ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১১ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১

সোশ্যাল মিডিয়ার আইনী সুরক্ষা প্রত্যাহার চেষ্টা

প্রকাশিত: ১৯:৪৭, ৩০ মে ২০২০

সোশ্যাল মিডিয়ার আইনী সুরক্ষা প্রত্যাহার চেষ্টা

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোকে দেয়া বেশকিছু আইনী সুরক্ষা প্রত্যাহারের লক্ষ্যে একটি নির্বাহী আদেশে স্বাক্ষর করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তার এই আদেশের ফলে ফেসবুক ও টুইটারের মতো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম তাদের প্ল্যাটফর্মে যেভাবে তদারকি করে, তার বিরুদ্ধে নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোকে আইনী ব্যবস্থা নেয়ার সুযোগ করে দেবে। খবর বিবিসির। টুইটার কর্তৃপক্ষ ট্রাম্পের দুটি টুইটে ‘তথ্যের সত্যতা যাচাই’ সংক্রান্ত ট্যাগ লাগিয়ে দেয়ার পর ক্ষুব্ধ ট্রাম্প বৃহস্পতিবার এ নির্বাহী আদেশে স্বাক্ষর করলেন। স্বাক্ষরের সময় তিনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম প্লাটফর্মগুলো ‘অবারিত ক্ষমতা’ ভোগ করছে বলেও অভিযোগ করেছেন। ট্রাম্পের এ নির্বাহী আদেশ আইনী বাধার মুখে পড়বে বলেই ধারণা করা হচ্ছে। সোস্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মগুলো এখন যেসব আইনী সুরক্ষা পাচ্ছে, তা পরিবর্তনের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে মার্কিন কংগ্রেস কিংবা আদালতকে অবশ্যই হস্তক্ষেপ করতে হবে, বলছেন বিশেষজ্ঞরা। টুইটারসহ অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের বিরুদ্ধে লাগাতার পক্ষপাতদুষ্টতার অভিযোগ করে আসা মার্কিন প্রেসিডেন্ট বুধবারই সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মকে কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ এবং প্রয়োজনে বন্ধ করে দেয়ার হুমকি দিয়েছিলেন। ট্রাম্পের অভিযোগ, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলো নিয়মিতভাবে রক্ষণশীল মতের ওপর কাঁচি চালিয়ে আসছিল। তার দুটি টুইটে ‘ফ্যাক্ট চেক’ লিংক সংযুক্ত হওয়ার পর মার্কিন প্রেসিডেন্ট বুধবার টুইটারের বিরুদ্ধে আসন্ন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে হস্তক্ষেপেরও অভিযোগে তুলেছেন। অবশ্য কেবল ট্রাম্পের টুইটেই নয়, বৃহস্পতিবার টুইটার কর্তৃপক্ষ নতুন করোনাভাইরাসের উৎপত্তি যুক্তরাষ্ট্রে বলে দাবি করা চীনের এক সরকারী মুখপাত্রের দুটি টুইটেও ‘কোভিড-১৯ সংক্রান্ত তথ্য জানুন’ সংক্রান্ত ট্যাগ লাগিয়ে দিয়েছে। বিবিসি বলছে, যুক্তরাষ্ট্রের কমিউনিকেশনস ডিসেন্সি এ্যাক্টের অনুচ্ছেদ ২৩০ এর কারণে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোকে সাধারণত তাদের প্ল্যাটফর্মে ব্যবহারকারীদের দেয়া পোস্ট বা কমেন্টের জন্য দায়ী করা হয় না। ওই