ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

খাদ্যে ভেজালে উদ্বেগ

প্রকাশিত: ০৮:৪৬, ১১ জানুয়ারি ২০২০

 খাদ্যে ভেজালে উদ্বেগ

সিলেটে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে তৃতীয় সমাবর্তন অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ অত্যন্ত ক্ষোভের সঙ্গে খাদ্য ব্যবসায়ীদের অনৈতিক কাজের ব্যাপারে তীব্র নিন্দা জানান। যারা বাণিজ্যিক স্বার্থে খাদ্যপণ্যে ভেজাল প্রক্রিয়াজাতকরণ করে তারা দেশ ও জাতির শত্রু। খাদ্য মানুষের জীবনধারণের প্রধান মাধ্যমই শুধু নয়, স্বাস্থ্য সুরক্ষারও নিয়ামক শক্তি। সেই সজীব, সতেজ, টাটকা খাদ্যসামগ্রীকে যারা ভেজালে সয়লাব করছে তারা ক্ষমার অযোগ্য অপরাধী। কারণ এমন সব ব্যবসায়ী চক্র মানুষের মূল্যবান জীবন নিয়ে মরণ নেশায় মেতে উঠেছে। বিশেষ করে ফরমালিন মেশানো বিষজাত খাদ্য মানুষের শরীরের পুষ্টি সাধনের বিপরীতে প্রাণঘাতী মরণ কামড় দিতেই ব্যস্ত থাকে। ফলে দেশে প্রতিনিয়ত ক্যান্সার রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। আগে এই মরণব্যাধির একটি নির্দিষ্ট মাত্রা ছিল। আজ তা সমস্ত সীমাকে অতিক্রম করেছে। প্রাণ সংহারের মতো আশঙ্কা তৈরির পাশাপাশি সার্বক্ষণিক স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে অসহায় ও নিরপরাধ জনগণ মৃত্যুর দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে যাচ্ছে। সমাবর্তনে বিশ্ববিদ্যালয়কে জ্ঞানার্জনের সর্বোচ্চ পাদপীঠ বিবেচনায় রেখে রাষ্ট্রপতি অসহনীয় দুরবস্থা থেকে বের হওয়ার পরামর্শ দেন। পাশাপাশি সচেতন জনগোষ্ঠীকেও এ ব্যাপারে সাবধান ও সতর্ক থাকারও উদাত্ত আহ্বান জানান। দেশের বিশিষ্টজনদেরও অনেক দায়বদ্ধতা থাকে নিরাপদ খাদ্য কর্মসূচীকে প্রতিনিয়তই মানুষের কল্যাণে পরিচালিত করার। তিনি বলেন, বিষযুক্ত খাবার গ্রহণে যদি কোন মানুষ মারা যান সেটা হবে একেবারে খুন করার শামিল। সুতরাং এই অপরাধ অমার্জনীয়। শাক-সবজি, ফল-মূল, মাছ-মাংস, এমনকি মসলার গুঁড়াতেও অপচনশীল ফরমালিন মিশিয়ে খাদ্যপণ্য সুরক্ষার নামে অরক্ষিত করে দেয়া হয়, যা কোন মানুষকে সহজেই আক্রান্ত করতে সময় নেয় না। বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রপতি স্পষ্টভাবে উল্লেখ করেন, এখানে সম্মানিত শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের অনেক কিছু করণীয় আছে। বিষযুক্ত খাবারের ভয়ঙ্কর প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে জনসচেতনতা বাড়াতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানও নিজের দায়ভাগ এড়াতে পারে না। আর ব্যবসায়ীক চক্রের জনবিরোধী কার্যক্রমকে, কঠিন সিন্ডিকেটকে সততা, মানবিকতা, দেশপ্রেম আর আদর্শ নিষ্ঠায় প্রতিরোধ ও আন্দোলনে লড়াই করা ছাড়া অন্য কোন উপায়ও নেই। পাশাপাশি রাষ্ট্রপতি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার ওপর বিশেষ জোর দেন। তিনি ময়লা-আবর্জনায় ভরা সিলেটের রাস্তাঘাট দেখে অসন্তোষ প্রকাশ করেন। পলিথিন, কাগজ, কলার খোসা, পোঁটলায় ছড়ানো বিশ্রি পরিবেশ তাঁকে আহত করে। এসব ব্যাপারেও সিলেটবাসীকে সতর্ক হতে আহ্বান জানান। উন্নত দেশের সঙ্গে তুলনা করে দুঃখ প্রকাশ করে তিনি বলেন, সেখানে কোন ধরনের আবর্জনা রাস্তার ওপর পড়ে থাকতে দেখা যায় না। এমনকি সেখানকার জনগণ রাস্তায় থুতুও ফেলে না। সার্বিক স্বচ্ছ পরিবেশ নিয়ে এতই সজাগ এবং সাবধান তারা। আমাদেরও সেভাবে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার পরিবেশ তৈরি করে আশপাশের রাস্তাঘাটকে নতুন মাত্রা দেয়া অত্যন্ত জরুরী। আর এই দায়িত্ব নির্দিষ্ট কোন প্রতিষ্ঠানের নয়, দেশের সব মানুষের। আর সর্বজনের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় বাংলাদেশ তার অভীষ্ট গন্তব্যে পৌঁছে যাবে। দেশের দক্ষ মানবসম্পদের মেধা ও শ্রমেই আধুনিক বাংলাদেশ তৈরির সামগ্রিক পরিকল্পনা সফল এবং বাস্তবায়ন হওয়া শুধুই সময়ের অপেক্ষা। বাঁধভাঙ্গা আনন্দ আর উৎসবমুখর পরিবেশে অনুষ্ঠিত এই সমাবর্তন অনুষ্ঠানে অংশ নেয়া শিক্ষার্থীরা তাদের মেধা ও মনন বিকাশের যথার্থ সম্মাননা রাষ্ট্রপতির হাত থেকে নেয়া, সেও এক অবিস্মরণীয় পর্যায়। শিক্ষাজীবনের বিশেষ এক পর্ব শেষ করার আনন্দযোগ যেমন আছে পাশাপাশি বিশ্বমানের আরও উচ্চতর গবেষণার হাতছানিও তাদের নবচেতনায় উদ্দীপ্ত করে, যা শুধু নিজের স্বপ্ন পূরণ নয়, বঙ্গবন্ধুর কাক্সিক্ষত সোনার বাংলা গড়ারও অনমনীয় প্রত্যয়। রাষ্ট্রপতি আগামী প্রজন্মকে শুধু সম্মাননা দিয়েই নয়, উৎসাহ ও উদ্দীপনায় প্রাণিত করলেন।
×