ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

মতিনের জোড়া গোলে সেমিতে বাংলাদেশ

প্রকাশিত: ১১:৪৪, ২০ জানুয়ারি ২০২০

মতিনের জোড়া গোলে সেমিতে বাংলাদেশ

জাহিদুল আলম জয় ॥ আসরের বর্তমান চ্যাম্পিয়ন ফিলিস্তিনের কাছে ২-০ গোলে হেরে মিশন শুরু করে স্বাগতিক বাংলাদেশ। যে কারণে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক গোল্ডকাপ ফুটবলের গ্রুপপর্ব থেকেই বিদায়ের শঙ্কায় পড়ে লাল-সবুজের দেশ। কিন্তু ‘এ’ গ্রুপের শেষ ম্যাচে শ্রীলঙ্কাকে ৩-০ গোলে উড়িয়ে দিয়ে শঙ্কার কালো মেঘ দূর করেছে কোচ জেমি ডে’র দল। রবিবার রাতে বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে বাংলাদেশের জয়ে জোড়া গোল করেন বসুন্ধরা কিংসের ফরোয়ার্ড মতিন মিয়া। অপর গোলটি করেন একই দলের ফরোয়ার্ড মোহাম্মদ ইব্রাহিম। দাপুটে এই জয়ে ‘এ’ গ্রুপের রানার্সআপ হয়ে সেমিফাইনাল নিশ্চিত করেছেন রহমত, বিশ্বনাথ, সাদ, সুফিলরা। দুই ম্যাচের দু’টিতেই জিতে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়ে আগেই শেষ চার নিশ্চিত করেছে ফিলিস্তিন। ম্যাচটির পর বাংলাদেশের সেমিফাইনালের প্রতিপক্ষও ঠিক হয়ে গেছে। আগামী বৃহস্পতিবার ‘বি’ গ্রুপের চ্যাম্পিয়ন বুরুন্ডির বিরুদ্ধে ফাইনাল নিশ্চিতের মিশনে নামবে স্বাগতিকরা। এর আগেরদিন বুধবার প্রথম সেমিফাইনালে ফিলিস্তিনের প্রতিপক্ষ নিশ্চিত হবে আজকের সিশেলস ও মরিশাসের ম্যাচের পর। আর সবার আগে গোল্ডকাপ থেকে বিদায় নিশ্চিত হয়েছে পাকির আলীর শ্রীলঙ্কা দলের। অথচ ম্যাচের আগে চরম দুঃসংবাদ আসে বাংলাদেশ দলের জন্য। অধিনায়ক জামাল ভুঁইয়া পুরোপুরি সুস্থ হতে পারেননি। ছিটকে গেছেন লঙ্কানদের বিরুদ্ধে ডু অর ডাই ম্যাচ থেকে। মধ্যমাঠের এই কান্ডারি ছাড়াও রক্ষণভাগের অন্যতম সেরা সেনানি ইয়াসিন খানও ছিলেন না। গুরুত্বপূর্ণ দুই খেলোয়াড়কে ছাড়াই দ্বীপদেশের বিরুদ্ধে অগ্নিপরীক্ষায় অবতীর্ণ হয় লাল-সবুজের দেশ। সেই পরীক্ষায় দারুণভাবে পাস করেছেন ফুটবলাররা। নিজেদের অন্যতম সেরা খেলা খেলে সহজেই উড়িয়ে দিয়েছেন রাবণের দেশের ফুটবলারদের। ম্যাচে জামাল-ইয়াসিনদের অভাব বুঝতেই দেননি ইব্রাহিম-বিশ্বনাথরা। বাংলাদেশের জয়ের নায়ক মতিন মিয়া। দু’পায়ের জাদুতে বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে আসা কয়েক হাজার দর্শককে মোহিত করেছেন বসুন্ধরা কিংসের এ ফরোয়ার্ড। প্রথম ম্যাচ থেকে