কিছুদিন আগেও ভোগ্যপণ্যের দাম বৃদ্ধির কোন প্রশ্ন ওঠেনি। খাদ্যশস্যের ফলনে তেমন কোন ঘাটতি সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীদের সেভাবে বিচলিত করতেও দেখা যায়নি। বন্যায় ফসলি ক্ষেত-খামারের ক্ষতি হলেও তা বাজারদরের ওপর কোন প্রভাব ফেলেনি। করোনা দুর্যোগ প্রতিদিনের যাপিত জীবনে হরেক রকম সঙ্কট তৈরি করলেও খাদ্য নিরাপত্তায় কোন অসহনীয় অবস্থা সাধারণ মানুষকে বিপন্ন করেনি। এমনকি রমজান ও কোরবানি ঈদেও নিত্য ব্যবহার্য দ্রব্যের বাজারমূল্য এক প্রকার সহনীয়ই ছিল বলা যায়। তাই নতুন করে চালের দাম বৃদ্ধির যে আলামত শুরু হয়েছে তা কতখানি যৌক্তিক সেটি বিবেচনার দাবি রাখে।
সরকারী গুদামে ও বেসরকারী আড়তে চালের যথেষ্ট মজুদ রয়েছে। মানুষের চাহিদা মোতাবেক চাল সরবরাহের কোন সঙ্কট আপাতত থাকার কথা নয়। সরকারের পরামর্শ এবং নির্দেশনা উপেক্ষা করে ব্যবসায়ীচক্র চালের বাজার লাগামহীন করার যে পাঁয়তারা শুরু করেছে তা কোনভাবেই কাম্য নয়। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের কঠোর নজরদারিতে এতদিন চালের দাম এক প্রকার নিয়ন্ত্রণেই ছিল। কিন্তু বর্তমানে তা বাড়তির দিকে। সরু, মাঝারি ও মোটা সব রকম চাল অতীত মূল্যকে অতিক্রম করছে। কেজিতে ২ থেকে ৪ টাকা পর্যন্ত দাম বৃদ্ধি করা হয়েছে। করোনার প্রাদুর্ভাবে মন্দা অর্থনীতিতে নিম্ন আয়ের মানুষ সব থেকে বেশি সঙ্কটে পড়েছে। সেখানে যদি চালের দাম এভাবে বাড়তে থাকে তাহলে দরিদ্র মানুষের প্রতিদিনের জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠবে। মিল মালিকদের অভিমত ধানের দাম বেড়ে যাওয়ায় চালের ওপর তার প্রভাব পড়ছে। মিল মালিকদের সরকারকে চাল দেয়ার কথা থাকলেও তাতে অগ্রগতি নেই। এছাড়া ত্রাণ বিতরণের কালে মোটা চালের সঙ্কট হতেও সময় লাগছে না। তবে খুচরা ও পাইকারি ব্যবসায়ীদের অভিমত অন্য রকম। তাদের বক্তব্য যথেষ্ট চাল মজুদ থাকার পরেও মিল মালিকদের কারসাজিতে চালের দাম উর্ধমুখী। এছাড়া বোরো ধানের বাম্পার ফলনে কম দামে ধান কেনার পরও ব্যবসায়ীরা তাদের স্বার্থসিদ্ধির জন্য চালের মূল্য বাড়িয়েই চলেছে। সঙ্গত কারণে সরকারকে চাল আমদানির দিকে নজর দিতে হচ্ছে, যাতে চালের মজুদ পর্যাপ্ত থাকে। সব মিলিয়ে চালের বাজার এখন চড়া। এমনিতে সারাদেশে বানভাসি মানুষ খাদ্য সঙ্কটে নিত্য জীবন পার করছে। সব জায়গায় সরকারী ত্রাণ পৌঁছাতে দেরি হচ্ছে কিংবা অনেকেই তা পাচ্ছেনও না। তাদের খাদ্য ক্রয় করা ছাড়া উপায়ও নেই। বেশি সঙ্কটাপন্ন অবস্থায় পতিত হয়েছে বন্যার্তরা। বন্যা ও করোনার দুঃসময়ে মড়ার উপর খাঁড়ার ঘার মতো প্রতিদিনের খাদ্য যোগানোয় অর্থনৈতিক চাপ বাড়লে অসহায় মানুষের দুরবস্থা আরও বেড়ে যাওয়ার শঙ্কা রয়েছে। ব্যবসায়ী চক্র চলতি মৌসুমের বোরো ধান সরকারকে না দেয়ায় সরকার তার লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী চালের মজুদ করতে পারেনি। ইতোমধ্যে সরকার চাল সংগ্রহ অভিযানও জোরদার করেছে। যদিও বড় বড় ব্যবসায়ী সেখানে কোন ইতিবাচক ভূমিকাই রাখেনি। মিল মালিকরা চুক্তি অনুযায়ী চাল সরবরাহও করেনি। যদিও খাদ্য মন্ত্রণালয় চাল সংগ্রহের ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীদের চাপ দিয়ে যাচ্ছে।
সব মিলিয়ে বাজারে কৃত্রিম সঙ্কট তৈরি করে দাম বাড়ানোর যে অশুভ প্রক্রিয়া সেটিকে কঠোর নজরদারিতে এনে একটি যৌক্তিক সুরাহা এখন জরুরী হয়ে পড়ছে। সামনে আমন ধান ওঠার সময়। বন্যার কারণে যদি ফলন কম হয় তবে আগাম প্রস্তুতি হিসেবে চাল সংরক্ষণও জোরদার করতে হবে। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় এ ব্যাপারে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারলে উর্ধগতির চালের মূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখা অসম্ভব নয়।
শীর্ষ সংবাদ: