ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১০ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১

বহুতল ভবন ও আবাসিক এলাকা

প্রকাশিত: ০৭:৫৮, ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২০

বহুতল ভবন ও আবাসিক এলাকা

একটি আধুনিক পরিকল্পিত শহর গড়ে তোলার ক্ষেত্রে অনেক বিবেচনাই কাজ করে থাকে। যুক্তিবুদ্ধি ও বিজ্ঞানমনস্কতা তার নেপথ্যে তো থাকেই, প্রধান বিবেচনা হয়ে ওঠে মানসিক ও শারীরিক স্বাস্থ্যসম্মত উপায়ে আনন্দময় বাস-উপযোগিতা। অনাগত শিশুদের বিকাশের বিষয়টিও মাথায় রাখতে হয় নগর পরিকল্পনাবিদদের। নগর-মহানগরে জনসংখ্যার বিষয়টি অনেক সময়েই নিয়ন্ত্রণ করা যায় না। ফলে দরকার হয়ে পড়ে বাড়তি বা অতিরিক্ত বহুতল ভবনের। সেই বহুতল ভবন গড়ে তোলার বেলায়ও মনে রাখতে হয় সেখানে বসবাসকারী নাগরিকদের কথা। মানুষ তো শুধু সারাক্ষণ ঘরে বাস করেন না, তাকে ঘরের বাইরে কর্মস্থলে বা অন্য কাজে এবং বিনোদন উপভোগের জন্য বেরুতে হয়। তাই সড়ক থাকতে হবে পর্যাপ্ত ও সুপরিসর। আর যে ভবনে বাস করবে মানুষ সেখানে আধুনিক জীবনযাপনের সব ব্যবস্থাই সুগম রাখা অত্যাবশ্যক। যেমন পার্কিং এবং বেশি মানুষের ওপরতলায় আরোহণের জন্য একাধিক সুপরিসর লিফট। এ তো গেল আবাসিক এলাকার বহুতল ভবনের কথা। বাণিজ্যিক ভবনের জন্যও সুবিধাদি প্রয়োজন আরেকটু বেশি। বিশ্বের কোন দেশেই আবাসিক এলাকায় বাণিজ্যকেন্দ্র বা ব্যবসার কার্যালয় গড়ে ওঠে না। পক্ষান্তরে বাণিজ্যিক এলাকায়ও কোন পারিবারের রাতযাপনের সুযোগ থাকে না। একমাত্র ব্যতিক্রম বোধকরি বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা। প্রথমত এটি সুপরিকল্পিতভাবে গড়ে তোলা হয়নি। যখন পরিকল্পনা অনুসারে শহরের পুনর্বিন্যাস এবং সম্প্রসারণ নিয়ন্ত্রিত হতে শুরু করল তখন আবার জনতার অতিরিক্ত চাপে মহানগরীর ত্রাহি মধুসূদন অবস্থা। ফলে কোন পরিকল্পনাই সুষ্ঠুভাবে বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়ে ওঠেনি। কিন্তু আবাসিক এলাকায় বাণ্যিজ্যকভাবে ব্যবহারের জন্য কলকারখানা গড়ে তোলা, সুস্থ মানুষের জন্য নির্ধারিত বহুতল ভবনের পাশেই আরোগ্যনিকেতনের প্রতিষ্ঠা- সব মিলিয়ে উদ্ভট, অস্বাস্থ্যকর হতবাক করা কান্ডকারখানা চালু হয়ে গেলে তার লাগাম টানা আর সম্ভব হয়নি। ফলে আমরা দেখেছি নিমতলি-চকবাজারের মতো ট্রাজেডি। আগুন লাগার পর ঢাকা সিটি করপোরেশন সাফাই গায়, অগ্নিদগ্ধ ভবনসহ আবাসিক এলাকায় কোন ভবনেই গুদাম করার বা কারখানা স্থাপনের অনুমতি তারা দেয়নি। অর্থাৎ সেখানে স্থাপিত সব গুদামই অবৈধ। তাহলে সেই গুদামগুলো কেন সরানো হয় না? গতবছর প্রবাসীদের জন্য বিশ্বের সবচেয়ে ব্যয়বহুল শহরের তালিকায় ৪৭তম অবস্থানে ছিল ঢাকা, যদিও নানাবিধ দূষণের বিচারে এটি বিশ্বের অন্যতম নিকৃষ্ট শহর। ব্যয়বিবেচনায় ঢাকার সঙ্গে যৌথভাবে একই অবস্থানে ফ্রান্সের সেরা পর্যটন নগরী প্যারিস। ব্যয়বহুল ও দূষণযুক্ত হলেও ঢাকায় বিদেশীদের আগমন থেমে নেই। রাজধানী শহর হিসেবে ঢাকা তার জনসংখ্যার দিক থেকে সর্বোচ্চ সীমা অতিক্রম করেছে বহু বছর আগেই। এখন পৌনে দুই কোটি লোকের এই মহানগরীতে মানুষের গায়ে গা লাগার মতো দশা। ঢাকাবাসীদের যত সঙ্কট-সমস্যাই থাকুক না কেন, চড়া মূল্য পরিশোধের ফলে বিদেশীদের বোঝার উপায়ই নেই যে ব্যয়বহুল এই শহরে বেশির ভাগ স্থানীয় অধিবাসীরই জীবনমান এখনও কাক্সিক্ষত মাত্রায় পৌঁছতে পারেনি। খাদ্যে ভেজাল, পানিতে দূষিত পদার্থ, বায়ুতে বিষ নিয়ে জনচাপে ভারাক্রান্ত যে মহানগরীটি ভেতরে ভেতরে বিপন্ন হয়ে উঠছে, সেটির উত্তরণ ঘটানোর জন্য নাগরিক সচেতনতা ও সরকারী সক্রিয়তার কোন বিকল্প নেই। রাজধানীর উন্নয়ন একটি সামগ্রিক বিষয়। রাজধানীবাসীর জীবনমান উন্নয়নের জন্য নানামুখী প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে। সব পক্ষকেই আন্তরিকতা ও দায়িত্বশীলতার সঙ্গে কাজ করে যেতে হবে। আবাসিক ও বাণিজ্যিক এলাকাকে পৃথক রাখতেই হবে। তাহলে কয়েক বছরের মধ্যে নিরাপদ নগরীর আন্তর্জাতিক সূচকে আমাদের প্রিয় শহরের যে উন্নতি হবে, সেটি নিশ্চিত।
×