ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

সচিবালয় ও বঙ্গভবন এলাকার জলাবদ্ধতা নিরসনের উদ্যোগ

প্রকাশিত: ১৯:৫০, ৯ মে ২০২০

সচিবালয় ও বঙ্গভবন এলাকার জলাবদ্ধতা নিরসনের উদ্যোগ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ প্রতিবছরই বর্ষা আসে, প্রতিবছরই বর্ষায় চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয় রাজধানীবাসীকে। বর্ষা মানেই রাজধানীজুড়ে জলাবদ্ধতার এক তিক্ত অভিজ্ঞতা। এ মৌসুমে সামান্য বৃষ্টি হলেই নগরীর অলিগলি এবং ছোট পরিসরের রাস্তাগুলোতে জলাবদ্ধতা দেখা দেয়। একটু ভারী বর্ষণে রাজধানীবাসীর স্বাভাবিক জীবনযাত্রার ছন্দপতন হয়। কিন্তু এখন চিত্র পাল্টেছে। সামান্য বৃষ্টিতে এক সময় ভয়াবহ জলাবদ্ধতার ভোগান্তি পোহাতে হতো রাজধানীর শান্তিনগর ও নাজিমউদ্দিন রোডের বাসিন্দাদের। এখন মুষলধারে বৃষ্টি হলেও এ দুটি স্থানে পানি জমে না। ফলে জলাবদ্ধতার তিক্ত অভিজ্ঞতার দেখাও মেলে না। ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন (ডিএসসিসি) কর্তৃক গৃহীত একটি মেগা প্রকল্পের মাধ্যমে পরিকল্পিতভাবে স্থান দুটির জলাবদ্ধতার নিরসন সম্ভব হয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় এবার সচিবালয় ও বঙ্গভবন এলাকার জলাবদ্ধতা নিরসনের কাজ শুরু করেছে ডিএসসিসি। আগে সামান্য বৃষ্টি হলেই বঙ্গভবন ও সচিবালয়ে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হতো। এ দুই স্থানের জলাবদ্ধতা নিরসনে ঢাকা ওয়াসা, গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় এবং বাংলাদেশ রেলওয়েসহ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর সমন্বয়ে ২০১৮ সালের শুরুতে বেশকিছু সিদ্ধান্ত নেয় ডিএসসিসি। ডিএসসিসির প্রকৌশল বিভাগ সংশ্লিষ্টরা জানান, সচিবালয় ও বঙ্গভবন এলাকার জলাবদ্ধতা নিরসনে কাজ শুরু হয়েছে। এ এলাকার বৃষ্টির পানি একটি নেটওয়ার্কের আওতায় এনে সেগুনাবাগিচার ওয়াসার ড্রেনেজ লাইনের মাধ্যমে কমলাপুর হয়ে অপসারণ করা হবে। বঙ্গভবনের পানি নিষ্কাশনের জন্য একটি এক্সপ্রেস লাইন রয়েছে। বিভিন্ন সময়ে ডিএসসিসির বিভিন্ন সারফেস ড্রেন ও স্যুয়ারেজ লাইনের সংযোগ দেয়ায় ড্রেনেজ লাইনটি ওভারলোডেড হয়। ফলে বঙ্গভবন এলাকার বৃষ্টির পানি অপসারণে বিলম্ব হতো। এছাড়া ভারি বৃষ্টির সময় এ ড্রেনেজ লাইন দিয়ে পানি উল্টো ফিরে (ব্যাকফ্লো) আসত। এজন্য এ ড্রেনেজ লাইনের সঙ্গে দেয়া সংযোগগুলো বিচ্ছিন্ন করে আলাদাভাবে আউটলেট নির্মাণের মাধ্যমে কাছের বক্স-কালভার্টে সংযোগ দেয়া হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বঙ্গভবন ও সচিবালয় এলাকার পানি কমলাপুর রেলওয়ে কালভার্ট ও গোপীবাগ পাম্পিং স্টেশন হয়ে নিষ্কাশন হচ্ছে। কিন্তু এ স্টেশনের সক্ষমতা কম। ফলে বেশি বৃষ্টি হলে সচিবালয়, বঙ্গভবন ও মতিঝিলসহ আশপাশের এলাকা পানিতে তলিয়ে যায়। এছাড়া গোপীবাগ রোড ক্রসিং কালভার্টের তলদেশ অপেক্ষাকৃত উঁচু। তাই এ কালভার্ট দিয়ে যথাযথভাবে পানি অপসারণ হচ্ছে না। এ অবস্থায় এ রোড ক্রসিংয়ের লেভেল সেগুনবাগিচা বক্স কালভার্টের সমতলে নামিয়ে দেয়ার জন্য রেলওয়েকে বলা হয়েছে। এছাড়া বঙ্গভবনের চারদিকের রাস্তা নিচু রাখা, এর এক্সপ্রেস ড্রেনেজ লাইনের সঙ্গে সব সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা, ওয়াসার গোপীবাগ পাম্পিং স্টেশনের সক্ষমতা বাড়ানো এবং কমলাপুর রেলওয়ে কালভার্টের তলদেশ সেগুনবাগিচা কালভার্টের