চারটি পরিবর্তন নিয়ে মাঠে নামে বাংলাদেশ। উরুর চোটে জামাল ভুঁইয়া ছিলেন না। জ্বরের কারণে ইয়াসিন খান, রায়হান হাসান এবং মামুনুল ইসলাম মামুনকে বসিয়ে রাখেন কোচ জেমি ডে। এই চারজনের বদলে সুযোগ হয় বিশ্বনাথ ঘোষ, রিয়াদুল হাসান, মাহবুবুর রহমান সুফিল ও মানিক হোসেন মোল্লার। প্রথমবারের মতো জাতীয় দলের জার্সি গায়ে জড়িয়েছেন মানিক, আর জামালের অনুপস্থিতিতে প্রথমবার অধিনায়কের আর্মব্যান্ড পড়েছেন তপু বর্মণ। অনেকটা নতুন কম্বিনেশন নিয়ে মাঠে নামে বাংলাদেশ। ৪-৩-৩ ফরমেশনে খেলা বাংলাদেশ শুরুতেই আক্রমণাত্মক খেলতে থাকে। অপেক্ষাকৃত দুর্বল শ্রীলঙ্কার রক্ষণে বারবার চাপ প্রয়োগ করেন মতিন মিয়া, সুফিল ও ইব্রাহিম। এদের মধ্যে মতিন ছিলেন আলাদা। দুইপ্রান্ত দিয়েই খেলেছেন তিনি। দ্রুতগতিতে বারবার লঙ্কান খেলোয়াড়দের বোকা বানান। স্কিলের দারুণ প্রদর্শনী দেখান রাজমিস্ত্রি থেকে ফুটবলার হওয়া মতিন। তার করা দুটি গোলই ছিল অসাধারণ। ম্যাচের ১৭ মিনিটে মাঝমাঠ থেকে রিয়াদুল হাসানের উড়ন্ত ক্রস বাঁপায়ে নামান। গায়ের সঙ্গে লেগে থাকা লঙ্কান এক খেলোয়াড়কে কাটিয়ে বক্সের মধ্যে ঢুকে পড়ে ডান পায়ের যে শট নেন। আর সেটা আশ্রয় নেয় লঙ্কার জালে। চার মিনিট পর মোহাম্মদ ইব্রাহিমের স্বার্থপরতায় ব্যবধান বাড়েনি। একক প্রচেষ্টায় বল নিয়ে লঙ্কান দুই খেলোয়াড়কে কাটান ইব্রাহিম। নিজে গোল করার চেষ্টা করেন। সেটা করতে গিয়ে বল মারেন সরাসরি শ্রীলঙ্কার গোলরক্ষক অরুণারিসির গায়ে। অথচ ফাঁকায় দাঁড়ানো সুফিলকে মাইনাস করলেই গোলের সম্ভাবনা ছিল শতভাগ। সেই ইব্রাহিমই প্রায়শ্চিত্ত করেছেন দলের তিন নম্বর গোল করে। প্রথমার্ধে এক গোলে এগিয়ে থাকা বাংলাদেশ বিরতির পরও প্রাধান্য বিস্তার করে খেলে। এই ধারাবাহিকতায় দ্বিতীয় গোল আসে ৬৪ মিনিটে। এবারও লক্ষ্যভেদ করেন মতিন মিয়া। লঙ্কান ডিফেন্ডার জুদে সুপানের কাছ থেকে বল কেড়ে নিয়ে একক প্রচেষ্টায় দ্রুতগতিতে এগিয়ে যান। এরপর অতিথি গোলরক্ষককে কাটিয়ে ঠা-া মাথায় প্লেসিংয়ে জালে পাঠান সিলেটের এ ফরোয়ার্ড। মতিনের মতো দুর্দান্ত খেলা ইব্রাহিম গোল করেন ম্যাচের ৮৩ মিনিটে। বদলি ফরোয়ার্ড রাকিব হোসেনের মাইনাসে শুধু পা লাগিয়ে দেন বসুন্ধরা কিংসের এ ফরোয়ার্ড। দারুণ জয়ের ম্যাচে শেষদিকে ম্যাচের অধিনায়ক তপু বর্মণের লালকার্ড আফসোস হয়ে রইল। সেমিফাইনালে এ ডিফেন্ডারকে ছাড়াই খেলতে হবে বাংলাদেশকে।
×