ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

টানা সাত বছর দেশসেরা

প্রকাশিত: ০৯:৩৬, ৭ ডিসেম্বর ২০১৯

 টানা সাত বছর দেশসেরা

প্রসূতি বা গর্ভবতী মায়ের সেবায় বিশেষ অবদান রাখায় এবারও ঢাকা বিভাগের সব সরকারী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে মধ্যে ভৈরব উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সেরা হয়েছে। ২০১২ সাল থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত সাত বছর টানা অনন্য এই সম্মান ও স্বীকৃতি লাভ করেছেন এ হাসপাতালটি। হাসপাতালটিকে পুরস্কার দিয়েছেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়। খুব খুশি হয়ে আগের চেয়েও ভালভাবে কাজ করছেন চিকিৎসক, নার্স, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা। এই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. বুলবুল আহমেদ বললেন, ‘গর্ভবতী মা এবং সন্তানের জীবন বাঁচাতে সেরার পুরস্কার আমাদের উৎসাহিত করছে। আরও ভালভাবে সাধারণ মানুষের সেবা দেওয়ার মহান দায়িত্ব বাড়িয়েছে। অসাধারণ অর্জন ধরে রাখব। নতুন, আধুনিক স্বাস্থ্যসেবার উদ্যোগ নেব।’ খোঁজ নিয়ে জানাগেছে, ১৯৬৫ সালে ‘ভৈরব পল্লী স্বাস্থ্যকেন্দ্র’ নামে এ স্বাস্থ্য কেন্দ্রের জন্ম। ১২ বছর গ্রামের মানুষকে সেবা দেওয়ার পর ১৯৭৭ সালে ৩১ শয্যার হাসপাতাল রূপান্তর হয়। ১৯৯৪ সালে সরকার কাজের গুণে হাসপাতালটি ৫০ শয্যা করলেন।’ প্রতি বছর হাজার, হাজার রোগীর সেবা দেন। গ্রামের দরিদ্র নারী, প্রসূতি মহিলা ও শিশুরা সেবা নিতে আসেন হাসপাতালটিতে। ভৈরবসহ পার্শ্ববর্তী নরসিংদীর রায়পুরা, বেলাবো, কিশোরগঞ্জের কুলিয়ারচর, অষ্টগ্রাম, নিকলী এলাকার সাধারণ ও প্রসূতি মায়েরা আসেন এ হাসপাতালে। নিরাপদ সেবা পাওয়ায় দিন দিন রোগী বেড়ে চলেছে। সেবার মান ভাল হওয়ায় সরকারও হাসপাতালটির প্রতি বিশেষ নজর দেন। ফলে রোগীর সেবার মান ও চাহিদা বিবেচনায় হাসপাতালটির ১০০ শয্যায় উন্নতিকরণের কাজ চলছে। সারাদেশের প্রথম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি কিশোরগঞ্জে সেরা, ভৈরবেও। এক পৌরসভা ও সাত ইউনিয়ন। দুই উপ-স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও ১৩ কমিউনিটি ক্লিনিকে গর্ভবতী মায়েরা চিকিৎসাসেবা পান। প্রথমটি তাদের। বাকি উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্র দুটিতে আছেন একজন করে মেডিক্যাল অফিসার। প্রতিটি কমিউনিটি ক্লিনিকে আছেন একজন সিএইচপি (কমিউনিটি হেল্থ প্রভাইডার বা সামাজিক স্বাস্থ্যকর্মী)। সবাই মিলে উপজেলায় অন্যগুলোর মতো গ্রামের মায়েদের গর্ভকালের জরুরী সেবা দেন। গজারিয়া ইউনিয়নের আকবরনগর, শিমুলকান্দি ইউনিয়নের গোছামারা ও আগানগর ইউনিয়নের আগানগর কমিউনিটি ক্লিনিকে ভৈরব উপজেলা স্বাস্থ্যসেবা কমপ্লেক্সের মতো স্বাভাবিক সন্তান জন্মদানে ব্যবস্থা আছে। স্বাস্থ্য অধিদফতরের কমিউনিটি ক্লিনিক প্রকল্পের পরিচালক, পরে লাইন ডিরেক্টর ডা. মমতাজুল হক মুক্তা, সধ্য অবসরে গিয়েছেন। তিনি ভৈরব উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এ প্রথমে ছিলেন আরএমও, পরে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা। তিনি জানালেন, ‘২০০২ সালে সরকার দেশের নির্দিষ্ট করে কটি জেলার নির্ধারিত উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ‘জরুরী প্রসূতি সেবা কার্যক্রম’ প্রকল্প আকারে গ্রহণ করেন। কিশোরগঞ্জের নিকলী, মিঠামইন, তাড়াইল, করিমগঞ্জ ও ভৈরব উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ছিল। ২০০২ সালের অক্টোবরে হাসপাতালে এ্যানেস্থেশিয়া বা অনুভূতি বিলোপ করে জরুরী, জীবনদায়ী অপারেশন সেবা চালুর অতি গুরুত্বপূর্ণ চিকিৎসার সিদ্ধান্ত হলো। ২০১২ সালে পুরো ঢাকা বিভাগের সেরা হলেন। ইউএইচপিও পদে পদোন্নতি পাওয়া ডা. মমতাজুল হক মুক্তা প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে সবার হয়ে সেরার স্বীকৃতি গ্রহণ করলেন। ভৈরব উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সূত্রে জানা গেছে, গেল বছর মোট ৪ হাজার ৫৯৪ জন মায়ের জরুরী প্রসূতিসেবা দিয়েছেন। হাসপাতালে সন্তান প্রসব করেছেন ১ হাজার ৬৪৩ জন। স্বাভাবিক জন্ম নিয়েছে ৬৪৩ শিশু, সিজার হয়েছে ৭৭২টি। কোন মা মারা যাননি। তবে এক শিশু জন্মের পর মারা গিয়েছে। ভৈরব উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ৫০ শয্যার। ২০০২ সালে স্বাস্থ্য অধিদফতর ‘জরুরী প্রসূতি সেবা’ নামে একটি প্রকল্প চালু করে। হাসপাতালে প্রসূতি নারীদের ২৪ ঘণ্টা সেবা নিশ্চিত করাই প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য। প্রকল্পের অধীন সিজারিয়ান বিভাগ চালু করা হয়। এ জন্য প্রকল্পের অধীন হাসপাতাল থেকে একজন চিকিৎসককে গাইনী সার্জন ও একজনকে অবেদনবিদ বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। কিশোরগঞ্জ জেলা থেকে প্রকল্পের অধিভুক্ত করা হয় ভৈরব, করিমগঞ্জ, তাড়াইল ও নিকলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সকে। গাইনি সার্জন হরিপদ দেবনাথ বলেন, হাসপাতালে প্রসূতি নারীদের বিশ্বাস জন্মেছে, হাসপাতালে পৌঁছাতে পারলে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা মিলবেই। এই বিশ্বাসের জোরেই এত কিছু। বর্তমানে হাসপাতালটি থেকে জেলার কুলিয়ারচর ও অষ্টগ্রাম এবং নরসিংদীর বেলাব উপজেলার প্রসূতি নারীরা স্বাস্থ্যসেবা গ্রহণ করছেন। স্বাস্থ্যমন্ত্রীর হাত থেকে সেরার স্বীকৃতি সনদ গ্রহণ করছেন বুলবুল আহমেদ, তিনি বলেন, সীমাবদ্ধতার মধ্যেও জরুরী প্রসূতিসেবায় সাফল্যের জন্য টানা সাত বছর ধরে ঢাকা বিভাগের সেরা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বীকৃতি পেয়ে আসছে ভৈরব। ২০১৮ সালের কার্যক্রম বিবেচনায় স্বাস্থ্য অধিদফতর কিশোরগঞ্জের ভৈরব স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সকে এবারও এই স্বীকৃতি দিয়েছে। ভৈরবে প্রকল্পটি সচল থাকায় আশপাশের কয়েকটি উপজেলার গরিব ও অসহায় নারীদের প্রসূতি স্বাস্থ্যসেবা পেতে এখন আর কষ্ট হচ্ছে না। এতে করে সাধারণ মানুষের আস্থা ফিরেছে সরকারী স্বাস্থ্যসেবায়। -কাজী ইসফাক আহমেদ বাবু, ভৈরব থেকে
×