ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

পদ্মায় অবৈধ বালি উত্তোলণে সর্বশান্ত শত শত কৃষক

প্রকাশিত: ০৩:২১, ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২০

পদ্মায় অবৈধ বালি উত্তোলণে সর্বশান্ত শত শত কৃষক

নিজস্ব সংবাদদাতা, পাবনা ॥ সুজানগর ও পাবনা সদর উপজেলায় পদ্মায় অবৈধভাবে বালি উত্তোলন যেন কিছুতেই থামছে না। সরকারিভাবে বালি উত্তোলন নিষিদ্ধ হলেও প্রভাবশালী মহল ও একশ্রেণির অসাধু বালি ব্যবসায়ী সরকারকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে নদীতীরবর্তী সুজানগরের চরভবানীপুর,চরসুজানগর,হাজারবিঘা,ভাঁয়না ইউনিয়নের লক্ষীপুর,চরবিশ্বনাথপুর ও সদর উপজেলার চরতারাপুরসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে প্রতিদিন অবাধেই বালি তোলা হচ্ছে। আর অবৈধভাবে যত্রতত্র বালি তোলায় এ অঞ্চলে পরিবেশের ভারসাম্যহীনতা মানুষের জীবন যাপনে মারাত্মক বিরুপ প্রভাব ফেলছে। সবচেয়ে বড় অস্তিত্ব সঙ্কটে পড়েছে এলাকার কৃষকেরা। অবাধে বালি তোলায় অসময়ে পদ্মার ভাঙ্গনে কৃষিজমি নদীগর্ভে বিলীণ হচ্ছে। প্রতিদিনই ভাঙ্গছে এসব গ্রামের টমেটো, বেগুন, পেঁয়াজ, বিভিন্ন ধরনের সবজিসহ ফসলের ক্ষেত। বালি উত্তোলনে কৃষকরা যেমন ফসলী জমি হারিয়ে সর্বশান্ত হচ্ছে তেমনি সরকার হারাচ্ছে কোটি কোটি টাকার রাজস্ব। প্রশাসনের কর্মকর্তারা এ ব্যাপারে নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করছেন বলে অভিযোগ তুলেছেন স্থানীয় নদীপাড়ের ক্ষতিগ্রস্থ সাধারণ কৃষক। সুজানগর পৌরসভার চর মানিকদির এলাকার এক কৃষক কান্নাজড়িত কন্ঠে জানান অবৈধভাবে বালি উত্তোলনের ফলে তার ১০ বিঘা আবাদিজমি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে । হেলাল উদ্দিন নামে আরেক কৃষক জানান প্রকাশ্যে এভাবে পদ্মা নদী থেকে বালি উত্তোলন করা হলেও তা বন্ধে সংশ্লিষ্ট প্রশাসন কোন কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করছে না । ক্ষতিগ্রস্থ কৃষক মন্টু প্রামানিক জানান,বালি উত্তোলনকারীরা তাদের জমির উপর দিয়ে রাস্তা তৈরি করে প্রতিদিন ভারী যানবাহণের মাধ্যমে বালি পরিবহণ করায় শত শত বিঘা ফসলী জমি ইতোমধ্যে নদীতে বিলীণ হয়েছে। স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন, কোটি কোটির এ বালি ব্যবসাকে কেন্দ্র করে প্রভাবশালীদের নিয়ে গড়ে উঠেছে একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট। ওই সিন্ডিকেটে জড়িয়ে পড়েছে প্রশাসনের কিছু কর্মকর্তা। আর এ কারণে কেউ প্রতিবাদ করার সাহস পাচ্ছে না। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, উপজেলার কোথাও সরকারিভাবে বালির ইজারা নেই। কিন্ত আইনের তোয়াক্কা না করেই অবৈধভাবে বালি উত্তোলন করা হচ্ছে। আর এ বালি সুজানগর পৌরসভার বিভিন্ন পাকা সড়কসহ উপজেলার অন্যান্য সড়ক দিয়ে ভোর থেকে রাত পর্যন্ত ড্রাম ট্রাক, ট্যাক্টর, দিয়ে বিভিন্ন স্থানে পেঁৗঁছে দেয়া হচ্ছে। আবার অন্যদিকে ভারী যানবাহনের মাধ্যমে বালি পরিবহণ করায় এসব রাস্তার অবস্থাও নাজুক হয়ে পড়েছে। সরকার কোট কোটি টাকা ব্যয়ে সড়ক নির্মাণ করলেও বালির ভারী ট্রাকের চাপে কোন রাস্তাই ২ মাসও টিকছে না। আর স্থানীয় কৃষকরা বালি উত্তোলণকারীদের বাঁধা দিলে মিথ্যা মামলা দায়েরসহ বিভিন্ন হুমকি দিয়ে মুখবন্ধ করা হচ্ছে। উচ্চ আদালত গত জানুয়ারিতে বালি উত্তোলণ বন্ধের ব্যর্থতায় জেলা প্রশাসনের বিরুদ্ধে কঠোর মনোভাব প্রকাশ করলে প্রশাসন মাঠে নামে । গত ২৭ জানুয়ারি সুজানগরের বিভিন্ন পয়েন্ট থেকে অবৈধভাবে উত্তোলন করা জব্দকৃত ১২টি অবৈধ বালুস্তূপ প্রকাশ্য নিলামে বিক্রি করে প্রশাসন। ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার মাধ্যমে সুজানগর উপজেলার সাতবাড়ীয়া ইউনিয়নে ১টি,মানিকহাট ইউনিয়নের মালিফাতে ২টি এবং নাজিরগঞ্জ ইউনিয়নের মহব্বতপুর,বরখাপুর,হাসামপুর ও বুলচন্দ্রপুর এলাকার ৯টিসহ মোট ১২টি অবৈধ বালুর ¯ূÍপ সর্বমোট ২২লক্ষ ৩০হাজার ৮‘শ টাকায় প্রকাশ্য নিলামে বিক্রি করা হয়। বালু উত্তোলনকারীরাই জব্দকৃত কয়েক কোটির এ বালু নামমাত্র মুল্যে নিলামে ক্রয় করে বলে এলাকাবাসী অভিযোগ তুলেছেন। প্রশাসনের এ তৎপরতায় কয়েকদিন বালু তোলা বন্ধ হলেও আগের মতোই এখন শুরু হয়েছে। এ ঘটনায় সরকারের ভাবমুর্তি প্রশ্নের মুখে দাড় করানো হয়েছে বলে ক্ষুব্ধ কৃষকরা অভিযোগ তুলেছেন। ভায়না ইউপি চেয়ারম্যান আমিন উদ্দিন জানান, বালি পরিবহণের কারণে যেমন ফসলী জমি নদীতে বিলীণ হচ্ছে তেমনি এলাকার পাকা সড়ক ভেঙ্গে যান চলাচল ঝুঁকিতে পড়ছে। তিনি অবিলম্বে অবৈধ বালি উত্তোলন বন্ধে প্রশাসনের উর্ধতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। এ বিষয়ে সুজানগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) আসিফ আনাম সিদ্দিকী জানান অবৈধভাবে পদ্মা থেকে বালু উত্তোলনকারী যেই হোক তাদের বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়ে আইনানুগ প্রয়োজনীয় কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
×