স্টাফ রিপোর্টার, বরিশাল ॥ ডাঃ শওকত আলী জ্বর, সর্দি, কাশি ও শ্বাসকষ্টের মতো করোনার উপসর্গ নিয়ে আসা রোগীদের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য ল্যাবে পাঠান। আর তাকে এ কাজে সার্বক্ষনিক সহযোগিতা করছেন তার স্ত্রী ডাঃ নাদিরা পারভীন।
কেউ করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন কিংবা উপসর্গ রয়েছে এ কথা শুনলে যখন স্বজনরা ভয়ে দূরে সরে যায়, ঠিক সেখানে মানবতার সেবায় এগিয়ে এসেছেন এই চিকিৎসক দম্পতি। তারা পরম যতেœ রোগীদের সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। তাদের সেবায় করোনা আক্রান্ত এক শিশুসহ দুইজন ইতোমধ্যে পুরোপুরি সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন।
জানা গেছে, এ পর্যন্ত চিকিৎসক দম্পত্তির তত্ত্বাবধানে পাঁচজন করোনায় শনাক্ত রোগীকে চিকিৎসা প্রদান করা হয়েছে। এখনও একজন চিকিৎসাধীন রয়েছেন এবং দুইজনকে প্রথমে নিজেদের তত্ত্বাবধানে ও পরবর্তীতে শেবাচিম হাসাপাতালে চিকিৎসার পর করোনা জয় করে তারা বাড়ি ফিরেছেন। এছাড়া উপসর্গ থাকা ৯৫ জনের নমুনা সংগ্রহ করে শেবাচিম হাসপাতালের ল্যাবে পাঠিয়েছেন এ চিকিৎসক দম্পত্তি।
সূত্রমতে, দেশে প্রাণঘাতি করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে পরার পর শুরু থেকে অদ্যবর্ধি মানবদরদী এ চিকিৎসক দম্পত্তি তাদের দুগ্ধপান করা শিশুকে স্বজনদের কাছে বাসায় রেখে নিজেদের মৃত্যুকে পরোয়া না করে ভয় কে জয় করে রাত-দিন একাকার করে রোগীদের সেবা করে যাচ্ছেন।
বরিশাল জেলার উজিরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ শওকত আলী ও তার স্ত্রী একই হাসপাতালের মেডিক্যাল অফিসার ডাঃ নাদিরা পারভিন দেশের ক্লান্তি লগ্নে মানবতার সেবা দিয়ে অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। দীর্ঘদিন ধরে মানবদরদী এ চিকিৎসক দম্পতি উজিরপুর হাসপাতালে কর্মরত থেকে রোগীদের পরম যতœ আর ভালবাসার মাধ্যমে চিকিৎসা সেবা দিয়ে সুস্থ করে তুলছেন।
উজিরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ শওকত আলী জনকণ্ঠকে জানান, তাদের দাম্পত্য জীবনে একমাত্র শিশু কন্যা রিদা’র বয়স মাত্র ১৬ মাস। দেশের ক্লান্তি লগ্নে মানুষের চিকিৎসা সেবা দিতে গিয়ে তাদের দুগ্ধ পান করা শিশু কন্যাকে বাসায় স্বজনদের কাছে রেখে তারা স্বামী-স্ত্রী মানবতার সেবায় নিজেদের নিয়োজিত করেছেন।
তিনি আরও জানান, নিয়ম অনুযায়ী একজন করোনা আক্রান্ত রোগীকে চিকিৎসা সেবা প্রদানের পর চিকিৎসককে ১৪ দিন কোয়ারেন্টাইনে থাকতে হবে। কিন্তু তাদের ক্ষেত্রে তা সম্ভব হয়ে উঠেনি। মানবিক কারনে দুইজন করোনা আক্রান্ত রোগীকে টানা ২১ দিন চিকিৎসা সেবা দিয়ে তারা পুরোপুরি সুস্থ করে তুলেছেন। এখনও একজন পজেটিভ রোগীকে একইভাবে পরম যতেœ করোনা ইউনিটে তারা সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। সেও প্রায় সুস্থ হওয়ার পথে। দীর্ঘ চিকিৎসা সেবার পর তার তার দু’ফা পরীক্ষার রেজাল্ট নেগেটিভ এসেছে।
ডাঃ শওকত আলী জানান, তার স্ত্রী মেডিকেল অফিসার ডাঃ নাদিরা পারভিনকে ছুটি নিয়ে একমাত্র দুগ্ধ পান করা শিশুর পাশে থাকতে বলা হয়েছিলো। কিন্তু সে (ডাঃ নাদিরা) তাকে জানিয়েছে, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ পালন করার জন্য দেশের এই ক্লান্তি লগ্নে চিকিৎসা সেবা প্রদান করার প্রত্যয় ব্যক্ত করে এ মুহুর্তে সে হাসপাতাল ছেড়ে কোথাও যাবে না। ফলে গত দুইমাস ধরে সেও (নাদিরা) করোনা ওয়ার্ডের রোগীদের চিকিৎসা সেবা দিয়ে যাচ্ছে।
ডাঃ নাদিয়া পারভিন জানান, দেশের কল্যাণে মানবতার সেবক হয়ে কাজ করার সুযোগ সবার ভাগ্যে জোটেনা। তাই এ সুযোগ হাতছাড়া করতে চাইনা। এছাড়াও প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ পালন করতে গিয়ে দুইজনে (স্বামী-স্ত্রী) একসাথে আমৃত্যু মানবতার সেবা করে যাবো। এদিকে মানবসেবার ব্রত নিয়ে কাজ করা করোনা যোদ্ধা এ চিকিৎসক দম্পতি শুধু উজিরপুর উপজেলায় নয়; পুরো বরিশাল জেলার সর্বমহলে ব্যাপক প্রশংসা কুড়িয়েছেন।