ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

পর্যটন শিল্পের সম্ভাবনা

প্রকাশিত: ০৮:৫৭, ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২০

পর্যটন শিল্পের সম্ভাবনা

প্রকৃতির অপার সম্ভাবনায় পরিপূর্ণ বাংলাদেশ। ষড়ঋতুর নৈসর্গিক বৈচিত্র্যে সমৃদ্ধ আবহমান বাংলা শুধু সৃজন ব্যক্তিত্বের আধার ছিল না, তার চেয়েও বেশি বিদেশী পর্যটক, ক্ষুদ্র নৃ-তাত্ত্বিক গোষ্ঠী এবং ভিন দেশের রাজা-মহারাজাদেরও আকর্ষণীয় স্থান হিসেবে প্রসিদ্ধ ছিল। সমুদ্র, পাহাড়, নদী পরিবেষ্টিত ক্ষুদ্র এই সৌন্দর্যের তীর্থভূমি আজও বিশ্ব পর্যটকদের মুগ্ধ করার অপার বিস্ময়। চট্টগ্রামের কক্সবাজার বঙ্গোপসাগরের সুবিশাল জলরাশি সমৃদ্ধ বিশ্বের বৃহত্তম সমুদ্র সৈকত হিসেবে তার গৌরব আর অহঙ্কারকে ধরে রেখেছে। পাহাড়ী ঘন সবুজের আবর্তে পরিবেষ্টিত বান্দরবান, পার্বত্য চট্টগ্রাম এবং সিলেটের সুশোভিত প্রাকৃতিক সম্ভার পর্যটন শিল্পকে নানামাত্রিকে নতুন নতুন সম্ভাবনার দ্বারও খুলে দিচ্ছে। আর সুন্দরবনের নয়নাভিরাম বনাঞ্চল দেশী-বিদেশী ভ্রমণপিয়াসীদের আবেদন যোগাতে তার নৈসর্গিক শোভাকে ক্রমাগতই উজাড় করে দিচ্ছে। সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ডের মতো দেশগুলোর প্রকৃতির অপার মাধুর্য যেমন সারা বিশ্বকে আনন্দ আর ভ্রমণের খোরাক জোগায়, সে মাত্রায় বাংলাদেশও তার নৈসর্গিক ডালি সাজিয়ে ভ্রমণবিলাসী মানুষদের মনোরঞ্জন করতে বিন্দুমাত্র কার্পণ্য করে না। প্রকৃতিই তার সমস্ত সৌন্দর্য আর মাধুরী অবারিত করে শ্যামল বাংলাকে বিশ্ব দরবারে দর্শনীয় স্থান হিসেবে চিহ্নিত করেছে। তবে শুধু প্রকৃতির দানে ভরপুর হওয়ার চাইতেও প্রাসঙ্গিক সব সুযোগ-সুবিধাও সংশ্লিষ্টদের মাঝে নিয়ে আসা অত্যন্ত জরুরী। সময়ের নিরন্তর চাহিদায় সারা বিশ্ব নিয়তই গতিশীল। তথ্যপ্রযুক্তির সমন্বয়ে নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন এক চলমান প্রক্রিয়া। সেই পরিস্থিতির সঙ্গে বাংলাদেশকেও সমান তালে এগিয়ে যাওয়া সময়ের যৌক্তিক দাবি। তেমন সম্ভাবনাকে সমধিক গুরুত্ব দিয়ে সরকার প্রণয়ন করতে যাচ্ছে পর্যটন শিল্পের মহাপরিকল্পনা। সমৃদ্ধ অর্থনৈতিক খাতকে আরও বেগবান করে পর্যটন শিল্পকে সে মাত্রায় নিয়ে যাওয়া হবে, যাতে নতুন মেগা প্রকল্পে দেশের কর্মসংস্থান এবং ব্যাপক সম্ভাবনার দ্বার খুলে যায়। এই মহাপরিকল্পনায় বিশ্বের তুলনার অপেক্ষাকৃত পিছিয়ে পড়া মনোমুগ্ধকর বাংলাদেশের বিদ্যমান দৃশ্য একেবারে বদলে যাবে। সেখানে প্রদর্শিত হবে সম্ভাবনাময় এক আধুনিক সময়ের বাংলাদেশ। যৌক্তিক আর প্রণালীবদ্ধভাবে পর্যটন শিল্পকে গতিশীল আর উন্নত মানে নিয়ে যেতে পর্যায়ক্রমিক কিছু কর্ম প্রকল্পও প্রাধান্য দেয়া হয়। পর্যটনের অফুরন্ত প্রাকৃতিক সম্পদ এবং আকর্ষণীয় বিষয়গুলোকে নির্ণায়ক ধরে সে মাত্রায় সেখানে আধুনিক এবং সময়ের যথাযথ প্রয়োজনকে সন্নিবেশ করাও এই মহা কর্মযোগের অন্যতম লক্ষ্য। তেমন নির্দেশনাকে সুচিন্তিত কার্যক্রমে এগিয়ে নেয়া। মেগা প্রকল্পের উন্নয়নের লক্ষ্য, গন্তব্য এবং গুরুত্বকে বিবেচনায় এনে এই বৃহৎ খাতটিকে অর্থনৈতিক জোনের অংশীদারিত্বে নিয়ে আসাই হবে অগ্রাধিকার। সামগ্রিক অর্থনীতির অন্তত ১০% যেন এই খাত থেকে আসে সেটাও নিশ্চিত করা হবে। সারা বিশ্বের সঙ্গে তথ্যপ্রযুক্তির নিয়মিত সংযোগ স্থাপন এই শিল্পের এক গুরুত্বপূর্ণ পর্যায়। এই মহৎ ও সম্প্রসারিত মেগা প্রকল্পটি শুরু করা হবে যে কোন পাহাড়ী অঞ্চল থেকে। বিশ্বমানের এই কর্মপ্রক্রিয়াটি যাতে কোন ধরনের ত্রুটিবিচ্যুতি আর দীর্ঘসূত্রতার আবর্তে পড়ে না যায়, সে ব্যাপারে নজরদারি আবশ্যক।
×