ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

হিংস্র প্রাণীকেও পোষ মানিয়েছেন সজল

প্রকাশিত: ০৮:১৫, ২১ মার্চ ২০২০

হিংস্র প্রাণীকেও পোষ মানিয়েছেন সজল

যুগ যুগ ধরে মানুষের সঙ্গে মানুষের ভালবাসার ঘটনা অমর হয়ে আছে। ভালবাসার জন্য রাজ্যত্যাগ-দেশত্যাগ থেকে শুরু করে সহ-মরনের ঘটনাও ঘটেছে অসংখ্য। কিন্তু প্রাণীকুলের সঙ্গে মানুষের ও প্রাণীদের সঙ্গে প্রাণীর ভালবাসা নিয়ে কোন ইতিহাস আজও রচনা হয়নি। প্রাণীরাও ভালবাসতে পারে, পারে ভালবাসার সাথী হতে এটি যেন অনেকের কাছেই অসম্ভব, অভাবনীয় ঘটনা। কিন্তু এ ধরনের ঘটনাও এ জগতে ঘটছে অসংখ্য। বাংলাদেশ বন্যপ্রাণী সেবা ফাউন্ডেশনে তেমনি কিছু ঘটনা উল্লেখ্য। ভাল্লুক ও মানুষ ॥ মাঝে মাঝে বিচিত্র সব ঘটনা ঘটে রহস্যময় এ জীবজগতে। তেমনি এক বিচিত্র ঘটনার জন্ম হয়েছে মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গল উপজেলার বন্যপ্রাণী সেবা ফাউন্ডেশনে। বন্যপ্রাণী সেবা ফাউন্ডেশনের হিংস্র প্রাণী ভাল্লুক, মেছো বাঘ আর শান্ত প্রাণী উল্লুক ভালবেসে আপন করে নিয়েছে ফাউন্ডেশনের পরিচালক সজল দেবকে। প্রচন্ড হিংস্রতাকে জলাঞ্জলি দিয়ে ভাল্লুকটি সজল দেবের সঙ্গে খেলায় মেতে ওঠে। হিংস্র প্রাণী আর মানুষের এমন ভালবাসা দেখে সেবা ফাউন্ডেশনের প্রতিদিন আগত শত শত দর্শনার্থী ভয়ে আঁতকে ওঠেন! মেছো বাগ, ভাল্লুক আর উল্লুককে সজল দেব কোলে নেন, পিঠে চড়ান, পরম মমতায় ঝাপটে ধরেন। খাবার খাইয়ে দেন নিজ হাতে। এ তিনটি প্রাণীও সজল দেবের হাত ছাড়া আর কারও হাতে খাবার খায় না। একদিন সজল দেব এলাকায় না থাকলে এ তিনটি প্রাণি অভুক্ত থাকে। সজল দেব জানান, ২০০৪ সালের ডিসেম্বর মাসে মৌলভীবাজার জেলার বড়লেখা উপজেলার খাসিয়া পানপুঞ্জি এলাকায় খাসিয়াদের হাতে আটক উল্লুক শাবকটিকে উদ্ধার করে বন বিভাগ এটিকে লালন পালনের জন্য বন্যপ্রাণী সেবা ফাউন্ডেশনে পাঠায়। অপরদিকে ২০০৬ সালের অক্টোবর মাসে মৌলভীবাজারের বিদ্যাবিল চা বাগানের সীমান্তবর্তী ঘন জঙ্গল থেকে প্রায় ১৫ দিন বয়সী এই ভাল্লুক শাবকটি বন্যপ্রাণী সেবা ফাউন্ডেশনে নিয়ে আসেন। সে সময় থেকেই এই দুটি শাবককে ফিডারে করে দুধ খাওয়ানোসহ পরম মমতায় লালন-পালন শুরু করেন সজল দেব। সে সময় থেকে অদ্যাবধি সজল দেব তাদের ভালবাসেন নিজ সন্তানের মতো। শাবককে আঘাতের প্রতিশোধে মা হাতি ॥ ১৯৯৩ সালের ২ ফেব্রুয়ারি। ভোর বেলা চট্টগ্রাম থেকে ছেড়ে আসা যাত্রীবাহী লোকাল ট্রেন জালালাবাদ এক্সপ্রেস মৌলভীবাজার জেলার কমলগঞ্জ উপজেলার লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান ও মাগুরছড়া এলাকার মাঝামাঝিতে একটি বাঁক পেরোনোর সময় ট্রেন লাইনের ওপর ওঠে আসা একটি পাহাড়ী হাতির শাবককে আঘাত করে চলে যায়। হাতি শাবকটি ট্রেনের ইঞ্জিনের আঘাতে আহত হয়। কাছে থেকে এ দৃশ্য দেখে মা হাতি শাবকটিকে সঙ্গে নিয়ে রেল লাইনের পাশে বসে পড়ে। সারাদিন ওই রেললাইন দিয়ে ১৭টি যাত্রীবাহী ও মালবাহী ট্রেন চলাচল করে। মা হাতি কোন ট্রেন চলাচলেই প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেনি। ওই রাতে হাতি শাবককে আহত করা লোকাল ট্রেন জালালাবাদ এক্সপ্রেস সিলেট থেকে চট্টগ্রাম অভিমুখে যাবার সময় দুর্ঘটনাস্থলে এসে রেললাইনের ওপর আহত শাবকসহ হাতিকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে ট্রেন চালক ট্রেনের গতি কমিয়ে ট্রেনটি থামিয়ে দেন। এ অবস্থায় প্রতিশোধ পরায়ন মা হাতি চলন্ত ট্রেনের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। মা হাতি তার শুর দিয়ে ট্রেনের ইঞ্জিনে ক্রমাগত আঘাত করতে থাকে। এতে ট্রেনের ইঞ্জিন ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। -চৌধুরী নীহারেন্দু হোম, শ্রীমঙ্গল, মৌলভীবাজার থেকে
×