ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

ইলিশ! ইলিশ!!

প্রকাশিত: ২১:০২, ১০ সেপ্টেম্বর ২০২০

ইলিশ! ইলিশ!!

আপামর বাঙালীর প্রিয় মাছ ইলিশের ভরা মৌসুম চলছে এখন। প্রায় প্রতিদিনই রসনাপ্রিয় বাঙালীর হেঁসেলে ঢুকছে অতি সুস্বাদু তদুপরি উপকারী এই মৎস্যটি। রন্ধনশিল্পীর নিপুণ হাতে তৈরি রকমারি রেসিপিতে পাক প্রণালীর পর পাতে পড়ছে ধনী-গরিব-বস্তিবাসী নির্বিশেষে বাঙালীর। এমনকি গ্রামীণ জনপদও বাদ যাচ্ছে না জাতীয় মাছটির স্বাদ পাওয়া থেকে। যোগাযোগ ও সংরক্ষণ ব্যবস্থার প্রভুত উন্নতিতে দিনে দিনে চট্টগ্রাম উপকূল থেকে ধৃত ইলিশ পৌঁছে যাচ্ছে সুদূর পঞ্চগড় অথবা পার্বত্য জনপদে। দামও সাশ্রয়ী এবং নাগালের মধ্যে। ফলে কিছুটা হলেও কমেছে অন্যান্য মাছের দামও। অবশ্য বর্ষা ও বন্যায় শাকসবজির আবাদ সমূহ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় দাম বেড়েছে এ সবের। পাশাপাশি বেড়েছে মোটাচালসহ চাল-ডাল-তেল-নুন-মসলা ও পেঁয়াজের দামও। তবে স্বস্তি আছে ইলিশের বাজারে। হাটবাজারে, মৎস্যঘাটে পর্যাপ্ত ইলিশের সমারোহ। ঝকঝকে তকতকে তরতাজা রুপালি সম্ভারÑ সদ্য সাগর অর্থাৎ বঙ্গোপসাগর এবং পদ্মা-মেঘনা-ভোলা-পটুয়াখালী-বরিশাল-চাঁদপুর থেকে আহরিত। সাগর থেকে প্রায় প্রতিদিনই ট্রলার বোঝাই ইলিশ নিয়ে ফিরছে জেলের দল। জেলে পল্লীগুলোতে এখন মহা ধূমধাম, উৎসবের মাতম। বেজায় খুশি পাইকার-আড়তদার-মহাজন ও ব্যবসায়ীরা। পুরো দমে চলছে বরফকলগুলো। বলা যায় হাজার হাজার কোটি টাকার লেনদেন তথা বাণিজ্য চলছে ইলিশকে ঘিরে। সত্যি বলতে কি এসবই কিন্তু প্রজনন মৌসুমে ইলিশ না ধরা অর্থাৎ, জাটকা সংরক্ষণের সুফল। বাংলাদেশের এই শিক্ষা থেকে দীক্ষা নিয়েছে প্রতিবেশী দেশ পশ্চিমবঙ্গও। ফলে এবার সেখানেও প্রচুর পরিমাণে ইলিশ পাওয়া যাচ্ছে। সেখানকার মৎস্যজীবী ও ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, দক্ষিণ চব্বিশপরগণা ও পূর্ব মেদিনীপুর থেকে জেলেরা প্রতিদিনই ট্রলার ভর্তি ইলিশ নিয়ে ফিরছেন সাগর থেকে। ফলে হাসি ফুটেছে সবার মুখেÑ ক্রেতা-বিক্রেতা উভয় পক্ষের। উল্লেখ্য, ২০১২ সাল থেকে বাংলাদেশ সরকার ইলিশ রফতানি বন্ধ রেখেছে ভারত তথা পশ্চিমবঙ্গে। তবে গত বছর দুর্গাপূজার সময় বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শুভেচ্ছার নিদর্শন হিসেবে ৫০০ টন ইলিশ রফতানির ব্যবস্থা করেছিলেন। এবারও ইলিশ রফতানির দাবি উঠেছে ব্যবসায়ীদের তরফ থেকে। কেননা, বাংলাদেশের ইলিশ নাকি স্বাদে-গন্ধে-রূপ-রস-রসনায় অতুলনীয়, অদ্বিতীয়। দেখা যাক কি হয়। তবে তিস্তা নদীর পানির ন্যায্য হিস্যা দিলে ইলিশ রফতানিতে আপত্তি কিসের! ইতোমধ্যে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে চিরদিনের জন্য স্থান পেয়েছে বাংলাদেশের ইলিশ। ইলিশের জিনোম সিকোয়েন্স আবিষ্কার করেছেন বাংলাদেশের বিজ্ঞানীরা। এর আগে ঠাঁই হয়েছে ঐতিহ্যসম্মত জামদানি শাড়ি ও রসগোল্লার। ভৌগোলিক নির্দেশক বা জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে এই তিনটি পণ্য, যা নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের এক সুদূরপ্রসারী সাংস্কৃতিক অর্জন। ইলিশ উৎপাদনে বাংলাদেশ বর্তমান বিশ্বে রোল মডেল, এমনকি মৎস্য উৎপাদনেও। চতুর্থ স্থান অধিকারী বাংলাদেশ। তবু তো সামুদ্রিক মৎস্য সম্পদ আহরণে অনেক পিছিয়ে আছে দেশ। জাতীয় পর্যায়ে অর্থনৈতিক দিক থেকেও গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে ইলিশ। মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ১ শতাংশের বেশি প্রবৃদ্ধি আসে ইলিশ থেকে। বিশ্বের ৬৫ শতাংশ ইলিশ উৎপাদিত হয় বাংলাদেশে। দেশে মোট মৎস্য উৎপাদনের প্রায় ১১ ভাগই ইলিশ। উপকূলীয় মৎস্যজীবী সম্প্রদায়ের প্রায় পাঁচ লাখ লোক ইলিশ আহরণে সরাসরি জড়িত। এছাড়া ২০ থেকে ৯৫ লাখ লোক জড়িত পরিবহন, বিক্রয়, জাল ও নৌকা তৈরি, বরফ উৎপাদন, প্রক্রিয়াজাতকরণ, রফতানিসহ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ কাজে। বাঙালীর ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির অন্যতম একটি অপরিহার্য উপাদান হলো ইলিশ। এর প্রযতœ ও সুরক্ষার দায়িত্ব সকলের।
×