ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১১ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১

যশোরের মাঠে মাঠে হলুদের সমারোহ

প্রকাশিত: ০৯:২২, ১৮ ডিসেম্বর ২০১৯

যশোরের মাঠে মাঠে হলুদের সমারোহ

স্টাফ রিপোর্টার, যশোর অফিস ॥ যশোরে সরিষার হলুদ ফুলে ছেয়ে গেছে দিগন্ত জোড়া মাঠ। অগ্রহায়ণের হিমেল বাতাসে দোল খাচ্ছে হলুদ সরিষার ফুল। সরিষা ফুলের হলুদ রাজ্যে মৌমাছির গুঞ্জন দোলা দিচ্ছে কৃষকের হৃদয়ে। আর বাম্পার ফলনের হাতছানিতে চোখেমুখে ফুটে উঠেছে আনন্দের হাসি। যশোর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্র মতে, এ জেলা সরিষা চাষের জন্য খুবই উপযোগী। জেলায় সাধারণত বারি সরিষা ১৪ ও সরিষা-১৫, সোনালী সরিষা (এসএস-৭৫) ও স্থানীয় টরি-৭ চাষ হয়। জেলার আট উপজেলায় এবার ১২ হাজার ৬০ হেক্টর জমিতে সরিষার আবাদ হয়েছে। গত বছর আবাদ হয়েছিল ৯ হাজার ৭শ’ ৭৫ হেক্টর জমিতে। গত বছরের তুলনায় চলতি মৌসুমে প্রায় সাড়ে ৫ হাজার জমিতে বেশি আবাদ হয়েছে। তার মধ্যে যশোর সদর উপজেলায় ২ হাজার ৫শ’ হেক্টর, শার্শা উপজেলায় ১ হাজার ৫শ’ হেক্টর, ঝিকরগাছা উপজেলায় ২ হাজার হেক্টর, চৌগাছা উপজেলায় ১ হাজার হেক্টর, অভয়নগর উপজেলায় ১ হাজার ৫শ’ হেক্টর, বাঘারপাড়া উপজেলায় ১ হাজার ৫শ’ হেক্টর, মনিরামপুর উপজেলায় ১ হাজার ৫শ’ হেক্টর, কেশবপুর উপজেলায় ১ হাজার ৫শ’ হেক্টর জমিতে সরিষার রেকর্ড পরিমাণ আবাদ হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে চলতি মৌসুমে এ অঞ্চলে সরিষার উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে এমনটি আশা কৃষকদের। যশোর সদর উপজেলার পুলেরহাট এলাকার কৃষক শামসুর আলী জানান, চলতি মৌসুমে দুই বিঘা বারি-১৪ সরিষা চাষ করেছি। সরিষায় ধানের চেয়ে অধিক লাভজনক হওয়ায় প্রতিবছরের মতো এবারও আবাদ করেছি। বেশ ভাল ফুল ধরেছে। আসা করা যায় ফলন ভাল হবে। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বছরের পর বছর স্থানীয় জাত চাষ করে ফলন কম হওয়া ও উৎপাদনে সময় বেশি লাগার কারণে কৃষকরা সরিষা চাষ অনেকাংশে কমিয়ে দেয়। তবে চলতি মৌসুমের শুরুতে উপজেলা কৃষি বিভাগ ‘বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট’ উদ্ভাবিত বেশি ফলনশীল বারি-১৪ জাতের সরিষা চাষে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করে। এ জাতের সরিষা মাত্র ৭৫-৮০ দিনে ঘরে তোলা যায়। প্রতি হেক্টরে ফলন হয় প্রায় দেড় হাজার কেজি। সরিষা কেটে ওই জমিতে আবার বোরো আবাদ করা যায়। এতে কৃষি জমির সর্বাধিক ব্যবহার নিশ্চিত হয়। শার্শা উপজেলার শ্যামলাগাছি গ্রামের সরিষা চাষি নজরুল ইসলাম জানান, তিনি এ বছর ২ বিঘা জমিতে বারি-১৪ ও বিনা-৯/১০ জাতের সরিষার আবাদ করেছেন। বিঘাপ্রতি তার প্রায় ৩-৪ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। সরিষা ভাল হয়েছে। তিনি আশা করছেন বাম্পার ফলন হবে। একই গ্রামের কৃষক আফজাল শেখ জানান, গত বছর বাজারে সরিষার দাম ভাল পাওয়ায় এবারও সরিষা চাষ করেছেন। ফলন ভাল ও দাম পেলে আগামী বছর সরিষা চাষে অনেকেই ঝুঁকে পড়বেন। উপজেলার ঘিবা গ্রামের কৃষক মহিউদ্দিন জানান, কৃষি অফিসের পরামর্শে ২ বিঘা জমিতে উন্নত জাতের সরিষার আবাদ করেছেন। সরিষার জমিতে ধানের আবাদও ভাল হয় এবং বোরো চাষে খরচ কম হয়। শার্শা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ সৌতম কুমার শীল জানান, কৃষকদের যথাযথ পরামর্শ ও পরিচর্যার বিষয়ে দিক নির্দেশনা দেয়া হচ্ছে। বারি-১৪ সহ অন্যান্য সরিষা বপনের মাত্র ৭৫-৮০ দিনের মধ্যে এর ফলন পাওয়া যায়। এ সরিষা উঠিয়ে আবার বোরো আবাদ করতে পারেন বলে একে কৃষকরা ‘লাভের ফসল’ হিসেবে অভিহিত করে থাকেন। যশোর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক এমদাদ হোসেন সেখ জানান, যশোর জেলায় ১২ হাজার ৬০ হেক্টর জমিতে সরিষার আবাদ হয়েছে। কৃষকের মাঝে ভাল মানের বীজ ও সার সরবরাহ করা হয়েছে। পাশাপাশি কৃষকদের কৃষি কর্মকর্তারা নিয়মিত পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে এবার সরিষার ভাল ফলন হবে বলে আশা করছি।
×