ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১১ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১

ব্যাংকের সুদ হার ছয়-নয়ে মুনাফায় প্রভাব পড়বে না

প্রকাশিত: ০৯:২৪, ২ মার্চ ২০২০

 ব্যাংকের সুদ হার ছয়-নয়ে  মুনাফায় প্রভাব পড়বে না

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ ব্যাংকিং খাতে নয়-ছয় সুদ হারের বাস্তবায়নকে কেন্দ্র করে পুঁজিবাজারে যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে তাকে অযৌক্তিক মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে, নয়-ছয় বাস্তবায়নের কারণে ব্যাংকের মুনাফায় তেমন একটা প্রভাব পড়বে না। আগামী এপ্রিল মাস থেকে ব্যাংকিং খাতে নয়-ছয় সুদহার কার্যকর হচ্ছে। অর্থাৎ তখন থেকে ব্যাংকগুলো আমানতের বিপরীতে সর্বোচ্চ ৬ শতাংশ সুদ দিতে পারবে। অন্যদিকে ঋণের বিপরীতে সুদ নিতে পারবে সর্বোচ্চ ৯ শতাংশ। ব্যাংকের আয়ের প্রধান উৎস হচ্ছে ঋণের সুদ। ব্যাংক যে আমানত নিয়ে থাকে, তারই একটি বড় অংশ আবার ঋণ হিসেবে বিতরণ করে। যে সুদে আমানত নেয়া হয়, ঋণের সুদ হয় তারচেয়ে কিছুটা বেশি। এই দুই সুদ হারের মধ্যে যে ব্যবধান তাই ব্যাংকের আয়। এর বাইরে বিভিন্ন ধরনের ফি ও কমিশন থেকেও ব্যাংকের কিছু আয় হয়ে থাকে। এই আয় থেকে ব্যাংকের পরিচালন ব্যয় মেটানো, মন্দ ঋণের বিপরীতে সঞ্চিত রাখা এবং আয়কর দেয়ার পর কোন অর্থ উদ্বৃত্ত হলে সেটি হয় ব্যাংকের নিট মুনাফা। আর এই মুনাফা থেকেই ব্যাংক লভ্যাংশ বিতরণ করে থাকে। এপ্রিল থেকে ঋণের সুদ হার সর্বোচ্চ ৯ শতাংশ বেঁধে দেয়ায় ব্যাংকের আয় কমে যাবে বলে গুজব ছড়িয়ে পড়েছে পুঁজিবাজারে। আর আয় কমলে ব্যাংকের লভ্যাংশ দেয়ার সামর্থ্য কমে যাবে এমন আশঙ্কায় বিনিয়োগকারীদের অনেকে ব্যাংকিং খাতের শেয়ার থেকে বিনিয়োগ প্রত্যাহার করে নিচ্ছেন। তাতে এই খাতের শেয়ারের দাম কমে যাচ্ছে। আমাদের বাজার মূলধনে ব্যাংকিং খাতের অংশ সবচেয়ে বেশি। তাই এই খাতের শেয়ারের দরপতনে মূল্যসূচকে ব্যাপক প্রভাব পড়ছে। তাতে বাজারে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ায় অন্যান্য খাতের শেয়ারের মূল্যও কমে যাচ্ছে। কিন্তু বাস্তবে নয়-ছয়ের কারণে ব্যাংকের মুনাফায় তেমন কোন নেতিবাচক প্রভাব পড়বে না বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীদের সংগঠন এ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) চেয়ারম্যান ও ইস্টার্ন ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আলী রেজা ইফতেখার ইতোমধ্যে একাধিক গণমাধ্যমে নয়-ছয়ের প্রভাব নিয়ে কথা বলেছেন। তার মতে, নয়-ছয়ের কারণে ব্যাংকের মুনাফায় তেমন একটা প্রভাব পড়বে না। এর কারণ হিসেবে তিনি বলেন, ব্যাংকের মুনাফা হয় মূলত স্প্রেড থেকে। নয়-ছয়ের কারণে সুদ খাতে ব্যাংকের আয় যেমন কমবে, তেমনই এই খাতে ব্যয়ও কমবে। অর্থাৎ আমানত ও ঋণের সুদ হারের ব্যবধান প্রায় অপরিবর্তিত থাকবে। এ কারণে বিষয়টি মুনাফায় কোন প্রভাব ফেলবে না। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি ব্যাংকের প্রধান অর্থ কর্মকর্তা বলেন, নয়-ছয়ের কারণে তুলনামূলক দুর্বল ব্যাংকগুলো একটু ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। কিন্তু ভাল মৌলের ব্যাংকের ব্যবসায় তেমন প্রভাব পড়বে না। তিনি বলেন, একটি ব্যাংক নানা ধরনের আমানত নিয়ে থাকে। এখন মেয়াদী আমানতের সুদের হার যদি ৬ শতাংশ হয় তাহলে সঞ্চয়ী হিসাবের আমানতে সুদের হার হতে পারে ২-৩ শতাংশ। আর এমনিতেই চলতি হিসাবে থাকা আমানতের বিপরীতে কোন সুদ দেয়া হয় না। সব মিলিয়ে তাই তহবিলের ব্যয় ৫ শতাংশের বেশি হবে না। এর বিপরীতে যদি ৯ শতাংশ সুদ পাওয়া যায়, তাহলে স্প্রেড দাঁড়ায় ৪ শতাংশের মতো। বর্তমানেও কিন্তু স্প্রেড এই পর্যায়েই আছে। তাই শুধু নয়-ছয়ের কারণে ব্যাংকের মুনাফা কমার কথা নয়।
×