ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

বিশ্বব্যাংকের শঙ্কা

প্রকাশিত: ২০:৪১, ১৩ অক্টোবর ২০২০

বিশ্বব্যাংকের শঙ্কা

করোনা মহামারীর প্রভাবে চলতি বছরের শেষ নাগাদ বিশ্বে নতুন করে ১৫ কোটি মানুষ হতদরিদ্রের তালিকায় চলে আসতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে বিশ্বব্যাংক। অথচ গত দুই দশক ধরে বিশ্বব্যাপী কমে আসছিল দরিদ্র মানুষের সংখ্যা। এবার এই ধারাবাহিকতা হোঁচট খেয়েছে করোনা অতিমারীর কারণে। বিশ্বব্যাংকের এই আশঙ্কা অমূলক নয়। করোনাকে মোকাবেলা করতে গিয়ে দীর্ঘ কয়েক মাসের লকডাউন তথা শাটডাউন পরিস্থিতির মোকাবেলা করতে হয়েছে গোটা বিশ্বকে। এ সময়ে শিল্প-কলকারখানা, অফিস-আদালত, ব্যবসা-বাণিজ্য, আমদানি-রফতানি, যাতায়াত, পর্যটন প্রায় সবই ছিল কার্যত বন্ধ বা স্থবির। অতি জরুরী চিকিৎসাসেবা ও কার্যক্রম বাদে বাকি সব বন্ধ হয়ে যাওয়ায় স্বভাবতই মানুষের জীবন-জীবিকা পড়েছে রীতিমতো হুমকির মুখে। কর্মচ্যুত হয়েছেন অনেকেই। বাংলাদেশেও এর ব্যতিক্রম ঘটেনি। জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধি পাওয়ায়, চাকরি চলে যাওয়াসহ দৈনন্দিন আয়-রোজগার কমে যাওয়ায় অনেকেই ফিরে গেছেন নিজ নিজ গ্রামে। এমনকি গত কয়েক মাসে ঢাকা ছেড়ে গ্রামে চলে যেতে বাধ্য হয়েছেন লক্ষাধিক মানুষ। ফলে দরিদ্র মানুষের সংখ্যা ও দারিদ্র্যের হার বেড়েছে। ‘পভার্টি এ্যান্ড শেয়ার প্রসপারিটি-২০২০’ রিপোর্টে বিশ্বব্যাংক বলেছে, বিশ্বে চরম দারিদ্র্য যতটা বাড়বে তার প্রতি ১০ জনের আটজন হবে মধ্যম আয়ের দেশগুলোতে, যার মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশের নামও। নতুন দারিদ্র্যের বড় অংশ হবে শহরে জনগোষ্ঠী ও বস্তিবাসী। বাংলাদেশ অবশ্য বিশ্বব্যাংকের আশঙ্কাকে অসত্য প্রমাণ করে ইতোমধ্যে ঘুরে দাঁড়িয়েছে বর্তমান সরকারের নানা উদ্যোগ ও উন্নয়নমুখী নীতি গ্রহণসহ বাস্তবায়নের ফলে। দেশের সামষ্টিক অর্থনীতির সূচকগুলো করোনা পরিস্থিতিতেও ইতিবাচক ফল দেখিয়েছে। এক্ষেত্রে সর্বাধিক সাফল্য পরিলক্ষিত হয়েছে কৃষি খাতে। ধান-চালের বাম্পার ফলন হওয়ায় সহজে এড়ানো গেছে খাদ্যাভাব। প্রবাসী আয়ে এসেছে বিস্ময়কর অর্জন। যার ফলশ্রুতি বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ দাঁড়িয়েছে ৪০ বিলিয়ন ডলারের বেশি। পোশাক খাত রীতিমতো ঘুরে দাঁড়িয়েছে। বেড়েছে রফতানির পরিমাণ। চীন বাদে বিশ্বের অন্যান্য দেশের জাতীয় প্রবৃদ্ধি নেতিবাচক হলেও বাংলাদেশের ক্ষেত্রে ইতিবাচক, যা একটি বিস্ময়। একটানা ৬৬ দিন লকডাউনে বাংলাদেশের আর্থিক ক্ষতি হয়েছে ২ লাখ কোটি টাকার বেশি। বিশ্ব অর্থনীতির হালনাগাদ পরিস্থিতি নিয়ে বিশ্বব্যাংকের ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক আউটলুকের জুন সংখ্যায় তুলে ধরা হয় এই পূর্বাভাস। এতে বলা হয়েছে, এ বছর বৈশ্বিক অর্থনীতি হবে ৫ দশমিক ২ শতাংশ কম। এটি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ভয়াবহ মন্দা। তবে এর পাশাপাশি আশা ও আশ্বাসের বাণীও শুনিয়েছে বিশ্বব্যাংক। ২০২১ সালেই বৈশ্বিক জিডিপি ঘুরে দাঁড়াবে। তখন জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার হবে ৫ দশমিক ৯ শতাংশ। চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় ঘুরে দাঁড়াচ্ছে বাংলাদেশও। করোনাজনিত ক্ষয়ক্ষতি পুষিয়ে নিতে গড় জাতীয় প্রবৃদ্ধির ধারা ঠিক রেখে এবার প্রণয়ন করা হয়েছে জাতীয় বাজেট। এটি যথাযথভাবে বাস্তবায়ন হলে বিশ্বব্যাংকের আশঙ্কা অমূলক হতে পারে বাংলাদেশের ক্ষেত্রে। দেশে প্রবাসী আয় তথা রেমিটেন্স ও রিজার্ভের ক্ষেত্রে তীব্র আশার সঞ্চার হয়েছে। রিজার্ভ অতিক্রম করেছে ৪০ বিলিয়ন ডলার। তৈরি পোশাকের ৮০ শতাংশ ক্রয়াদেশ ফিরেছে। নতুন কার্যাদেশও আসছে। বোরোর বাম্পার ফলন হওয়ায় খাদ্যের মজুদও সন্তোষজনক। সরকার পদ্মা সেতু, রূপপুর পারমাণবিক কেন্দ্র, পায়রা বন্দর ও বিদ্যুত কেন্দ্র, কর্ণফুলী টানেল, মেট্রোরেলসহ মেগা প্রকল্পগুলোর কার্যক্রম এগিয়ে নিতে বদ্ধপরিকর। এই ধারা অব্যাহত থাকলে মন্দাবস্থা মোকাবেলা করে বাংলাদেশের এগিয়ে যাওয়া অসম্ভব হবে না।
×