিউটিক্যালসহ বিভিন্ন পণ্য উৎপাদনের উপযোগী করে গড়ে তোলা হবে। একক কোনো পণ্য নয়; বিভিন্ন ধরনের পণ্য উৎপাদনের জন্য ভিন্ন ভিন্ন প্রকৃতির শিল্প স্থাপন করা হবে সেখানে। জামালপুরের জেলা প্রশাসক মো. এনামুল হক এ প্রসঙ্গে জনকণ্ঠকে বলেন, অর্থনৈতিক অঞ্চলের জন্য যারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তাদের সবাইকে প্রাপ্য ক্ষতিপূরণ দেওয়া হচ্ছে। প্রকল্প এলকায় প্রশাসনিক ভবন, গ্যাস, বিদ্যুতের ব্যবস্থাসহ অন্যান্য কার্যক্রম দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলেছে। ইতিমধ্যে শিল্পকারখানা স্থাপনের আগ্রহী প্রতিষ্ঠানকে প্লট বরাদ্দ দেওয়াও শুরু হয়েছে। জামালপুর অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠিত হলে বদলে যাবে জেলার আর্থ-সামাজিক অবস্থা। অর্থনৈতিক অঞ্চলটির জন্য স্থানীয়রা সব ধরনের সহযোগিতা করছে। সাবেক বস্ত্র ও পাট প্রতিমন্ত্রী মির্জা আজম এমপি এ প্রসঙ্গে জনকণ্ঠকে বলেন, অপেক্ষাকৃত অনুন্নত জামালপুর জেলাকে দেশের দশটি উন্নত জেলার তালিকায় নিয়ে নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্য নিয়ে জেলায় বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ চলমান রয়েছে। জেলাবাসীর দাবির প্রেক্ষিতে জামালপুর জেলাকে একটি শিল্পসমৃদ্ধ জেলায় পরিণত করে বিপুল সংখ্যক মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করার লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জামালপুর অর্থনৈতকি অঞ্চল প্রকল্পের অনুমোদন দেন। প্রকল্পের কাজও দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলেছে। প্রকল্পটি আস্তবায়িত হলে দক্ষিণ জামালপুর এলাকাটি একটি কর্মচঞ্চল এলাকায় পরিণত হবে। সেখানে প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে অন্ততপক্ষে লক্ষাধিক মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগসৃষ্টি হওয়াসহ জেলার ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে অর্থনৈতিক উন্নয়ন ঘটবে।
×