ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

জিও কোডে জমি

প্রকাশিত: ০৯:০৮, ৬ জানুয়ারি ২০২০

 জিও কোডে জমি

পরিবর্তন শুধু মানুষ নয়, প্রকৃতিরও ধর্ম। এক সময় বহুল প্রচলিত ছিল টাকা-আনা-আধুলি-পাই। পরে পরিণত হয়েছে বর্তমান রূপে- এক শ’ পয়সায় এক টাকা, সহজ হিসাব। পাটিগণিতে একদা কড়াকিয়া গন্ডাকিয়া খুব প্রচলিত ছিল। সেটা বিদায় হয়েছে অনেক আগেই। তবে জমির পরিমাপে অদ্যাবধি তা চালু রয়েছে পুরনো দলিল-দস্তাবেজে। এক্ষেত্রে বিভিন্ন অঞ্চলে এর রূপও ভিন্ন ভিন্ন। ফলে হিসাবের গরমিল থাকা স্বাভাবিক ও সঙ্গত। এতে স্বভাবতই জট ও জটিলতার সৃষ্টি হয় জমি বেচাকেনায়, মামলা-মোকদ্দমায়। এর নিরসনে অতঃপর বদলে যাচ্ছে জমির মাপ-পরিমাপ, পুরনো হিসাব-নিকাশ। এখন থেকে দেশের সর্বত্র জমির পরিমাপ হবে ইংরেজী ডেসিমেল বা বাংলায় শতাংশ হিসেবে। এক ডেসিমেল মানে এক শতাংশ। তবে কাঠা বিঘা একর থাকবে। মোট হিসাব করা হবে ডেসিমেল শতাংশ হিসেবে। এলাকা ও পাড়ার নামও ভিন্ন ভিন্ন থাকবে না। প্রামাণ্য হিসেবে যেটা সমধিক প্রচলিত সেটিই গৃহীত ও অনুসৃত হবে দেশের সর্বত্র। এসবই নিয়ে আসা হবে জিও কোডের অধীনে। উল্লেখ্য, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান আইন ২০১৩ অনুযায়ী দেশের ৬৪ জেলার জন্য প্রস্তুতকৃত জিও কোডের অধীনে এসব বিন্যস্ত করা হবে। প্রশাসনিক বিন্যাস অনুযায়ী জিও জোড সিস্টেম আধুনিকীকরণ করে জিও কোডের গুণগত মানোন্নয়ন এবং বিদ্যমান জিও কোড সিস্টেমকে রিলেশনাল ডেটাবেজ সিস্টেমে (আরডিবিএমএস) উন্নীত করা হবে। উল্লেখ্য, জিও কোড বই এখনও প্রকাশ হয়নি। তার আগে বাংলাদেশের প্রশাসনিক ইউনিটগুলো জনপ্রশাসন, ভূমি মন্ত্রণালয়, স্থানীয় সরকার, জননিরাপত্তা বিভাগসহ সংশ্লিষ্ট সবার মতামত ও অংশগ্রহণে চূড়ান্ত করা হবে বিষয়টি। বিবিএস জিও কোড বই আকারে প্রকাশের আগে অনুমোদনের জন্য দেয়া হবে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে। পরে তা প্রকাশ করা হবে গেজেট আকারে। ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণে যা অবশ্যই এক ধাপ অগ্রগতি। এর পাশাপাশি আধুনিক ও যুগোপযোগী করা হচ্ছে সেই সুদূর ব্রিটিশ আমলে প্রণীত ভূমি সংক্রান্ত আইন ও বিধি। নতুন আইন তৈরির পাশাপাশি পুরনো আইন সংস্কারের মাধ্যমে দেশের মানুষকে আরও গতিশীল ভূমিসেবা প্রদানই এর অন্যতম লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য। উল্লেখ্য, দেশে ভূমি সংক্রান্ত আইন, বিধি, জটিলতা, বেচাকেনা, রেজিস্ট্রেশন, নামজারি, খাজনা প্রদানে নানা সমস্যায় পড়তে হয়, তদুপরি দেওয়ানি মামলার পাহাড় ও দীর্ঘসূত্রতা নিয়ে প্রায় সর্বস্তরের মানুষের অভিযোগের অন্ত নেই। এর পাশাপাশি উৎকোচ প্রদান, ঘুষ, দুর্নীতি, অনিয়ম, অব্যবস্থাপনার অভিযোগ তো আছেই। এসব অবসানের লক্ষ্যেই ভূমি আইন আধুনিক ও সময়োপযোগী করা হচ্ছে। ইতোপূর্বে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার অন্যতম অঙ্গ হিসেবে ভূমি মন্ত্রণালয় অনলাইনে জমির খাজনা ও নামজারি ফি জমা দেয়ার উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। এ রকম একটি যুগোপযোগী আইন প্রণয়ন এবং তা মানার বাধ্যবাধকতা নিয়ে দ্বিমতের অবকাশ নেই। সত্য বটে, বাংলাদেশ বর্তমানে উন্নয়নের মহাসড়কে অবস্থান করছে এবং শহর-বন্দরসহ নানা স্থানে শিল্প-কারখানা ও নানা স্থাপনা নির্মাণ হচ্ছে। তবে এসবের অধিকাংশই অপরিকল্পিত, ভূমির ব্যবহার যথেচ্ছ এবং কোথাওবা অবৈধ। সরকারী খাস জমি, এমনকি জলাশয়, নদ-নদী দখল করেও চলছে নির্মাণ পর্বের দক্ষযজ্ঞ। তবে ভূমির পরিমাণ যেহেতু সীমাবদ্ধ ও সীমিত, সেহেতু তা অবশ্যই পরিকল্পিত উপায়ে ব্যবহারের দাবি রাখে। সেটাও হতে হবে সুষ্ঠু, সমন্বিত, সর্বোপরি ডিজিটাল ও পরিবেশবান্ধব। নতুন ভূমি আইনে তা নিশ্চিত করা গেলে একদিকে যেমন জমির অপরিকল্পিত ব্যবহার রোধ হবে, অন্যদিকে সুনিশ্চিত হবে উন্নয়নের গতি। অব্যাহত থাকবে খাদ্য নিরাপত্তা। অনলাইনে অর্থ প্রদানের মাধ্যমে জমির খাজনা, নামজারিসহ রেজিস্ট্রেশনের ব্যবস্থা সম্পন্ন করা গেলে এসব কাজ অত্যন্ত সহজে হয়রানি ব্যতিরেকে করা সম্ভব হবে।
×