অনুচ্ছেদে প্রাপ্ত সুবিধায় সোস্যাল মিডিয়াগুলো তাদের দৃষ্টিতে অশ্লীল, হয়রানিমূলক কিংবা সহিংস কন্টেন্ট সরিয়ে নেয়া অথবা ব্লক করারও সুযোগ পেত। ট্রাম্পের নির্বাহী আদেশে যেসব সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম তাদের প্ল্যাটফর্মে ব্যবহারকারীর কন্টেন্ট সম্পাদনা করবে, তাদের ক্ষেত্রে এসব আইনী সুরক্ষা তুলে নিতে সুপারিশ করা হয়েছে। কমিউনিকেশনস ডিসেন্সি এ্যাক্টের ধারা ২৩০ এর সংশোধন কিংবা একেবারে বাতিলে কংগ্রেসে বিল আনতেও বলেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। যুক্তরাষ্ট্রের এ্যাটর্নি জেনারেল উইলিয়াম বার কংগ্রেসে ভোটের জন্য তুলতে শীঘ্রই এ সংক্রান্ত বিলের খসড়া লেখার কাজ শুরু করবেন, বলেছেন তিনি। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলো তাদের ওয়েবসাইটে থাকা শর্তের বাইরেও বিভিন্ন পোস্টকে যেভাবে ‘বিভ্রান্তিকর’ আখ্যা দিয়ে ব্লক করছে, তার আইনী সুরক্ষা থাকা উচিত নয় বলে ট্রাম্পের আদেশ বলা হয়েছে। বৃহস্পতিবার ট্রাম্প ঘনিষ্ঠ রিপাবলিকান সিনেটর মার্কো রুবিও বলেছেন, কোন সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম যখন সুনির্দিষ্ট কোন পোস্টে ‘ফ্যাক্ট-চেক’ লেবেল সেঁটে দিচ্ছে, তখন সেটি ‘প্রকাশকের ভূমিকাই পালন করছে, ফোরামের ভূমিকা নয়’। ‘টুইটারের মতো প্রতিষ্ঠানগুলো যদি এখন থেকে প্রকাশকের অতিরিক্ত ভূমিকা নিতে চায়, তাহলে তাদের দায়মুক্তি দেয়ার কারণ নেই, এবং তাদের আইনীভাবে প্রকাশক হিসেবেই দেখা উচিত,’ বলেছেন তিনি। ট্রাম্পের নির্বাহী আদেশের সমালোচনা এসেছে টুইটার, গুগল ও ফেসবুকের কাছ থেকে। রিপাবলিকান প্রেসিডেন্টের টুইটে ‘ফ্যাক্ট চেকিং’ ট্যাগ লাগিয়ে হইচই বাঁধিয়ে দেয়া টুইটার বলেছে, গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ থেকে উৎসারিত কমিউনিকেশন্স ডিসেন্সি এ্যাক্টের ধারা ২৩০ মার্কিন উদ্ভাবন ও বাগ্স্বাধীনতাকে সুরক্ষা দিয়ে আসছে। ধারা ২৩০ এর পরিবর্তন মার্কিন অর্থনীতি ও ইন্টারনেট স্বাধীনতায় যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে, বলেছে ইউটিউবের স্বত্বাধিকারী গুগল। বুধবার ফক্স নিউজকে দেয়া এক সাক্ষাতকারে ফেসবুকের প্রধান নির্বাহী মার্ক জাকারবার্গও সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মগুলোর ওপর সেন্সরশিপ আরোপের চেষ্টার সমালোচনা করেছিলেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম কোম্পানিগুলোর বিরুদ্ধে ট্রাম্পের এ নির্বাহী আদেশ বাগ্স্বাধীনতার ওপর ভয়াবহ নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে বলে রক্ষণশীলদের একটি থিঙ্ক ট্যাঙ্কও সতর্ক করেছে। আইনী সুরক্ষা তুলে নিলে সোশ্যাল মিডিয়াগুলো তাদের প্ল্যাটফর্ম থেকে পর্নোগ্রাফি, বর্ণবাদী বিষয়বস্তু কিংবা হিংসাত্মক ছবি সরাতে সমস্যায় পড়তে পারে, বলেছে তারা।
×