ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

গাজীপুরে বেতন-বোনাস পরিশোধের দাবীতে পোশাক শ্রমিকদের বিক্ষোভ

প্রকাশিত: ১৭:২৭, ৪ জুন ২০২০

গাজীপুরে বেতন-বোনাস পরিশোধের দাবীতে পোশাক শ্রমিকদের বিক্ষোভ

স্টাফ রিপোর্টার, গাজীপুর ॥ গাজীপুরে দু’মাসের বেতন ও ঈদবোনাসসহ পাওনাদি পরিশোধ এবং বন্ধ কারখানা চালু করার দাবীতে বৃহষ্পতিবার এক পোশাক কারখানার শ্রমিকরা বিক্ষোভ করেছে। এসময় বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা ঢাকা-গাজীপুর সড়ক প্রায় দু’ঘন্টা অবরোধ করে। এতে দীর্ঘযানজটে আটকা পড়ে গরমের মাঝে দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে যাত্রী ও পথচারীদের। গাজীপুর শিল্পাঞ্চল পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সুশান্ত সরকার ও আন্দোলনরত শ্রমিকরা জানান, গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের ভোগড়া চৌধুরী বাড়ি এলাকাস্থিত ‘মে ফ্যাশন’ পোশাক কারখানাটি উৎপাদন কাজের অর্ডার না থাকায় এপ্রিল মাসের প্রথম সপ্তাহে খোলার কথা বলে গত ১৯ মার্চ বন্ধ ঘোষণা করে কর্তৃপক্ষ। লুঢ়ফর রহমান মালিকাধীন এ কারখানার প্রায় ৭শ’ শ্রমিক রয়েছে। বন্ধ ঘোষণার সময় শ্রমিকদের মার্চ মাসের বেতন পরিশোধ করা হয়। মূলতঃ লুৎফর রহমানের এক আত্মীয়ের মালিকানাধীন স্থানীয় ‘টার্গেট ফাইন ওয়াশ’ কারখানার সাব কন্ট্রাক্ট নিয়ে এ কারখানায় পোশাক তৈরী করা হতো। মূল কারখানায় উৎপাদন কাজের অর্ডার না থাকায় এ কারখানা কাজ শুন্য হয়ে পড়ে। কর্তৃপক্ষের ঘোষণা অনুযায়ী শ্রমিকরা গত কয়েকদিন আগে সরকার ঘোষিত এপ্রিল মাসের শতকরা ৬০ভাগ বেতনসহ তাদের পাওনাদি পরিশোধের দাবীতে বিক্ষোভ করে। শ্রমিক অসন্তোষের মুখে কারখানা কর্তৃপক্ষ বৃহষ্পতিবার (৪জুন) শ্রমিক প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনায় বসার তারিখ ঘোষণা দেয় এবং কয়েক শ্রমিকের আংশিক বেতন পরিশোধ করে। ইতোমধ্যে ভবনটি দুর্বল এবং উৎপাদন কাজের অর্ডার না থাকাসহ বিভিন্ন কারণ দেখিয়ে কারখানাটি স্থায়ীভাবে বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নেয় কর্তৃপক্ষ। এছাড়াও পাওনাদি পরিশোধ না করে প্রতি শ্রমিককে চারহাজার টাকা করে দিয়ে তাদের কাছ থেকে মাফমুক্তি চেয়ে বিষয়টি নিষ্পত্তি করার সিদ্ধান্ত নেয়। কারখানা কর্তৃপক্ষ বিষয়টি নিয়ে কয়েক শ্রমিক নেতৃবৃন্দের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তারা কর্তৃপক্ষের প্রস্তাব প্রত্যাখান করে। এদিকে শিল্প পুলিশের ইন্সপেক্টর ইসলাম হোসেন জানান, কর্তৃপক্ষের পূর্ব ঘোষণানুযায়ী আলোচনার জন্য বৃহষ্পতিবার সকাল হতে শ্রমিকরা মে ফ্যাশন কারখানার সামনে এসে জড়ো হয়ে অপেক্ষা করতে থাকে। কিন্তু দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করেও মালিকপক্ষের কাউকে না পেয়ে শ্রমিকরা বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠে। এক পর্যায়ে তারা বিক্ষোভ শুরু করে। এসময় তারা ঈদুল ফিতরের পাওনা বোনাস, মে মাসের বেতন এবং সরকার ঘোষিত এপ্রিল মাসের শতকরা ৬০ভাগ বেতনসহ পাওনাদি পরিশোধের দাবী জানায়। পরে শ্রমিকরা সেখান থেকে মহানগরীর চান্দনা চৌরাস্তার নলজানী এলাকাস্থিত ‘টার্গেট ফাইন ওয়াশ’ পোশাক কারখানার সামনে এসে অবস্থান নিয়ে তাদের দাবী পূরণের জন্য বিক্ষোভ করতে থাকে। কিন্তু কারো কোন সাড়া না পেয়ে শ্রমিকরা সকাল সাড়ে ১০টার দিকে কারখানার সামনে ঢাকা-জয়দেবপুর সড়কে অবরোধ সৃষ্টি করে। এতে ওই সড়কের উভয় দিকে শতাধিক যানবাহন আটকা পড়ে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। স্থানীয়রা জানান, পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে মালিকপক্ষের সঙ্গে আলোচনার উদ্যোগ নেওয়ার আশ্বাস দিয়ে বেলা সাড়ে ১২টার দিকে আন্দোলনরত শ্রমিকদের সড়কের উপর থেকে সরিয়ে দিলে পুনঃরায় যানবাহন চলাচল শুরু হয়। প্রায় দুই ঘন্টা সড়ক অবরোধের কারণে প্রচন্ড গরমের মাঝে যাত্রীদের দূর্ভোগ পোহাতে হয়েছে। শিল্প পুলিশের এসআই সুব্রত দেব জানান, গাজীপুর শিল্পাঞ্চল পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সুশান্ত সরকারের মধ্যস্থতায় দুপুরে মালিক পক্ষের সঙ্গে শ্রমিক প্রতিনিধিদের বৈঠক শুরু হয়। বিকেল ৩টা পর্যন্ত এ বৈঠক চলছিল।
×