তলদেশের সমান নামিয়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। সচিবালয়ের ক্ষেত্রে এ স্থানের পানি ওসমানী উদ্যানের পুকুরে ফেলা, বৃষ্টির সময় পানি ধারনের জন্য সচিবালয়ের পশ্চিম পাশে জলাধার নির্মাণ করা, পানি নিষ্কাশনের জন্য চারপাশে গভীর ড্রেন নির্মাণ করা এবং পর্যাপ্ত পাম্পিং স্টেশন স্থাপন করার কথা বলা হয়েছে। সচিবালয় থেকে সেগুনবাগিচা বক্স-কালভার্ট পর্যন্ত নির্মিত এক্সপ্রেস লাইনের সঙ্গে ডিএসসিসির সব ড্রেনেজ লাইন বিচ্ছিন্ন করে দেয়া হচ্ছে। ফলে আর জলাবদ্ধতা হবে না, এমনটি জানিয়েছেন ডিএসসিসির প্রকৌশলীরা। তারা আরও জানান, গোপীবাগে ঢাকা ওয়াসার তিনটি পাম্প রয়েছে। এগুলোর প্রতিটির সক্ষমতা প্রতি ঘণ্টায় ১৮ হাজার কিউবিক মিটার। সচিবালয়, গুলিস্তান ও বঙ্গভবনসহ আশপাশের এলাকায় ঘণ্টায় ৩০ থেকে ৩৫ মিলিমিটার বৃষ্টি হলেও এসব পাম্প দিয়ে পানি অপসারণ করা যায়। পাশাপাশি ঢাকা ওয়াসার পাম্পের সক্ষমতা বাড়ানোরও তাগিদ দেয়া হয়েছে। বঙ্গভবনের দক্ষিণ পাশের রাস্তা অনেক উঁচু ছিল। ফলে রাস্তার পানি বঙ্গভবনের ভেতরে চলে আসত। এ কারণে রাস্তাটি ছয় ইঞ্চি নিচু রেখে সড়কের দক্ষিণ দিক ঢালু করে দেয়া হয়েছে। এখন সড়কের পানি আর বঙ্গভবনে ঢোকে না। পাশাপাশি বঙ্গভবনের পানি সড়কের ওপর দিয়ে বের করার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। এছাড়া ভবনের চারদিকের সব রাস্তাও নিচু করে দেয়া হয়েছে। সচিবালয়ে জলবদ্ধতার কারণ হিসেবে জানা গেছে, এর ভেতরের তুলনায় বাইরের রাস্তা কিছুটা উঁচু। তাই পাম্পিং করে ভেতরের পানি বাইরে পাঠানোর ব্যবস্থা করা হলেও তা খালে যাওয়ার সম্ভাবনা নেই। এ কারণে ভারি বৃষ্টি হলে ঢাকা ওয়াসার ড্রেনগুলো ওভারফ্লো হয়ে সচিবালয়ের ভেতরে ঢুকে পড়ে। এটি নিরসনে সচিবালয়ের চারদিকের ফুটপাতের নিচে গভীর ড্রেন নির্মাণ করতে হবে। অতিরিক্ত পানি নিষ্কাশনের জন্য সচিবালয়ের মধ্যে প্রয়োজনীয় পাম্পিংয়ের ব্যবস্থা করতে হবে। পাশাপাশি অতিরিক্ত পানি ওসমানী উদ্যানের লেকে অপসারণ করতে হবে। এছাড়া বৃষ্টির সময় পানি ধারনের জন্য সচিবালয়ের পশ্চিম প্রাচীর-সংলগ্ন উন্মুক্ত জায়গায় একটি জলাধার নির্মাণের সিদ্ধান্ত হয়েছে। সচিবালয়ে জমা বৃষ্টির পানি আগে ধোলাইখাল, টিটিপাড়া, সেগুনবাগিচা, এ তিনটি খাল দিয়ে নেমে যেত। কিন্তু এসব পথ প্রায় বন্ধ হয়ে পড়েছে। এজন্য বর্ষার আগেই খাল তিনটির পানির স্বাভাবিক প্রবাহ নিশ্চিতের ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। এছাড়া খাল তিনটির ১৮টি পয়েন্ট দিয়ে সচিবালয়ের পানি বের করারও উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের আওতাধীন এসব এলাকার জলবদ্ধতা নিরসনের উদ্যোগের বিষয়ে ডিএসসিসির বর্তমান মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন বলেন, একসময় সামন্য বৃষ্টিতেই শান্তিনগর ও নাজিম উদ্দিন রোডের জলবদ্ধতা সৃষ্টি হওয়া ছিল দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের জন্য এক ধরনের বোঝা। বৃষ্টি হওয়া মানেই এসব এলাকায় কোমর পানি জমে যেত। কিন্তু আমরা ছোট ছোট প্রকল্প বাস্তবায়নের মাধ্যমে সমস্যার সমাধানের উদ্যোগ নিয়েছি। এরই ধারাবাহিকতায় এবার আমরা অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সচিবালয় ও বঙ্গভবন এলাকার জলাবদ্ধতা নিরসনে কাজ শুরু করেছি। আশা করি, কাজ শেষ হলে আগামী বর্ষায় এসব এলাকায় আর জলাবদ্ধতা দেখা দেবে না।
×