ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

জরুরী সেবা ৯৯৯

প্রকাশিত: ২০:৫৮, ২২ অক্টোবর ২০২০

জরুরী সেবা ৯৯৯

সমাজ যেমন নিয়ম-শৃঙ্খলার অধীনে তার কর্মপরিকল্পনাকে এগিয়ে নেয়, বিপরীতে বিধিনিষেধকে তোয়াক্কা না করাও কিছু মানুষের প্রবণতা। তাই সমাজবদ্ধ জনগণ সুষ্ঠু ও স্বস্তির জীবন কাটাতে যে মাত্রায় আগ্রহী, সেখানে বিবাদ-বিসম্বাদও থেমে থাকে না। ফলে শঙ্কা আর কলহমুক্ত বলয় তৈরি করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীকে সর্বদা সতর্ক এবং তৎপর থাকা আবশ্যিক কাজ হিসেবেই মেনে নিতে হয়। উন্নয়নশীল যে কোন দেশের নতুন ভৌত কাঠামো তৈরি থেকে শুরু করে প্রযুক্তি উদ্ভাবনের সঙ্গে যে মাত্রায় সম্মিলন ঘটাতে হয় সেখানেই হরেক রকম দুর্দশাও সমাজবদ্ধ মানুষদের বিচলিত ও উদ্বিগ্ন করে রাখে। খুন, জখম, গুম, নির্যাতন-নিপীড়ন থেকে নারীর সম্ভ্রমহানির যে অশুভ বার্তা তাও যাপিত জীবনের দৈনন্দিন ঘটনাক্রম, যা পরিস্থিতিকে উত্তপ্ত করে তোলে। উত্তেজক পরিস্থিতিকে সামলানো ছাড়াও বিপর্যস্ত ঘটনাপ্রবাহকে আইনবিধির আওতায় নিয়ে আসা পুলিশ বাহিনীর এক অসাধারণ কর্মযোগ। তা ছাড়া করোনার দুঃসময়েও সম্মুখ সারির এই লড়াকু আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যে মানবিক সচেতনতায় তাদের দায়িত্ব পালন করেছে তাও বিপন্ন পরিস্থিতির অনবদ্য কার্যক্রম। ত্রাণসামগ্রী বিতরণ থেকে সাধারণ মানুষের মাঝে স্বাস্থ্যবিধি পালন করাসহ আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখতে তাদের অবিস্মরণীয় অবদান সময়ের প্রাসঙ্গিক কর্মযোগ। ডিজিটাল সেবার মানে পুলিশের ‘৯৯৯’ মাধ্যমটিও আস্থা, বিশ্বাস আর ভরসার জায়গাটি শক্তভাবে তৈরি করেছে মানুষের মনে। দেশজুড়ে হত্যা আর নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে পুলিশের সরব প্রতিবাদ, প্রতিরোধ আর সমাবেশের মতো মানবহিতৈষী কর্মতৎপরতা দেশের এক অবর্ণনীয় প্রাপ্তি। পুলিশের এই ব্যাপক সমাবেশে সংশ্লিষ্ট উর্ধতন কর্মকর্তা ছাড়াও সমাজের বিশিষ্টজনের বক্তব্য জাতির জন্য এক অভাবনীয় কর্মদ্যোতনা। আইনের কঠোর প্রয়োগ ছাড়াও সামাজিক আর মানবিক সচেতনতায় সমস্ত অশুভ শক্তিকে পরাভূত করার উদাত্ত আহ্বান আসে পুলিশী সমাবেশ থেকে। আবার তথ্যপ্রযুক্তির ‘৯৯৯’ সামাজিক মাধ্যমটিও পুলিশ বাহিনীর সেবা প্রকল্পের এক অভাবনীয় কর্মযোগ। এখানে মানুষ তাদের সমস্ত অভাব-অভিযোগ পেশ করে প্রাসঙ্গিক সুযোগ-সুবিধা পাওয়ার তথ্যও উঠে এসেছে। গত ৩ বছর ধরে চালু হওয়া এই ৯৯৯ ফোনকলে প্রায় ২ কোটি ৪০ লাখ বার কল করার চিত্র দৃশ্যমান হয়েছে। প্রতিদিন ফোন আসে প্রায় ৩০ হাজারের ওপর। তবে কলগুলোর মধ্যে নারীর সংখ্যা কম, মাত্র ২০% আর ৮০% পুরুষ এই কল সেন্টারে নিয়মিত ফোন করে। এই হটলাইনে সেবা পেয়েছে প্রায় অর্ধ কোটি মানুষ। আবার সারাদেশে ঘটে যাওয়া নারী ধর্ষণের ব্যাপারেও অনেকের ফোনকল এসেছে। বহুল আলোচিত এসব ধর্ষণের কল এসেছে নারীদের কাছ থেকেই। শুধু তাই নয়, ‘৯৯৯’ বিভিন্ন সমস্যার প্রতিবিধান করতেও এগিয়ে এসেছে। সমাজে ঘটমান হরেক রকম অপরাধ, ঘুষ, দুর্নীতি, সন্ত্রাস, দুর্ঘটনা, বাল্যবিয়ে ঠেকানো, ধর্ষণসহ অগ্নিকা- ছাড়াও বিপদকালীন কিছু সমস্যা এই কলসেন্টারে অবহিত করা হলে তাৎক্ষণিক কর্ম তৎপরতায় তা সমাধানের ব্যবস্থা নেয়া হয়। তথ্যপ্রযুক্তির জাতীয় এই জরুরী সেবা ‘৯৯৯’ আইসিটি বিশেষজ্ঞ সজীব ওয়াজেদ জয়ের পরামর্শ ও নির্দেশনায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়। আর পুলিশের এই প্রযুক্তিগত জরুরী পরিষেবা জনবান্ধব এবং সর্বমানুষের কল্যাণে নিয়োজিত। সেবা প্রকল্পটি সাফল্যের ধারাবাহিকতায় সারাদেশে সম্প্রসারিত হয়ে আরও বহু মানুষের হিতসাধনে ব্রতী হবে, এমন আশা সংশ্লিষ্ট উর্ধতন কর্তৃপক্ষের। এই সেবা তিনটি মাধ্যমে জনগণের কাছে পৌঁছে যাচ্ছে- পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস এবং এ্যাম্বুলেন্স। সঙ্গত কারণেই জনবল বাড়াতে হয়েছে ৪ গুণ। সেবার মান এবং চাহিদা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সংশ্লিষ্ট দক্ষ মানব সম্পদ তৈরিও প্রাসঙ্গিক বিষয়। সে ব্যাপারে ‘৯৯৯’ তার অব্যাহত কর্মপ্রবাহকে আরও শক্তিশালী করে যাবে বলে আমাদের বিশ্বাস।
×